শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম : আছে সাইনবোর্ড, নেই অগ্রগতি
সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকলেও ভেতরে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের। ছবি : সুমন নিলয়/ ঢাকা পোস্ট
বাংলাদেশ ক্রিকেট মিরপুর কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে অনেক দিন ধরেই। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামই হয়ে পড়েছে সব খেলা আয়োজনের একমাত্র অবলম্বন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) রাজধানীতে আরও একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। তারই অংশ হিসেবে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জমি বরাদ্দ পায় বিসিবি। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয় এর কার্যক্রম। তবে নানা কারণে এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই স্টেডিয়ামটির।
পূর্বাচলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন শহর প্রকল্পে নানা স্থাপনা দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারিভাবে গড়ে তোলা দেশের সবচেয়ে বড় এ আবাসন প্রকল্প তৈরির নকশাও অনুমোদন দিচ্ছে রাজউক। প্রশাসনিক, শিক্ষা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল অবকাঠামো দৃশ্যমান হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করার কাজে অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্বাচল প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরে প্রায় ৩৭.৫০ একর জমির পুরোটা ঘিরে রাখা হয়েছে টিনের বেড়া দিয়ে। যেখানে একটু পর পরই লেখা আছে ‘শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম’- এর নাম। নারায়ণগঞ্জের ভোলানাথপুর মৌজার ওই জমিতে টিনের বেড়া দেওয়া হলেও একপাশে গাছপালা আর লতাপাতায় পূর্ণ। একপাশে বিসিবির প্রকল্প অফিসের জন্য একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে।
মূল স্টেডিয়ামের কাজ শুরু না হলেও দুই পাশে দুটি উইকেট বানানো হয়েছে। একটি উইকেট ঘিরে কোনরকম একটি মাঠ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের ম্যাচ আয়োজনের ভাবনা আছে। তবে সেটিও পূর্ণতা পায়নি। সবে ষাট শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্টেডিয়ামটি নির্মাণ নিয়ে জটিলতা শুরু থেকেই। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্টেডিয়ামই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। মিরপুর স্টেডিয়ামটিও বিসিবির নয়। এজন্য ক্রিকেট বোর্ডের চাওয়া, পূর্বাচল স্টেডিয়ামটি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে করতে। অনেক দেনদরবার শেষে স্টেডিয়ামটির জমি বুঝে পায় বিসিবি। প্রতীকী মূল্য ১০ লাখ টাকায় এই বিশাল জমি পেয়েছে তারা।
স্টেডিয়াম তৈরির জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে। ২০১৯ সালে গঠন করা সেই কমিটিতে বোর্ডের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আর বুয়েট থেকে প্রতিনিধি নেওয়া হয়। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য পূর্বাচল স্টেডিয়ামের নকশা কেমন হবে, সেটি প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। যখন আইসিসির সে সময়ের সভাপতি শশাঙ্ক মনোহর বাংলাদেশ সফরে আসেন।
রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে ‘নৌকা’র আদলে স্টেডিয়ামের একটি নকশা উপস্থাপন করে বিসিবি। তবে সেই নকশাটিও চূড়ান্ত নয়, এতে সংযোজন এবং বিয়োজন করা হবে বলে জানায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সে সময় জানা যায়, দ্রুত গতিতে স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে সেটি ৩ বছরের মধ্যে শেষ হবে। এরপর ২০২৩ সালকে লক্ষ্য বানানো হয়।
বিসিবি আগেই জানিয়েছে, স্টেডিয়ামটি হবে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন। যেখানে মূল স্টেডিয়ামের পাশাপাশি দুটি পরিপূর্ণ মাঠ, একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমি, ইনডোর, সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম থাকবে। ৫০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি স্টেডিয়ামটির সঙ্গে একটি পাঁচতারকা হোটেল করার ভাবনা আছে।
সময় গড়ালেও ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি বিসিবি। করোনার কারণে শেষ হয়েছে এক বছর। সে সময় বন্ধ ছিল পুরো কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি হয়নি। মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামটির জন্য নির্ধারিত জমিতে এখনো বসবাস করছে ৩১টি পরিবার। তাদেরকে জায়গা ছাড়ার জন্য অবশ্য মৌখিক নোটিশ দিয়েছে বিসিবি। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
স্টেডিয়ামটির বর্তমান কাজের অগ্রগতি নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না কেউই। নিরাপত্তা কর্মী থেকে শুরু করে মাঠের দেখভালের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন বড় কর্তাদের। বিসিবি কর্তারাও এখন এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইছেন না। ঠিকাদার নিয়োগের ব্যাপারেও নিশ্চুপ সবাই।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য স্থপতি নিয়োগ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছিল বিসিবি। প্রায় দুই ডজনের বেশি দরপত্র জমা পড়ে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক আর্কিটেক্ট ফার্মও বিট করে। যারা বিখ্যাত স্টেডিয়াম বানিয়েছে সেই ধরনের মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোও আগ্রহ প্রকাশ করে।
তবে কার ওপর ভরসা রাখছে বিসিবি, পাকা কথা কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়েও জানাতে রাজি নন কেউ। ঢাকা পোস্ট এনিয়ে একাধিক দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেননি।
স্টেডিয়ামটির দৃশ্যমান কাজ শুরু না হলেও সেখানকার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে করতে না দেওয়ার শর্তে বললেন, কাজ শুরু ব্যাপারে বেশ তোড়জোড় চলছে। গত শনিবারও বিসিবির প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে বোর্ডের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
টিআইএস/এমএইচ/এটি