ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ওয়ানডেতে বাজে ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত হেরেছিল বাংলাদেশ। তাই সিরিজে টিকে থাকতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের বিকল্প নেই স্বাগতিকদের। একদিকে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই, অন্যদিকে নিয়মিত অধিনায়ক তামিমের অনুপস্থিতি সবমিলিয়ে কিছুটা হলেও বাড়তি চাপ নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই হতাশার চিত্রই যেন ফুটে ওঠেছে দলের বোলিং-ফিল্ডিংয়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন দুই আফগান ওপেনার গুরবাজ-ইব্রাহিম। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে সফরকারীরা। সিরিজে টিকে থাকতে স্বাগতিকদের রেকর্ডই গড়তে হবে। এর আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, সেবার লক্ষ্য ছিল ৩২২ রান। এ মাঠে সর্বোচ্চ ২৮৭ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের।

টস হেরে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৩১ রান করেছে আফগানিস্তান। সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪৫ রান এসেছে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ব্যাট থেকে। তাছাড়া সেঞ্চুরি পেয়েছেন আরেকন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানও। বাংলাদেশের হয়ে সমান দুটি করে উইকেট পেয়েছেন মুস্তাফিজ, হাসান, সাকিব ও মিরাজ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আক্রমণাত্মক শুরু করে আফগানিস্তান। রানের চাকা আটকাতে ব্যর্থ সাকিব এদিন চেয়েছিলেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে! দ্রুত রান তুলতে থাকা গুরবাজ ইনিংসের ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবকে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন।  প্রলুব্ধ করতে পরের বলটি ফ্লাইট দেন তিনি। সেই ফাঁদে এই ওপেনার পা দিয়েছেন ঠিকই তবে দেখে-শুনে খেলেছেন। বলের লেন্থ বুঝে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন গুরবাজ। আর তাতে মাত্র ৪৮ বলে ব্যাক্তিগত অর্ধশতক স্পর্শ করেন তিনি। আর আফগানিস্তান দলীয় একশো স্পর্শ করেছে ১৪.২ ওভারে। 

২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুই ওপেনার করিম সাদিক ও জাভেদ আহমাদি মিলে তুলেছিলেন ১৪১ রান। যা এতদিন আফগানিস্তানের ওয়ানডে ইতিহাসে সেরা ওপেনিং জুটি ছিল। এবার সেটা ২১ ওভার ১ বল খেলেই ভেঙ্গে দিয়েছেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। 

২৮তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে ছিল, সেখানে সফট হ্যান্ডে খেলে প্রান্ত বদল করেন গুরবাজ। আর তাতে ১০০ বল খেলে স্পর্শ করেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। চার ওয়ানডে সেঞ্চুরির দুইটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং দুইটাই এই চট্টগ্রামে পেয়েছেন তিনি। 

গুরবাজ একও প্রান্তে ঝড় তুললেও অন্য প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছেন ইব্রাহিম। তাইতো গুরবাজ সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর এসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। ২৯তম ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজকে এক রান নিয়ে ৭৫ বলে এই ব্যাক্তিগত মাইলফলকে পা রাখেন তিনি।  

সাকিবের করা ইনিংসের ৩৭তম ওভারের প্রথম বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর ছিল। সেখানে টার্ন আর বাউন্সে পরাস্ত হয়েছেন গুরবাজ। তাতে বল আঘাত হানে তার প্যাডে আর সঙ্গে সঙ্গেই হাত তুলে সাকিবের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তবে আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি গুরবাজ, তাই রিভিউ নেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১২৫ বলে ১৪৫ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। ১৩টি চারের সঙ্গে গুরবাজ মেরেছেন ৮টি ছক্কা। কোনো আফগান ওপেনারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস এটি। গুরবাজের বিদায়ে আফগানিস্তানের রেকর্ড ২৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।

সাকিবের হাত ধরে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় উইকেট নিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ৫ বল। ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে রহমত শাহকে মুস্তাফিজের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠিয়েছেন এবাদত হোসেন। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে 'উইকেট পার্টিতে' যোগ দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩৯তম ওভারের শেষ বলে এই ডানহাতি স্পিনারের ফ্লাইট মিস করে বোল্ড হয়েছেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তাতে দেরিতে এসে হলেও আফগানদের লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ।

৪২তম ওভারের তৃতীয় বলটি করার সময় লাফ দিতে গিয়ে আম্পায়ার গাজী সোহেলের কাঁধে বাড়ি খায় এবাদতের হাত। তাতে ধাক্কা খেয়ে রানআপ থামাতে পারেননি ঠিকঠাক। ফলে পেছন ঘুরে পড়ে আঘাত পান পায়ে। ফিজিও এসে প্রথামিকভাবে দেখার পর উঠেও দাঁড়ান। কিন্তু এরপর মাঠ ছেড়ে যেতে হলো। যাওয়ার পথে খোঁড়াতে দেখা গেছে তাকে। তার বদলি হিসেবে ওভারের বাকি চার বল করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই স্পিনার অবশ্য উইকেটের দেখাও পেয়ে যেতেন। কিন্তু নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ফেলে শেষ পর্যন্ত আর তা পাওয়া হয়নি।

এরপর আবারও উইকেটের দেখা পান মিরাজ। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ করিয়ে গুড লেন্থ রেখেছিলেন মিরাজ। সেখানে গায়ের জোরে উড়িয়ে মারতে চান নাজিবউল্লাহ। কিন্তু টাইমিং কতে পারেননি। লং অনে সহজ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। তাতে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার, তৃতীয় স্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫০ উইকেট স্পর্শ করেন মিরাজ।পাঁচজনের মধ্যে সেরা ইকোনমি মিরাজেরই।

৭৫ বলে ফিফটি করার পর ১১৮ বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেন ইব্রাহিম। ১৩তম ম্যাচে এসে চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেলেন এই ওপেনার। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। সেঞ্চুরির ঠিক পরই ফিরলেন তিনি। মোস্তাফিজের করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলটি শর্ট লেন্থে ছিল, সেখানে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার সংগ্রহ ১১৯ বলে ১০০ রান।

উইকেটে এসেই রান বাড়ানোয় মন দিয়েছিলেন রশিদ। নিজের খেলা প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু তাকে খুব একটা পথ হাঁটতে দিলেন না সাকিব। ৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে রশিদকে এগিয়ে আসতে দেখে লেংথ কমিয়ে ফেলেছিলেন সাকিব। সে বলের আর নাগাল পাননি তিনি। বাকি কাজটুকু সেরেছেন মুশফিকুর রহিম।

শেষ দিকে কাউকেই বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর কিছুটা লাগাম টেনে ধরলেও বড় সংগ্রহই গড়েছে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩১ রানে থেমেছে আফগানিস্তান।

এইচজেএস