৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এই দিনটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে আজকের এই দিনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হাত ধরে এসেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তিন বছর পর এসে সেই বিশ্বকাপ দলের ক্রিকেটাররা কে কোথায় রয়েছেন একবার চোখ বুলিয়ে দেখা যাক।

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া ১৫ ক্রিকেটারের মধ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে চার ক্রিকেটারের। জাতীয় দলের পাইপলাইনে আছেন আরো কয়েকজন। বাকিদের পারফর্মম্যান্সও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ভালো করছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে। এছাড়া বিসিবির হাইপারফর্মম্যান্স (এইচপি), বিসিবি ‘এ’ দলেও রয়েছেন সেই দলের সদস্যরা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবার আগে অভিষেক ঘটেছিল বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামের। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম মাঠে নামেন তিনি। এরপর তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়েছে এই বাঁহাতি পেসারের। শরীফুল ছাড়াও টেস্ট অভিষেক হয়েছে মাহমুদুল হাসান জয়ের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখাতে পারা বাকি দুজন শামীম হোসেন ও পারভেজ হোসেন ইমন।

২০২১ সালে শামীম অভিষেকের পর সুযোগ পেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। পারফর্মম্যান্স ভালো না করাই এখন রয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে। এছাড়া আরেক বাঁহাতি ব্যাটার পারভেজ ইমন গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ২ রান করেন এরপর তিনিও আর সুযোগ পাননি লাল-সবুজের জার্সিতে। 

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলীও অবশ্য ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে একবার। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তবে মাঠে নামা হয়নি এই ব্যাটারের। তবে আজ বিশেষ দিনে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে শেয়ার করলেন সেই বিশ্বজয়ের ভালোলাগা। বলেন, 'যখনই মনে পড়ে বা মনে করি তখনই অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। আমার মনে হয় এটা লাইফটাইম থাকবে আমাদের সঙ্গে এরকম একটা মুহূর্ত। ভালো লাগা কাজ করে সবসময় অনেক, ওটা বৈশ্বিক প্রথম ট্রফি তবে শেষ না। ইন শা আল্লাহ বাংলাদেশ আরো এমন ট্রফি জিতবে।'

এছাড়া ২০২০ বিশ্বকাপজয়ী দলের বোলার রকিবুল হাসান, পেসার তানজিম হাসানও খেলছেন এবারের বিপিএলে। ব্যাটার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল ছিলেন পরের যুব বিশ্বকাপ দলেও। সর্বশেষ জাতীয় লিগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে নাবিলের।

ব্যাটার তৌহিদ হৃদয় মাঝখানে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। তবে এই ব্যাটার চলতি বিপিএলে আলো ছড়িয়ে চলেছেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে। এখন পর্যন্ত আসরের সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। তিন বছর আগের সেই বিশ্বজয়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে হৃদয় ঢাকা পোস্টকে জানালেন, 'তিন বছর হয়েছে এটা শুনেই তো ভালো লাগল। এত বছর বলে নয় যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আমাদের মেমোরিতে থাকবে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই বিশ্বাস ছিল আমরা ম্যাচটা জিতব। দ্রুত উইকেট পড়ে গিয়েছিল, তবে এটা তো খেলার অংশ। দুই দিকেই ম্যাচ যাবে এটাই খেলার নিয়ম। এটা সবসময় সারাটা জীবন মনে থাকবে যতদিন বেঁচে থাকব। ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা মনে থাকবে। এখন পর্যন্ত যেহেতু এটা বড় কিছু সেহেতু মনে থাকবে। যদি কখনো জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারি বা আমাদের দেশ জয় লাভ করে সেটা আলাদা।'

সেই দলের বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদও আগাচ্ছেন ভালো মতই। গত ডিসেম্বরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। খেলছেন এবারের বিপিএলেও। শাহাদাত হোসেন দিপু অবশ্য দল পাননি চলতি বিপিএলে। আপাতত খেলছেন চট্টগ্রামের স্থানীয় লিগে। চোট থেকে ফিরে আসা তানজিদ হাসান তামিমও এবার সুযোগ পাননি বিপিএলে। তবে ঘরোয়াতে বেশ দাপটের সঙ্গেই খেলছেন এই ব্যাটার।

পেসার শাহীন আলম ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে খেলেছেন। আরেক পেসার অভিষেক দাস পিঠের চোটে পড়ে আপাতত প্রথম বিভাগে খেলছেন ব্যাটার হিসেবে। চোটের কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে ফিরতে হয়েছিল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে। গেল বিপিএলে বেশ ভালো করলেও চলতি বিপিএলে তার পারফরম্যান্সটা ছিল নিন্মমুখী। 

বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশের স্কোয়াড-

আকবর আলি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), তৌহিদ হৃদয় (সহ অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন ইমন, প্রান্তিক নওরোজ নাবিল, মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদত হোসেন, শামীম হোসেন, মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুন, তানজিম হাসান সাকিব, অভিষেক দাস, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহিন আলম, রাকিবুল হাসান ও হাসান মুরাদ।

এসএইচ/এফআই