ঢাকা টেস্টের ৪র্থ দিন সকালে উইকেট না পেয়ে সাকিবের হতাশা, ম্যাচ শেষে হতাশ গোটা বাংলাদেশই/ সংগৃহীত

আবারও সেই পুরোনো গল্প, জয়ের খুব কাছে এসে হার। শ্রেয়াস আইয়ার আর রবীচন্দ্রন অশ্বিনের দৃঢ়তায় আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ হলো সাকিবদের। ঢাকা টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও ৩ উইকেটে হারল বাংলাদেশ।

২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচটি ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিল বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বীরত্বপূর্ণ ইনিংসের পরও সে ম্যাচটা হেরেছিল টাইগাররা। এরপর গত ২১ বছরে ভারতীয়দের বিপক্ষে ১২টি টেস্ট খেলে একবারও জয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি টাইগাররা। এবারই সুবর্ণ সুযোগ ছিল গেরো ভাঙার। কিন্তু সে সুযোগ দিল না অশ্বিন-আইয়ারের ৭১ রানের জুটি। বাংলাদেশের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নিল লোকেশ রাহুলের দল।

মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার চতুর্থ দিন ১০০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ভারত, হাতে ছিল তাদের ৬ উইকেট। কিন্তু তৃতীয় দিন বিকেলের মতো এদিনও শুরুতে ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবের আঘাত দিয়ে শুরু। জয়দেব উনাদকাটকে সাজঘরে ফিরিয়ে টাইগারদের পঞ্চম উইকেট এনে দেন অধিনায়ক নিজেই।

এরপর কিছুক্ষণ চলল মিরাজ ঝড়। নিজের পরপর দুই ওভারে অক্ষর প্যাটেল ও ঋষভ পান্তকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়ে আসেন টাইগার অলরাউন্ডার।

তখনো ভারতের দরকার ছিল ৭১ রান। জয়টা কেবল সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। আর তিনটি উইকেট নিলেই তো ধরা দেবে কাঙ্ক্ষিত জয়।

কিন্তু ইস্পাত-কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন শ্রেয়াশ আইয়ার আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দুজনে ৮ম উইকেটে গড়লেন অবিশ্বাস্য এক জুটি। ৭১ রানের ওই জুটিতেই শেষ হয়ে গেল ম্যাচ। ৩ উকেটে জিতে গেল ভারত। অশ্বিন করলেন অপরাজিত ৪২ রান।

যদিও এই অশ্বিনই এক রানের মাথায় দিয়েছিলেন ক্যাচ। শর্ট লেগে সেই সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারলেন না মুমিনুল। গতকাল এর চেয়ে কঠিন ক্যাচ ধরে কোহলিকে ফেরানো মুমিনুল আজ কেন ব্যর্থ হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর মনে হয় একটাই- বাংলাদেশ হারবে বলেই ক্যাচটা মিস করলেন তিনি!

মুমিনুলের ক্যাচ মিসের পর আরও ৬০ রানের বেশি করতে হয়েছে ভারতকে। শেষ তিনটি উইকেট তুলে নেওয়ার ভালো সুযোগই ছিল তখনো টাইগার বোলারদের হাতে। কিন্তু এই জায়গায় সাকিবরা ব্যর্থই হয়েছেন বলতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ৪র্থ ইনিংসে ৭৪ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়া দল পরে আরও ৭১ রান করে পেরেছে- এমন নজির খুব বেশি নেই। অশ্বিন-আয়ার সেটা করে সফল হয়েছেন আর তাদের আউট করতে না পেরে আরেকবার ব্যার্থ হয়েছেন বাংলাদেশি বোলাররা।

চতুর্থ দিনের প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা টেস্ট জিতে নিয়েছে ভারত। তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ধরে রাখার পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিল সফরকারীরা।

এর আগে মুমিনুল হকের একক দৃঢ়তায় প্রথম ইনিংসে টাইগাররা সংগ্রহ করে ২২৭ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষভ পান্তের ব্যাটে ৩১৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। 

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা হয় হতাশাজনক। কিন্তু শেষদিকে লিটন দাসের প্রতিরোধে ২৩১ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা। লিড হয় ১৪৪ রানের। ৪র্থ ইনিংসে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৪৫ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২৭/১০
ভারত ১ম ইনিংস: ৩১৪/১০
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৩১/১০
ভারত ২য় ইনিংস: ১৪৫/৭ (অক্ষর ৩৪, উনাদকাট ১৩, ঋষভ ৯, শ্রেয়াস ২৯*, অশ্বিন ৪২*; সাকিব ১৪-০-৫০-২, তাইজুল ১১-৪-১৪-০, মিরাজ ১৯-৪-৬৩-৫, তাসকিন ১-০-৪-০, খালেদ ২-০-১২-০)
ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী। 
ম্যাচসেরা: রবিচন্দ্রন অশ্বিন
সিরিজ:  ভারত ২-০ তে জয়ী।
সিরিজসেরা: চেতেশ্বর পূজারা

এনইআর/এটি/জেএস