ম্যাচের শেষ দিকে স্নায়ু ঠিক করে ফিনিশার হিসেবে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিজেকে নতুনভাবে চিনিয়েছেন রিংকু সিং। দল হিসেবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের আরেকটা ব্যর্থ আসর কাটলেও ফ্রাঞ্চাইজিটির জার্সিতে স্বপ্নের মতো একটা আসর ছিল বাঁহাতি এই ব্যাটারের। তাকে জাতীয় দলে দেখার জন্য তর সইছে না ভারতীয় সাবেক কিংবদন্তিদেরও। রিংকুর ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট বলতে গেলে এবারের আসরে গুজরাটের বিপক্ষে সেই ৫ বলে পাঁচ ছক্কার মার। নিজেও স্বীকার করলেন, ওইদিনের পর থেকে জীবনটাই বদলে গেছে তার। মানুষের সম্মান পাচ্ছেন অনেক। 

আলীগড়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক পরিবার থেকে ওঠে এসেছেন রিংকু। যার বাবা গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করে তাদের সংসার চালাতেন। কষ্টে দিন পার করতে হলেও ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেননি রিংকু। বরং জীবন আর পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে লড়াই করে টিকে রয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বেশ কয়েকটি মৌসুম কলকাতার ডাগ আউটে ছিলেন তিনি।

যদিও সেভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি রিংকুর। বরং বারবার নিলাম থেকে কেন রিংকুকে কেনা হয় সেটা নিয়ে সমালোচনা হতো। সবশেষ মৌসুমের শেষ দিকে সুযোগ পেয়ে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি। যার ফলে এবারের আসরে একাদশে জায়গা পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। সুযোগ পেয়ে নিজের জাতও চিনিয়েছেন রিংকু।

আসরের শুরুর দিকে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে শেষ ৫ বলে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। এমন কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে যশ দয়ালের বলে টানা ৫ ছক্কা মেরে কলকাতাকে জেতান বাঁহাতি এই ব্যাটার। স্বীকৃত ক্রিকেটে রান তাড়ায় প্রথম ব্যাটার হিসেবে এমন কীর্তি গড়েন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই কলকাতার ব্যাটিং ব্যর্থতায় দলের হাল ধরেছেন।

সর্বশেষ টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচে গতকাল (শনিবার) লখনৌয়ের বিপক্ষে দলকে প্রায় জিতিয়েই ফেলছিলেন রিংকু। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩ বলে ৬৭ রান করেন। শেষ বলে ছক্কাও হাঁকান। তবু দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। লখনৌয়ের দেওয়া ১৭৭ রান তাড়া করতে নেমে শেষ দুই ওভারে কেকেআরের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। সেখান থেকে দুই ওভারে ৩৯ রান হয়। ১ রানে হারে নাইটরা। 

এদিন ম্যাচ শেষে রিংকু জানান, ‘পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কার কথা মাথায় ছিল। আমি চাপমুক্ত ছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে আমি আমার মতো মারব। শেষ ওভারে আমাদের দরকার ছিল ২১ রান। আমি একটি বল মিস করেছি। না হলে আমরাই জিততাম।’

চলতি আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ৪৭৪ রান করেছেন রিংকু। যেখানে চারটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তার। স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৫৩। গড় ৫৯.২৫। ফিনিশার হিসেবে খেলতে এমন পারফরম্যান্সে অনেকেই জাতীয় দলে দেখছেন রিংকুকে। তব এখনই এসব নিয়ে খুব বেশি কিছু ভাবছেন না। চিন্তিতও নন। বলছিলেন, ‘যখন এই রকম ভালো মৌসুম কাটে, তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। আমি ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ভাবছি না। আমি যেভাবে খেলছি, সেই ভাবেই কাজ খেলে যাব।’

আলীগড়ের তারকা স্বীকার করেছেন, পাঁচটি ছক্কার পরে তাঁর জীবন আমূল বদলে গেছে। রিংকু বলেন, ‘পরিবার খুব খুশি। গত বছর থেকে মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করেছে। কিন্তু যখন থেকে আমি পাঁচটি ছক্কা মেরেছি, তখন থেকে আমি অনেক সম্মান পাচ্ছি।’

এফআই