চলতি বিপিএলের আগেও নিহাদুজ্জামান নামটা সবার কাছে তেমন পরিচিত ছিল না। তবে এবারের আসরে খেলতে নেমে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ১২টি উইকেট। আসরজুড়ে দল ভালো করতে না পারলেও নিহাদ ছিলেন বল হাতে উজ্জ্বল।

অথচ ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হতে বসেছিল নিহাদের। মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার পরে হাত ভেঙে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তবে দমে যাননি নিহাদ। নানা চরাই-উতরাই পার করে কয়েক সিজন বিরতির পর ফিরেই দ্যুতি ছড়ালেন দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগে। চলতি বিপিএল পারফরম্যান্স, ইনজুরি থেকে ফেরা, জাতীয় দলে খেলা নিজের বন্ধুরাসহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন নিহাদ। নিচে তুলে ধরা হলো-

কেমন লাগল এবারের বিপিএল?

নিহাদ: সত্যি কথা বলতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো বোলিং করতে পেরেছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, মানে আমার সবকিছু এ বছরের বিপিএলে একটা শেখার মঞ্চ ছিল। লোকাল খেলোয়াড় বা বিদেশি খেলোয়াড় সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে ইনজয় করার চেষ্টা করেছি।

নিজের পারফর্ম নিয়ে হতাশা আছে কি না?

নিহাদ: হতাশা বলতে কি ভালোর তো কোনো শেষ নেই। এ বছর যেগুলো ভুল ছিল সেগুলো খুঁজে বের করেছি। যেগুলো দুর্বলতা রয়েছে স্কিলে সেখানে উন্নতির কিছু জায়গা রয়েছে। এই জায়গাগুলোতে পরবর্তী সময়ে আরো ভালো করে আসতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে তাহলে আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে। সবমিলিয়ে খারাপ বলব না।

কয়েক বছর বিপিএলে খেলেননি এবার দল পেয়ে ভালো করতে বাড়তি ভাবনা কাজ করেছে কি না?

নিহাদ:  বাড়তি ভালো লাগা তো ছিলই। শুরুতে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে তারা সুযোগ দিয়েছে। আমি চেষ্টা বরেছি এই সুযোগ কাজে লাগাতে। আর যখনই দল আমাকে নিয়েছে তখন থেকেই প্রতিটা অনুশীলন সেশনে আমি চেষ্টা করেছি এখান থেকে কিছু যেন শিখতে পারি। তবে আমার মনে হয় আরো ভালো করতে পারলে ভালো লাগত।

একটা ম্যাচ শেষে সাকিবের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল আপনাকে, কি নিয়ে ঠিক কথা হয়েছিল সেদিন?

নিহাদ:  সাকিব ভাই আসলে বোলিং নিয়ে বলতেছিল, আলহামদুলিল্লাহ। বোলিং নিয়েই কথা হয়েছে। সবথেকে বড় কথা সাকিব ভাইয়ের একটা অনুপ্রেরণামূলক কথা ক্যারিয়ারের পেছনে অনেক বড় মানে একটা পজিটিভ কথা বললে যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই অনেক বড় একটা বিষয়। তো একটা ম্যাচ শেষে যখন উনি এসে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছে তখনই আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। কথা বলার জন্য এরপর অনেক সাহস পেয়েছি তখন উনি অনেক কথায় আমাকে বলেছে। আমি চেষ্টা করব তার মতো একজন কিংবদন্তির কথা যেন আমি ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারি।

সাকিব একবার বলেছিলেন বড় মঞ্চে কিছু না করলে কেউ গুনবে না আপনার মধ্যে এই কথাটা কেমন অনুপ্রেরণা যোগায়?

নিহাদ: হ্যাঁ এবারের বিপিএলের মাধ্যমে মোটামুটি চিনেছে আমাকে এবং সবথেকে বড় বিষয় সবাই সাপোর্ট করছে। আগে যেটা কম ছিল। এখন সবাই বাহবা দিচ্ছে ভালো হচ্ছে আরো ভালো করো। এই জিনিসগুলো আমাকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে। কারণ শেষ দুই বছরে আমি অনেক কষ্ট করেছি। এখন যখন ফলাফল পাচ্ছি নিজের কাছে তখন ভালো লাগছে।

খুব আহামরি পারফর্ম করেননি তবে ফেলে দেওয়ার মতোও আবার না? সবার থেকে কেমন ভালোবাসা পাচ্ছেন? 

নিহাদ:  সবাই সাপোর্ট করছে এটা পজিটিভ দিক। আর খুব বেশি খুশি সেটাও বলব না। খুব বেশি খারাপ করেছি এরকমও না। সব থেকে বড় বিষয় এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এটাই বড় বিষয়।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ-১৯ দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলেছেন, তখন আসলে স্বপ্নটা কি ছিল? 

নিহাদ: স্বপ্ন সবসময় একইরকম ছিল। যখন থেকে ক্রিকেট শুরু করেছি তখন থেকেই একটাই ইচ্ছা বড় ক্রিকেটার হওয়া। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। স্টিল এখনো সেই একই স্বপ্ন। তো স্বপ্নের পথেই এগোচ্ছি চেষ্টা করছি। আর ১৪ যুব বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করেছিলাম। এরপর বিসিবির রাডারেই ছিলাম এইসপিতে তবে দুটি দুর্ঘনার শিকারে সব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ আবার ফিরতে পেরেছি। 

সেই দুটি দুর্ঘটনার সময়ে কাদের পাশে পেয়েছেন?   

নিহাদ: পরিবার সবসময় ছিল। এরপর আসার বড় ভাইয়ের কথা বলতে হবে। এছাড়া দেলোয়ার ভাই নামে একজন রয়েছেন যার অনুপ্রেণায় আমার খেলাধুলাই আসা। দেলোয়ার ভাই আমার পাশে ছিল, মানসিকভাবে সাহায্য করেছেন। এছাড়া আমার বন্ধুদের অধিকাংশই এখন জাতীয় দলে খেলে। তারা তখন ব্যস্ত ছিল এটা স্বাভাবিক। আমিও নিজেকে একটু আড়াল করে রেখেছিলাম। চেষ্টা করছিলাম নিজেকে গুছিয়ে নিতে।

সাকিব, তাইজুল, নাসুম কিংবা অন্যান্য এত স্পিনার তার মধ্যে সেরা হওয়াটা কি একটু বেশি কঠিন?

নিহাদ: সেরা হয়ে উঠা তো কঠিনই এবং চ্যালেঞ্জের। আমাদের দেশে তো বাঁহাতি স্পিনার তো অনেক রয়েছে যারা ভালো করছে। এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আর এখানে ভিন্ন হতে হলে স্কিলে উন্নতি করতে হবে। বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও চেষ্টা করছি শেষ এক বছর ধরে ভালো করতে। যদিও এবার সুযোগ পায়নি বা ভালো করতে পারিনি।

আপনারই অনেক বন্ধু জাতীয় দলে খেলছে এখন, বিষয়টা আপনাকে ভালোলাগার পাশাপাশি নিজেকে কতটা মন খারাপ করে তোলে যেহেতু আপনিও ওদের সঙ্গে খেলতেন একসময়? 

নিহাদ: সত্যি কথা বলতে আমরা যে যুব দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলেছি ২০১৪ সালে সেখান থেকে ১০ জন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলেছে। আমরা কয়েকজন পারিনি। খারাপ লাগা বলতে আমারই ব্যর্ততা। যখন পারফর্ম করার সময় এসেছিল আমি নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। তখন যদি মেলে ধরতে পারতাম তাহলে আমার ক্যারিয়ার অন্যরকম হতো। আমি পারিনি আমারই দোষ। যেটা হয়নি সেটা নিয়ে এখন আর আক্ষেপ না করে সাসনের দিক এগোতে থাকি।

জাতীয় দলের সিনিয়র কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় কি না?

নিহাদ: শেষ এনসিএলে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছি। সাধারণত কোনো কিছু হলে ভাইকে মেসেজ করতাম বা ফোন দিতাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে একবার কিছু বিষয় জানতে চেয়েছিলাম তখন ভাই আমাকে অনেক সময় দিয়েছিলেন। অনেক কথা বলে মানসিকভাবে আমাকে চাঙা করতে সাহায্য করেছিলেন।

পরিবার তো চাইতো আপনি ডাক্তার হন কিন্তু এখন তারা সেই চাওয়াটা কি ভুলতে পেরেছেন?

নিহাদ:  হ্যাঁ (হাসি) এখন সেই স্বপ্ন তারা ভুলতে পেরেছে। যদিও এখনো পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। তারা এখন অনেক খুশি যে আমি পারফর্ম করতে পারছি। আমার জন্য তারা একটু হলেও খুশি। আর সত্যি কথা বাবা-মায়ের মুখে দিকে তাকিয়ে হলেও ভালো পারফর্ম করার ইচ্ছাটা জাগে। তারা দুজনেই চেয়ে থাকে কখন আমি পারফর্ম করব। আম্মা অসুস্থ যখন দিনে খেলা থাকে তখন আম্মা রোজা থাকে। মাঠে নামার আগে সবসময় পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। তখন তাদের জন্য হলেও ভালো খেলার আগ্রহটা তৈরী হয়।

বিপিএল শেষ এখন প্লান কি, কিভাবে উন্নতি করতে চান নিজের পরবর্তী সময়ের জন্য?

নিহাদ: আমার যেসব দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চায়। ইতোমধ্যে সেগুলো খুঁজে বের করেছি। আমি এক সপ্তাহ পর থেকে বোলিংয়ের কাজ শুরু করব। আসন্ন বিসিএলে আমি নেই। চেষ্টা থাকবে ডিপিএলের আগে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে। নিজেকে গুছিয়ে টুর্নামেন্টে ভালো করার লক্ষ্য থাকবে।

কখনো কি ভাবেন লাল সবুজের জার্সি গায়ে বোলিং করার কথা?

নিহাদ:  আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট নিয়ে চিন্তা করতেছি। শেষ দুই বছরে বিসিবির রাডারের বাইরে আমি। চেষ্টা করতেছি বিসিবির রাডারে যেগুলো বোলিং প্রোগ্রাম বা বাংলা টাইগার্স...বিসিবির রাডারে যদি থাকতে পারি আমার জন্য ভালো হবে। চেষ্টা করব ভালো কিছু করার, দেখা যাক।

এসএইচ/এফআই