ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি সাবেক ক্রিকেটার কার্টলি অ্যামব্রোস চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএলে) এসেছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। সোমবার চট্টগ্রামের সাগরিকায় তাকে দেখা গেল টাইগার দুই পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং তাসকিন আহমেদের সঙ্গে খোশ গল্পতে। 

এই তিন পেসারের আড্ডাতে ছিল ক্রিকেটের একাল সেকাল নিয়ে প্রশ্ন উত্তর। কথা বলেছেন বোলারদের বর্তমান সময়ে বল করা কঠিন সেই প্রসঙ্গে। তাদের সেই আলাপচারিতা তুলে ধরা হলো এখানে-

কার্টলি অ্যামব্রোস: ক্রিকেট অনেক পাল্টে গেছে। আমি যখন খেলেছি তখন ভিন্নরকম ছিল। অবশ্য তখন টি-টোয়েন্টি ছিল না। শুধুমাত্র ওয়ানডে ও টেস্ট ছিল। এখন খেলার ধরনও বদলে গেছে। বলতে দ্বিধা নেই, খেলাটা এখন ব্যাটসম্যানদের হয়ে গেছে। তারা প্রভাবশালী, বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন গেছে। উইকেটও পরিবর্তন হয়েছে বেশ। সারাবিশ্বেই বছর বছর উইকেট কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি সেখানেই ভালো মানের উইকেট পাবেন, যেখানে বল বাউন্স হবে এবং সেই বাউন্সের বিপরীতে ব্যাটসম্যান স্ট্রোকস খেলবে, লো এবং স্লো উইকেটে যা কঠিন। সঙ্গে সেখানে বোলারদের জন্য কিছু থাকবে (ইশারায় সুইংয়ের কথা বুঝিয়েছেন)। আসলে ব্যাট-বলের পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখনকার দিনে খেলাটা একতরফা হয়ে যাচ্ছে। 

মাশরাফি বিন মুর্তজা: এমনকি টেস্ট ম্যাচে প্রচুর রান হয়। ৪০০-৫০০ রান হচ্ছে... 

কার্টলি অ্যামব্রোস: আমি জানি। এটা সত্যিই পাগলাটে। 

মাশরাফি বিন মুর্তজা: আমি কিন্তু তোমাকে ১৯৯৯ সালে ঢাকায় বোলিং করতে দেখেছি। তুমি কি এখন ধারাভাষ্যটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছ?

কার্টলি অ্যামব্রোস: কয়েক বছর আগে আমি ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করি।

মাশরাফি বিন মুর্তজা: এখন?

কার্টলি অ্যামব্রোস: খুব বেশি না। 

মাশরাফি বিন মুর্তজা: জানো কেন তোমাকে আমি এটা জিজ্ঞেস করছি? 

কার্টলি অ্যামব্রোস: কেন?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: কারণ তোমার সঙ্গে শিগগিরই সেখানে দেখা হবে। নিজের ইংরেজি পোক্ত করার চেষ্টায় আছি। 

এই ছেলেটা (তাসকিনকে দেখিয়ে) নিজেকে অনেক পরিবর্তন করেছে। শেষ দুই বছর সবখানে পারফর্ম করছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ উইকেট পেয়েছিল। ৪ উইকেটও আছে ওর। নিউ জিল‌্যান্ডে অসাধারণ বোলিং করেছিল। সুযোগ হলেও ওর সঙ্গে একটু কথা বলে নিও (তাসকিনকে মাশরাফি)।

কার্টলি অ্যামব্রোস: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্রিকেটারদের বিচার করি সারাবিশ্বে তারা কোথায় কোথায় পারফর্ম করেছে। কেউ কেউ ঘরের মাঠে খুব শক্তিশালী কিন্তু দেশের বাইরে ভুগতে থাকে। সেরা ক্রিকেটার হতে হলে তোমাকে অবশ‌্যই যেকোনো কন্ডিশনে টিকে থাকতে হবে এবং সারাবিশ্বে ঘুরে ফিরে পারফর্ম করতে হবে। এবং তুমি সঠিক পথেই আছো। 

তাসকিন আহমেদ: হ্যাঁ। আমি এখনও সেই প্রক্রিয়ায় আছি। তার থেকে কাটার করা শিখছি (মাশরাফিকে দেখিয়ে)। 

কার্টলি অ্যামব্রোস: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

তাসকিন আহমেদ: এখনও পুরোপুরি শেখা হয়নি। তবে শিখছি। 

মাশরাফি বিন মুর্তজা: ও এখন ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করছে। ধারাবাহিকভাবে ১৪৩, ১৪৪ এর মতো বোলিং করে যাচ্ছে। 

কার্টলি অ্যামব্রোস: সেটা কিন্তু ধীর গতির উইকেটে...

মাশরাফি বিন মুর্তজা: হ্যাঁ। 

কার্টলি অ্যামব্রোস: তারমানে হচ্ছে ও যদি ভালোমানের উইকেট পায় তাহলে কিন্তু আরো দ্রুত বোলিং করতে পারবে। সঙ্গে বৈচিত্র্যও থাকলে আরো ভালো। 

মাশরাফি বিন মুর্তজা:  আমি ওকে নিশ্চিত করতে বলেছি যে, ও যেন অবশ্যই ফিটনেস ঠিক রাখে। ফিটনেস বলতে ওর স্ট্রেন্থ। যেমন ওয়ার্কআউট। কারণ এখনকার ক্রিকেট ব্যস্ত সময়। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের এসব ম্যাচ রয়েছে।

কার্টলি অ্যামব্রোস: হ্যাঁ প্রচুর খেলা। যেটা তোমাকে করতে হবে, আমি খেয়াল করেছি অনেক খেলোয়াড় জিমে প্রচুর সময় দেয়। আমার তাতে একটা অভিযোগ আছে। জিমে যাও। নিজেকে শক্তিশালী করো। কিন্তু বডি বিল্ডার হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমাকে সাবলীল এবং নমনীয় থাকতে হবে। ওয়েট ট্রেনিংয়ে আপনি কেবল নিজেকে শক্তিশালী করতে পারেন। মনে রাখতে হবে জিমে কেবল প্রচুর দৌড়াতে হবে। মাঠে অনেক বোলিং করতে হবে। জিমে গিয়ে পেশিশক্তি বাড়িয়ে তুমি ফিট হবে কিন্তু ম্যাচে ফিট হওয়ার জন্য তোমাকে প্রচুর দৌড়াতে হবে, প্রচুর বোলিং করতে হবে। তাতে তুমি ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে। যেটা দিয়ে তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরস্কৃত হবে। আমি বলছি না যে  তোমাকে জিমে যেতে হবে না। কিন্ত ওখানে গিয়ে তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে। সব সময় মনে রাখবে, প্রচুর দৌড়াতে হবে ও বোলিং করতে হবে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা: তুমি জানো আমি ওকে কি উপদেশ দিয়েছি? ‘মাসল গিভস ইউ লেডি, লেগস গিভ ইউ মানি। চয়েজ ইস ইয়র্স।’

কার্টলি অ্যামব্রোস: হ্যাঁ সত্যিই সিদ্ধান্ত তোমার। 

তাসকিন আহমেদ: হ্যাঁ আগে আমি বিশালদেহী ছিলাম। কিন্তু পা শক্তিশালী ছিল না। এখন আমার পা শক্তিশালী হয়েছে, এদিকগুলো।

মাশরাফি বিন মুর্তজা: সঙ্গে এটাও বলেছি, পেশি শক্তি দিয়ে শুধু বোলিং করলেই হবে না।

কার্টলি অ্যামব্রোস: সেটাই।  প্রচুর দৌড়াতে হবে। প্রচুর বোলিং করতে হবে। আমি অনেক দেখেছি, জিমে যাচ্ছে, বডি বানাচ্ছে কিন্তু ৪ ওভার বোলিং করার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেসারদের জন্য পা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাঁধ কখনো ক্লান্ত হবে না। তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও তাহলে এক সপ্তাহও বোলিং করতে পারবে না। সেজন্য দুই পায়ের শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমার পা যতটা শক্তিশালী হবে তত তুমি শক্তিশালী হবে।