চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি/ফাইল ছবি

গেল আইপিএল মৌসুমটা মোটেও ভালো কাটেনি চেন্নাই সুপার কিংসের। এর আগে সব মৌসুমে সেমিফাইনালে খেলেছিল দলটি। সে দর্প ২০২০ মৌসুমে চূর্ণ হয়েছিল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের। সে দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি এড়াতে চলতি মৌসুমে সবার আগে নেমেছেন অনুশীলনে। ধোনির দলের লক্ষ্যটা যে এবার হারানো গৌরব ফেরানো, তা বলাই বাহুল্য।

যেখানে শেষ করেছিল সর্বশেষ আসর

সর্বশেষ শিরোপাজয়টা এসেছিল ২০১৮ সালে। তবে শিরোপা না জিতলেও এর আগে-পরে অন্তত সেমিফাইনাল খেলেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। সে যাত্রায় ছেদ পড়ে গেল মৌসুমে। এতটাই যে ১৪ ম্যাচে পেয়েছে ৬টি জয়, শেষ করেছিল শেষ দুই দলের একটি হয়ে। অবনমনের নিয়ম নেই আইপিএলে। যদি থাকত তবে এবার তাদের দেখাই মিলত না চলতি মৌসুমে।

আসছে মৌসুমে সম্ভাব্য একাদশ

ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, মঈন আলি, সুরেশ রায়না/রবিন উথাপ্পা, আম্বাতি রাইডু, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, স্যাম কারান, ডুইন ব্রাভো, শার্দুল ঠাকুর, দীপক চাহার ও ইমরান তাহির।

ব্যাটিং

শেষ আইপিএলে পাওয়ারপ্লেতে রান তুলতে খুব একটা সফল হয়নি চেন্নাই। রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৭.১৩ করে। এ সময় মাঝের ওভারগুলোয় যে রান (৭.৩৭) তুলেছে দলটি, তার চেয়েও যা খুব কম। এর প্রতিকার আসছে মৌসুমে পেতে পারে দলটি, টপ অর্ডারে মইন আলীকে খেলিয়ে। বৃত্তের বাইরে দুজন খেলোয়াড় থাকার সুবিধাটা যে তিনি কাজে লাগাতে পারেন তা তিনি ভালোভাবেই দেখিয়েছেন ২০১৮ ও ২০১৯ সালে, ওরচেস্টারশায়ার র‍্যাপিডসের হয়ে। তার সঙ্গে থাকতে পারেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড় যিনি ২০২০ মৌসুমটা শেষ করেছিলেন টানা তিন অর্ধশতক দিয়ে।

গেল মৌসুমে সুরেশ রায়না খেলতে পারেননি দলটির হয়ে। তিনি ফিরেছেন এবার। তবে তার স্বর্ণসময় গত হয়েছে অধিনায়ক ধোনির মতোই। জাতীয় দল থেকে হয়ে পড়েছেন ব্রাত্য। সবশেষ আইপিএল ম্যাচটাও খেলেছেন সেই ২০১৯-এ। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি দিয়ে ফিরেছেন মাঠে তবে ফর্মটা মোটেও কথা বলছে না পক্ষে।

একই অবস্থা আম্বাতি রাইডুরও। মুশতাক আলী ট্রফিতে খুব ভালো করতে পারেননি, শেষ আইপিএলেও পারফরম করতে পারেননি তিনি। সঙ্গে যোগ হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ থেকে দীর্ঘ বিরতি, ২০২০ এর জানুয়ারি থেকে মাঠে নামেননি তিনি। মিডল অর্ডারে ম্যাচ অনুশীলনের অভাব বড় হয়েই ধরা দিতে পারে দলটিতে। ফাফ ডু প্লেসি দলে আছেন, তবে টপ অর্ডারে রবিন উথাপ্পা আর মঈনের উপস্থিতি তাকে ঠেলে দিতে পারে বেঞ্চের দিকে।

ব্যাটসম্যানরা দীর্ঘদিন ধরে নেই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে। যা চেন্নাইকে বেশ দুর্ভাবনাতেই রাখবে/ক্রিকইনফো

বোলিং

জশ হেইজেলউড সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে, লুঙ্গি এনগিডি ফিরবেন দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ শেষ হওয়ার পর। তবে ডুইন ব্রাভো আবারও ফিট হয়ে ফিরছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডেথ ওভারে বোলিংও করেছেন, তা অধিনায়ক ধোনিকে স্বস্তি দেবে বেশ।

স্যাম কারান ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজেই দারুণ পারফরম করেছেন, ধোনিও গেল মৌসুমে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন তার। সঙ্গে দেশীয়দের মধ্যে আছেন শার্দুল ঠাকুর, যা চেন্নাইকে বোলিং আক্রমণে দারুণ বৈচিত্র‍্যই এনে দেবে। দলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপস্থিতি একজন বাড়তি বিদেশি বোলার খেলানোর সুযোগ দেবে চেন্নাইকে, যার ফলে ইমরান তাহির নিয়মিতই খেলতে পারেন দলটিতে।

গেল মৌসুমে প্রতিপক্ষে বাঁহাতির আধিক্য থাকলে একজন অফস্পিনারের অভাবে দারুণ ভুগেছে চেন্নাই। তবে এবার মইন ও কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের উপস্থিতি অন্তত সে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে দলটিকে। যদিও ওয়াংখেড়ে ও চিন্নাস্বামীর পিচ কতটা সুবিধা দেবে স্পিনারদের তা নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। তবে দলটির ব্যাটিং লাইনআপের কথা ভাবলে তিন বারের চ্যাম্পিয়নদের বোলিং আক্রমণকে বেশ আঁটসাঁটই বলতে হবে।

নজর কাড়তে পারেন যেসব তরুণ

বুড়োদের দল হিসেবে চেন্নাইয়ের দুর্নাম আছে বেশ। তবে চোটজর্জর রবীন্দ্র জাদেজাকে যদি বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবে দলটি, তাহলে তরুণ সাই কিশোর হতে পারেন দারুণ বিকল্প। ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি এই অর্থোডক্স স্পিনার সর্বশেষ মুশতাক আলি ট্রফিতে ৪.৮২ ইকনমিতে বল করেছেন, যা টুর্নামেন্টটিতে অন্তত ২০ ওভার বল করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা।

তরুণ পেসার হরিশঙ্কর রেড্ডিও নজর কাড়তে পারেন আসছে মৌসুমে। তার তির্যক অ্যাকশনের কারণে অধিনায়ক ধোনিও বেশ অস্বস্তি বোধ করেছেন প্রস্তুতি ম্যাচে, হয়েছেন বোল্ডও। সেটা ম্যাচেও করে দেখাতে পারলে অধিনায়কের বড় এক অস্ত্রই হবেন তিনি।

ইংলিশ তরুণ পেসার স্যাম কারান তো আছেনই। সর্বশেষ ভারত সিরিজেই যিনি দারুণ এক ৯৫ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে প্রায় এনেই দিচ্ছিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়। বোলিংয়ে দারুণ মনোযোগী এই বোলারও চেন্নাইয়ের হারানো গৌরব ফেরানোর বড় কুশীলব বনে যেতে পারেন।

কোচিং স্টাফ-

স্টিফেন ফ্লেমিং (প্রধান কোচ), মাইক হাসি (ব্যাটিং কোচ), লক্ষ্মীপতি বালাজি (বোলিং কোচ), এরিক সিমন্স (বোলিং উপদেষ্টা), রাজিব কুমার (ফিল্ডিং কোচ)।

এনইউ/এটি