নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই বিশ্বকাপে খেলছেন রাজশাহীর মেয়ে আফিয়া হুমাইরা আনাম প্রত্যাশা। ডানহাতি অলরাউন্ডার প্রত্যাশা দলের হয়ে অবদান রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। ২২ বলে করেছেন ২৪ রান। প্রত্যাশার খেলা দেখে উচ্ছ্বাসিত পরিবার, এলাকাবাসী এবং তার কোচেরা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এলাকার মোড়ে টাঙ্গানো হয়েছে প্রত্যাশার ছবি। 

রাজশাহী নগরীর উপশহরের বাসিন্দা আফিয়া হুমাইরা আনাম প্রত্যাশার খেলা গতকাল অনেকেই দেখেছেন। খেলা দেখে ঢাকাপোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এই ক্রিকেটারের বাবা আক্তারুল আনাম ববিন, মা শাবানা খাতুন, রাজশাহী যুব ক্রিকেট স্কুলের পরিচালক জামিলুর রহমান সাদ ও কোচ আরিফিন চৌধুরী তুষার। তাদের চাওয়া প্রত্যাশা একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। তবে প্রত্যাশার বাবা মুখে ঝড়েছে হতাশা, বাংলাদেশের এতো বড় একটি খেলা দেখায়নি দেশের কোনো টিভি চ্যানেলে। ফলে অ্যাপ ডাউনলোড করে মেয়ের খেলা দেখতে হয়েছে তাকে। তবুও অনেক খুশি তিনি।

প্রত্যাশার বাবা আক্তারুল আনাম ববিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি একটা সময় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ইন্টার স্কুল থেকে শুরু করে রাজশাহী ফার্স্ট ডিভিশন পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ার কারণে ক্রিকেট খেলাটা চালিয়ে নিতে পারিনি। কিন্তু আমার একটা স্বপ্ন ছিল কোনভাবে ক্রিকেট জগতে আমার কাউকে নিয়ে আসা। নিজে তো পারলাম না; একটা সময় ভাবতাম আমার ছেলে কিংবা মেয়েকে ক্রিকেট জগতে নিয়ে আসব। এরপরে প্রত্যাশার জন্ম  হলো। সে আস্তে আস্তে বড় হলো। আমরা যখন মাঠে খেলতাম, তখন প্রত্যাশাকে নিয়ে যেতাম।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেই চেষ্টা করতাম প্রত্যাশাকে ক্রিকেটে আগ্রহী করতে। পরে আমি রাজশাহী ক্লেমনের তুষার ভাই ও সাদ ভাই এর সহযোগিতায় তাকে আস্তে আস্তে ক্রিকেট জগতে নিয়ে আসি। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন, কোচ আরিফিন চৌধুরী তুষার। পাড়া-প্রতিবেশীসহ অনেকেই সহযোগিতা করেছে। ২০১৪ সালে ঢাকায় ফার্স্ট ডিভিশন খেলার মধ্যদিয়ে প্রত্যাশা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে। ২০২০ প্রিমিয়ারে চান্স পেল। তার পরে থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা শুরু করে। সেখানে ভালো করার পরে অনূর্ধ্ব- ১৯ এ চান্স পেল।’

ববিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মেয়েরা সমাজ ও দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। তার এটাই বড় প্রমাণ। আমার মেয়ে উপশহর ঈদগা মাঠে খেলেছে। এখানে একটা ক্যাম্প করতে চাই। যাতে করে খেলাধুলায় নারীরা আরও এগিয়ে আসে।  প্রত্যাশার মা শাবানা খাতুন ক্রিকেট বুঝতো না। সে কেমন কেমন করতো। তাকে আমি বুঝিয়েছে। মেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলে। সে ভালো ক্রিকেটার হলে আমাদের আর পিছনে তাকাতে হবে না। তার মা তাকে অনেক দিন প্রশিক্ষণে নিয়ে গেছেন। সে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে প্রশিক্ষণে গেছে। আমি তাকে ঠিকমতো টাকা দিতে পারিনি। কিছুদিন আগে প্রত্যাশাকে ৪০ হাজার টাকায় একটি পুরানো মোটরসাইকেল কিনে দেই। ওই মোটরসাইকেলে সে প্রশিক্ষণে যাওয়া আশা করতো।’

রাজশাহী যুব ক্রিকেট স্কুলের পরিচালক জামিলুর রহমান সাদ প্রত্যাশার ব্যাপারে বলেন, ‘প্রত্যাশা যেকোনো ম্যাচের সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে পারে। মেয়ে মানুষ হলেও হাতে পাওয়ার আছে। আমাদের দেশে এই রকম হাইটের ক্রিকেটার পাওয়া মুশকিল। তার খেলাও ভালো। যথেষ্ট পরিশ্রমী মেয়ে। যুব ক্রিকেট স্কুলে প্রত্যাশার মতো সাতজন নারী ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন ঢাকা খেলছে।’