মাধ্যমিকে পাস না করতে পারলে আর ক্রিকেট খেলা যাবে না—পরিবার থেকে এমন কড়া বার্তা ছিল। শর্ত অনুযায়ী, এসএসসি পাস করার পর অবশেষে অনুশীলনের সুযোগ মিলল। শুরুর দিকে টেপ-টেনিস বল দিয়ে অনুশীলন চলতো। পরে রাজশাহীর একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন।

পরবর্তী সময়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ মেলে। সেখানে আলো ছড়িয়ে এখন দেশের সবচেয়ে জমকালো আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) অভিষেক করেছেন। অভিষেক ম্যাচেই ঘণ্টায় ১৪৭-১৪৮ কিলোমিটার গতিতে বল করে নজর কেড়েছেন এই পেসার।

বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের পেসার নাহিদ রানার কথা। ছোটবেলা থেকেই পেসার হওয়ার প্রবল আগ্রহ ছিল তার। সেই আগ্রহ থেকেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি। এরপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন পেসার হিসেবেই। এরপর পরিবারের দেওয়া সেই শর্ত পূরণ করে ২০ বছর বয়সী নাহিদ খেলছেন চলমান বিপিএলে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে ম্যাচের খুলনা টাইগার্সের হয়ে অভিষেক হয় রানার। অভিষেক ম্যাচেই বল হাতে গতির ঝড় তুলেছেন এই পেসার। মিরপুরের তুলনামূলক স্লো উইকেটে ঘণ্টায় ১৪৭-১৪৮ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়। ম্যাচে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নিয়ে অভিষেক রাঙিয়েছেন তরুণ এই পেসার। 

সর্বশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৬ ম্যাচে ৩২ উইকেট নিয়ে সবার নজর কাড়েন নাহিদ। এরপরই সুযোগ মেলে বিপিএলে।

বিপিএলের মতো আসরে স্বপ্নময় অভিষেকের পর নাহিদের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের আলাপ হয়। আলাপকালে ক্যারিয়ারের উত্থান ও ক্রিকেটের শুরু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: 

প্রশ্ন: ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে?

নাহিদ রানা: আসলে আমাদের পরিবার মধ্যবিত্ত। ছোটবেলা থেকেই সবার মতোই পড়ালেখা করতে হতো। তবে সবসময়ে খেলাধুলা নিয়ে থাকতাম। এরপর পরিবার দেখল যে আমি সবসময় খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। তখন পরিবার থেকে বলা হলো—এসএসসি পাস করতে পারলে অনুশীলনের অনুমতি দেবে। পরিবারের কথামতো এসএসসি পাস করলাম। তারপর অনুশীলনের সুযোগ এলো।

প্রশ্ন: পরিবার থেকে কেমন সাপোর্ট পান?

নাহিদ রানা: বিপিএলে খেলার সুযোগ পাওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। পরিবার থেকে সাপোর্ট বলতে শুরুর দিকে তো কেউই জানত না কেমন খেলি বা না খেলি। তবে আব্বু, আম্মু ও ভাইয়া সবাই সাপোর্ট করেছে।

প্রশ্ন: বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই বল হাতে ১৪৭-১৪৮ গতিতে বল করে ঝড় তুলেছেন। বিপিএলের মতো আসরে অভিষেকেই সবার নজর কাড়ার বিষয়টি কেমন এনজয় করছেন?

নাহিদ রানা: আমি আসলে এতো কিছু ভেবে বল করিনি। নিজের ন্যাচারালটাই করার চেষ্টা করেছি। তারপর দেখলাম গতি বেশ ভালোই ছিল।

প্রশ্ন: খুলনার কোচিং প্যানেলের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে?

নাহিদ রানা: সবার সঙ্গে ভালো কাজ হচ্ছে। নেটে অনুশীলন করেছি, স্পট বোলিং করেছি। প্রথম ম্যাচে যখন মাঠে নেমেছিলাম, তার আগে সুজন স্যার বলেছিলেন—মন খুলে সবকিছু জানাতে, প্রেশার না নিতে। তিনি অনেক অনেক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের অভিজ্ঞ পেসার ওয়াহাব রিয়াজের কাছ থেকে আলাদা কোনো সাহায্য পাচ্ছেন কি না?

নাহিদ রানা: হ্যাঁ অবশ্যই, রিয়াজ ভাইয়ের কাছে আমার যখন যেটা প্রয়োজন সে নিয়ে আলোচনা করি। উনি আমাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন। 

প্রশ্ন: ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

নাহিদ রানা: আসলে অনেক ভালো লাগছে। উনি আমার সঙ্গে প্রতিটি বল নিয়েই কথা বলেন। উনি বলে দেন—এটা এভাবে এখানে করো। তুমি তোমার লেন্থ অনুযায়ী বোলিং করো। যখন যেভাবে বল করা উচিত তিনি আমাকে তা বলে দেন। তার কথামতো আমি সেটা করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী?

নাহিদ রানা: আসলে আপাতত তো বিপিএল খেলছি, সুতরাং এটা নিয়েই থাকতে চাচ্ছি, এটা নিয়েই ভাবছি। এখানে ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো করতে চাই।

এসএইচ/কেএ