বিশ্বকাপ থেকে কী পেল বাংলাদেশ
আক্ষেপ- শব্দটাই সঙ্গী করে অ্যাডিলেড থেকে সোমবার সকালে উড়াল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকার পথে অস্ট্রেলিয়া ছেড়েছেন ক্রিকেটাররা। সব ঠিকঠাক থাকলে সোমবারই সাড়ে দশটায় বাংলাদেশ দল পা রাখবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে দেশে ফেরার দলে থাকছেন টিম ম্যানেজম্যান্টসহ ২১ জন। নুরুল হাসান সোহান আর মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরছেন না এখনই!
খালি চোখে দেখলে এবারের বিশ্বকাপটা নিশ্চিতভাবেই ভাল কেটেছে বাংলাদেশের। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলছে। সেই ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্বকাপ লড়াইয়ে পথচলা শুরু বাংলাদেশ দলের। তারপর মূল পর্বে জয় অধরা হয়েই ছিল। গত বিশ্বকাপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাভার করতে গিয়ে জয় দেখা হয়নি। মূল পর্বে প্রতিটিতেই হার। এবার অন্তত দুটো জয় ধরা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অথচ তার চেয়েও বেশি কিছুর পথ তৈরি হয়েছিল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার মঞ্চটা যখন তৈরি তখন হেলায় সুযোগ হারাল বাংলাদেশ। রোববার সমীকরণটা ছিল-পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই খুলে যাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দরজা। কিন্তু তেমন একটা ম্যাচে ফ্লপ ব্যাটসম্যানরা। বোলারদেরও কিছু করার ছিল না মাত্র ১২৭ রানের পুঁজি নিয়ে! এভাবে সেমিতে উঠার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে কবে-কখন আসবে কে জানে!
৫ ম্যাচে ২ জয়
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপ কাভার করতে যখন অস্ট্রেলিয়ায় যখন পা রাখি তখনই সঙ্গী হয়েছিল বৃষ্টি। ২৩ অক্টোবর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়েই কাক ভেজা হয়ে ফিরেছিলাম। ২৪ অক্টোবর তাসমানিয়ার হোবার্ট থেকেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। সেদিনও ম্যাচটা হবে কীনা ছিল তীব্র সন্দেহ! ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত!
তবে ম্যাচটা হলো- বৃষ্টি শেষে হেসে উঠল বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটাতে বাংলাদেশ জিতল ৯ রানে। সেই জয় এনে দিল রাজ্যের স্বস্তি। ২০০৭ সালের পর মূল পর্বে প্রথম জয়। তারপর সিডনির বড় মঞ্চে লড়াই। এটা অনেকেরই জানা- অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি কমিউনিটি সেখানেই। তাইতো সিডনির মাঠে ২৭ অক্টোবর নেমেছিল জনস্রোত। লাল-সবুজের সেই মিলন মেলায় সাকিব আল হাসানরা এভাবে ফ্লপ হবেন কে জানতো? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল হারল ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে।
তারপর ব্রিসবেন মিশন। ৩০ অক্টোবর গ্যাবায় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে যে ম্যাচটা জিততেই হতো! এই সুযোগটাই নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ফের তাসকিন আহমেদের আগুণ ঝরা বোলিং! বাংলাদেশ জিতল ৫ রানে। সেই তৃপ্তি নিয়েই বাংলাদেশ পা রাখে অ্যাডিলেড ওভালে। যেখানে অনেক সুখ স্মৃতি লাল-সবুজের। এই মাঠেই ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ।
এখানে লেখা হয়ে যেতে পারতো ভারত বধের কাব্যও। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে আর কতোক্ষণ লড়াই করা যায়? আম্পায়ারের অন্ধ চোখ আর ম্যাচ রেফারির এক চোখা সিদ্ধান্তে সর্বনাশ। ৫ রানে ম্যাচটা হারে বাংলাদেশ দল। অথচ এই ম্যাচেই ফেইক ফিল্ডিং করেছিলেন বিরাট কোহলি, যেটি থেকে ৫ রান পেতে পারতো টাইগাররা। আবার লিটন দাসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দল যখন জয়ের পথে তখনই নামে বৃষ্টি। বৃষ্টি থামতেই তড়িঘড়ি করে খেলা শুরু করেন ম্যাচ রেফারি। বৃষ্টি ভেজা মাঠ খেলার অনুপযুক্ত ছিল। তখন ৫৪ বলে ৮৫ রানের এক লক্ষ্য দাঁড়ায় টাইগারদের সামনে। সেটি অবশ্য আর করা হয়নি!
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাও ছিল ডু অর ডাই। মানে জিতলে সরাসরি সেমি-ফাইনালে। এখানে শুরুতে ব্যাটসম্যানরা ফ্লপ! সঙ্গে আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্ত। যাতে আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। মোমেন্টাম হারায় বাংলাদেশ। ছিটকে যায় ম্যাচ থেকেও। ১২৭ রান নিয়ে তো আর লড়াই হয় না! এবার ৫ উইকেটে হার। এই ছিল অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ৫ ম্যাচ।
এক নজরে ফল
# নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৯ রানের জয়।
# দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের হার
# জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ রানে জয়
# ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৫ রানের হার
# পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের হার
তাসকিন সবার সেরা
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপটা আলাদা করেই মনে থাকবে তাসকিন আহমেদের। আদর্শ উইকেট পেলে তিনি যে বিশ্বসেরাদের একজন সেটি ভাল করেই প্রমাণ করেছেন। এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ একই ছন্দ ধরে রেখেছেন এই পেসার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হোবার্টে তার হাত ধরেই জিতেছে বাংলাদেশ। শুরুতে দুই উইকেট নিয়ে মোমেন্টাম এনে দিয়েছেন। তার পথ ধরেই শেষ অব্দি হাসিমুখ টাইগারদের। ডাচদের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২৫ রানে ৪ উইকেট!
সেই ধারাবাহিকতাটা থাকল গোটা টুর্নামেন্টেই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনির পারফরম্যান্স নিয়ে অবশ্য আক্ষেপে পুড়তে পারেন তাসকিন। যেখানে ১ উইকেট শিকার করলেও দিয়েছেন ৪৬ রান। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্রিসবেনের গ্যাবায় ঠিকই পুষিয়ে দিয়েছেন তাসকিন। যেখানে ১৯ রানে ৩ উইকেট। ম্যাচের সেরা তিনিই। তারপর অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৫। যে ম্যাচটা নিয়ে এখনো উত্তাপ চারপাশ! ম্যাচ রেফারি আর আম্পায়ারের পক্ষপাতদুষ্ট ম্যাচটাতে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়েছে। হেরেছে মাত্র ৫ রানে।
শেষটাতেও উইকেট পাননি। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে তার বলে ক্যাচ ফেলেন নুরুল হাসান সোহান। তাসকিন শেষ অব্দি ৪ ওভারে দেন ২৬ রান। গোটা টুর্নামেন্টে নিয়েছেন ৮ উইকেট। এবারের বিশ্বকাপের আলোচিত ক্রিকেটারের একজন তিনি!
তবে কিছুতেই সাফল্যের ক্ষুধাটা মিটেনি তার। ক্যারিয়ার নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথাটাও শোনালেন ২৭ বছর বয়সী এই পেসার, ‘প্রতিটি সিরিজ, প্রত্যেক টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ থেকে এখনো শেখার চেষ্টা করছি কিভাবে আরও উন্নতি করা যায়। আমার স্বপ্ন, সবসময় আমি ওয়ার্ল্ড ক্লাস হতে চাই এবং ধারাবাহিক হতে চাই। প্রধান লক্ষ্য উন্নতি, এটা নিয়েই এগোতে থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
সঙ্গে সন্তুষ্টিও থাকছে মনে আর থাকছে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়, ‘নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ভালো হচ্ছে যাতে আরো ভালো করতে পারি সামনে এটাই লক্ষ্য। কারণ দেখুন আমার এখনো উন্নতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। আমি একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হতে চাই। সেটা ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং সবকিছুতেই।’
নাজমুল শান্তর ফেরা
তাকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায় শান্তর নামের আগে ট্রল করে নানা বিশেষণ! তাকে জাতীয় দলের চার সীমানায় দেখতে রাজি ছিলেন না টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা। অবশ্য কারণটাও ছিল সংগত। একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে করতে পারছিলেন না কিছুই। কিন্তু এই বিশ্বকাপে এসে সেই অচলায়তন ভাঙলেন শান্ত।
নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলেন এই ব্যাটসম্যান। নিজের ক্যারিয়ারে উইকেটে আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সেই ধাক্কা সামলে এখন টি-টোয়েন্টিতে একটা অবস্থান পেয়ে গেলেন। হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২৫ রান দিয়ে শুরু। এরপর অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অন্য সবারই মতো ব্যর্থ। যেখানে তুলেন ৯ রান। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটাতে খেলেন স্বপ্নের মতো ক্রিকেট। ৫৫ বলে উড়ন্ত ৭১!
২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ভারতের বিপক্ষে করেন ২৪ রান। তারপর অ্যাডিলেডে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে ফের হাফসেঞ্চুরি। এবার ৪৮ বলে ৫৪! বাংলাদেশ ব্যর্থ হলেও এই ম্যাচটাতে সফল ছিলেন শান্ত। সন্দেহ নেই মাথা উঁচু করেই দেশে ফিরবেন, এবার যদি তাকে নিয়ে ট্রল থামে।
অচেনা এক সাকিব
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপে খেলার আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যস্ত রেখেছিলেন নিজেকে। প্রস্তুতির জন্য সেটিও মন্দ ছিল না। ২০ ওভারের ক্রিকেট বলে কথা। কিন্তু সিপিএলের সেই মিশনটা ঠিকঠাক কাজে আসল না। সাকিব যে মানের ক্রিকেটার, তার সেই মানের ছিটেফঁটারও দেখা মিলল না! এ যেন অচেনা এক সাকিব। ব্যাট-বল দুটোতেই কোথায় তিনি?
হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটাই যদি ধরি-সেখানে ব্যাট হাতে মাত্র ৭। বল হাতে ১ উইকেট নিতে খরচ করলেন ৩২ রান। সেই হিসাবে সিডনিতে হারা ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কিছুটা হলেও সফল। বোলিংয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ৩৩ রানে ২ উইকেট। রান অবশ্য তুললেন মাত্র ১।
তারপরের ম্যাচগুলোতেও একই দৃশ্যপট! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৪ রান দিয়ে উইকেট নেই। ব্যাট হাতে ২৩, যা এই বিশ্বকাপে তার সেরা সংগ্রহ। এরপর ভারতের বিপক্ষে ৩৩ রানে ২ উইকেট। আর ১৩ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষেও পুড়লেন হতাশায়। যেখানে ৩৫ রানে ১ উইকেট। অবশ্য আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে কোন রান না তুলেই ধরেন সাজঘরের পথ! সব মিলিয়ে ফ্লপ সাকিব!
তাইতো প্রশ্ন উঠল, কোথায় থামবেন সাকিব। পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হতেই বলছিলেন, ‘আমার নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বললে, আমি আরও ভাল করতে পারতাম। যতক্ষণ আমি ফিট এবং পারফর্ম করছি, আমি খেলতে চাই।’
বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার
অ্যাডিলেড ওভালের বাইরে দাঁড়িয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া নিচ্ছিলাম। সবারই একটা কথা বাংলাদেশের বিপক্ষেই কেন বাজে সিদ্ধান্তগুলো যায়? একবার দুবার নয়-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বারবারই বঞ্চিত হয়েছে টাইগাররা। কে জানে সেই বঞ্চনার গল্পটা সমৃদ্ধ না হলে সেমি-ফাইনালেও প্রথমবারের মতো উঠে যেতে পারতো দল। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে যেন চোখ অন্ধ হয়ে ছিল আম্পায়ার আর ম্যাচ অফিসিয়ালদের।
বিরাট কোহলির মতো বড় ক্রিকেটারও করলেন ফেইক ফিল্ডিং। হাতে বল না জমিয়েই এমন ভাবে ফিল্ডিং করলেন যেন বল ছুঁড়ছেন। যা ক্রিকেটে বড় অন্যায়। এর শাস্তি ৫ রান জরিমানা। কোহলির কাণ্ডের পর সেটি আম্পায়ারকে জানিয়েছিলেন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু তাতে কান দেনি আম্পায়ার। এরপর যখন দারুণ দাপটে টাইগাররা। তখন নেমে আসল বৃষ্টি। আর বৃষ্টি শেষে মাঠ প্রস্তুতের আগেই অফিসিয়ালরা শুরু করে দিলেন খেলা। যেখানে ভারতের স্বার্থটাই দেখেছেন আম্পায়ার। এ নিয়ে খোদ অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমও সরব! কিন্তু চোখ অন্ধ আইসিসিরও!
একইভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে রোববার বেশ লড়ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভুল আম্পায়ারিংয়ে সাকিবের আউটের পর সর্বনাশ। শাদাব খানের বল ব্যাটে লাগলেও আম্পায়ার আউট দেন সাকিবকে। বিস্ময়কর হলো টিভি আম্পায়ার একই ভুল করেছেন! এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। কথা হচ্ছে এভাবে আর কতোদিন বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হবে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের মতো দলের দু-একটা বাজে সিদ্ধান্ত সামলে ম্যাচ জেতাটা কঠিনই হয়ে পড়ে!
আগেই বলেছিলাম দুটি ম্যাচ জিতবে
নিজের ভবিষ্যতদ্বাণীতে নিজেই খুশি সারওয়ার ইমরান। এই কোচ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বলেছিলেন বাংলাদেশ জিতবে দুটি। চলুন দেখে নেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে ঢাকা পোস্ট-কে কী বললেন সারওয়ার।
‘টুর্নামেন্টে পেসারদের পারফর্মম্যান্স মোটামুটি ভালোই ছিল। তবে ব্যাটিং পারফরম্যান্সটা সেরকম হয়নি আসলে। বিশেষ করে তাসকিন, মোস্তাফিজ এরা ভালো বল করছে। এছাড়া এবাদত মোটামুটি করেছে, অন্যদিকে হাসান মাহমুদ ইনজুরি থেকে ফিরেও ভাল করেছে বিশ্বকাপে। এই বিশ্বকাপে সে ভালোই করেছে। মোট কথা পেস বোলারদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি।’
‘দল নিয়ে আগেই এক গণমাধ্যমে বলেছিলাম, আমার মতে দুইটা জিতবে। এবং সেই দুইটা ম্যাচই জিতেছে। তবে আমি চেয়েছিলাম এক শক্ত প্রতিপক্ষকে হারাবে বাংলাদেশ দল, সেট হয়নি যদিও। সেটা পাকিস্তান ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা হতে পারতো। এখান থেকে চিন্তা করলে আমি একটু হতাশ। আজকে পাকিস্তানের সাথে জেতার মত অবস্থা ছিল। এর আগে ভারতের সাথেও কাছে যেয়ে হারতে হয়েছে। তবে সব বিবেচনায় খারাপ না, ব্যাটিংয়ে অরো উন্নতি করতে হবে। শান্ত উন্নতি করেছে, তবে স্ট্রাইকরেট বাড়াতে হবে। তাহলে সে পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি ওপেনার হবে।’
বড় দলকে হারাতে চাই আমরা
বড় দল হয়ে উঠতে হলে হারাতে হবে বড় দলকে। সেটাই পারছে না বাংলাদেশ। তীরে এসে ডুবছে তরী। ব্যাপারটায় হতাশ সবাই। অনেকেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এটাই সেরা বিশ্বকাপ বাংলাদেশের। দুটো জয় তো এসেছে। তবে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেট, কোচ আফতাব আহমেদ এ নিয়ে একমত নন। চলুন ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে তিনি কী বলেছেন শুনে নেই-
‘আমার কাছে মনে হয় পেসাররা খুবই ভালো করেছে। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ খুবই ভালো করেছে। মোস্তাফিজুর রহমানও দারুণভাবে ফিরে এসেছে। পেস বিভাগটাই ভালো করেছে। বোলিং বিভাগটাই খুবই ভালো ছিল। তবে ব্যাটিংটা আরো উন্নতির প্রয়োজন ছিল। মিডল অর্ডারে আরো ভালো করার দরকার ছিল, যেটা হয়নি। এ কারণে কিন্তু কয়েকটা ম্যাচ হাত থেকে ফসকে গেছে। মিডল অর্ডার ভালো করলে ভারতের সাথে আমরা জিততে পারতাম। পাকিস্তানের সঙ্গেও আরো ভালো সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারতাম।’
‘প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার চেয়ে বড় কথা আমরা চাই এখন বড় দলকে হারাতে। ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকা এরকম একটা বড় দলকে হারানোর আশা করেছিলাম। যদিও বা আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপে যায়নি। যেহেতু আমাদের অনেক বছর হয়ে গেছে এই ফরম্যাটে খেলার। আমরা এখন ছোট দল না। আমরা এখন বড় দলের সঙ্গে জেতার আশা করছি।’
সরাসরি পরের বিশ্বকাপে
পারফরম্যান্সের বিচারে খুব বেশি কি অর্জন বাংলাদেশের? গ্রুপের ছয় দলের মধ্যে পঞ্চম হয়ে শেষ করল বাংলাদেশ। এমন পারফরম্যান্সের পর শঙ্কা ছিল ২০২৪ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে তো টাইগাররা?
শঙ্কা কেটে জানা গেল সরাসরিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র আয়োজক দেশ হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে। টি-টোয়েন্টিন র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। আফগানিস্তানের দশম স্থান। র্যাংকিং অনুযায়ী সরাসরি যাচ্ছে এই দুই দল। সুপার টুয়েলভের বাকি দলগুলো হলো— ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা।
সেরা বিশ্বকাপ
পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। জিতলেই দল পা রাখতো সেমিফাইনালে। সেটি হয়নি। তবে এবারই কিন্তু বাংলাদেশ দেখাল বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা, দুটো জয়। সেই ২০০৭ সালে পথচলা শুরু তারপর প্রথম আসরেই একটা জয়। এরপর মূল পর্বে সাফল্য ছিল সোনার হরিণ। কিন্তু সেই বৃত্ত থেকে এবার বেরিয়ে এসেছেন টাইগাররা।
প্রথমে নেদারল্যান্ডস, এরপর দল জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একটুর জন্য ভারতের বিপক্ষে জয়টা আসেনি। সাকিব সব মিলিয়ে দলের সাফল্যে খুশি। তিনি নিজেও মনে করিয়ে দিলেন এটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য, ‘নতুন ছেলেরা দলে এসেছে। এছাড়াও আরও অনেক পরিবর্তন এসেছে। যার ফলে আমাদের যা সামর্থ্য ছিল, তাতে সর্বোচ্চ এটাই অর্জন করতে পারতাম আমরা।’
ক্যাপ্টেন অবশ্য আগেই বলে দিয়েছেন বাস্তব কথাটা। বিশ্বকাপ জিততে আসেনি বাংলাদেশ। তবে যেতে পারতো সেমি-ফাইনালে। দলের তরুণ ক্রিকেটার আফিফ হোসেন যেমনটা বলছিলেন, ‘অবশ্যই ভালো করার সুযোগ ছিল। যদি কিছু ম্যাচ জিততে পারতাম, সেমি-ফাইনাল খেলতে পারতাম, অবশ্যই ভালো লাগতো। চেষ্টা থাকবে সামনে যেন দলগতভাবে আমরা ভালো করতে পারি।’
এটাই শেষ কথা। অতীত নিয়ে এখন সন্তুষ্ট কিংবা রুষ্ট কোনটাই হওয়ার সুযোগ নেই। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুধু এগিয়ে যেতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় এটা অন্তত বাংলাদেশ দল বুঝেছে ২০ ওভারে ক্রিকেটে তারা লড়তে জানে-জিততেও জানে!
এটি/এনইআর