ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছিল এশিয়া কাপের ভাগ্য। ভারতের আপত্তির মুখে আয়োজক পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাধিক মডেলের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন মন গলছিল না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের! অন্যদিকে টুর্নামেন্টকে আলোর মুখ দেখাতে মরিয়া ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মাস তিনেকের 'নাটক' শেষে অবশ্য এক বিন্দুতে মিলেছে ভারত-পাকিস্তান। ফলে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া সেরার লড়াই।

এশিয়া কাপের এবারের আসরে অংশ নেবে ছয় দল। এই ছয় দলের সম্ভবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ চতুর্থ পর্বে থাকছে ভারতের স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।

সর্বশেষ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে সুপার ফোর থেকে বাদ পড়েছিল ভারত। আর এবার সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই এশিয়া কাপ শুরু করবে রোহিত শর্মার দল। চিরপ্রতিপক্ষদের বিপক্ষে জয় পেলেই গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ গ্রুপের বাকি সদস্য নেপাল। শক্তিমত্তা বিচারে তাদের বিপক্ষে ভারতের হারকে 'অঘটন' বলা ছাড়া উপায় থাকবে না! তাই পকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা ভারতের জন্য দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ-পয়েন্ট টেবিল ও মর্যাদার লড়াই। একই সঙ্গে গত আসরে হারের প্রতিশোধ নেয়ারও!

আরও পড়ুন >> বদলে গেল এশিয়া কাপের সময়

ভারতকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বটা থাকবে রোহিত শর্মার কাঁধে। যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের পর থেকে খুব একটা ভালো সময় কাটেনি তার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে করেছিলেন ৪৩ রান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তরুণদের জায়গা করে দিতে ব্যাটিং করেছেন নিচের দিকে। তবে তার অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্যে আস্থা আছে টিম ম্যানেজমেন্টের। তাইতো ব্যাটিংয়ে দলের ভীত গড়ে দেওয়ায় পাশাপাশি নেতৃত্বভারও সামলাবেন তিনি।

ওপেনিংয়ে রোহিতের সঙ্গী হবেন শুবমান গিল। এই তরুণ ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও শুরুর দিকেই আছেন। তবে ইতোমধ্যেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন তিনি। কেউ কেউতো একধাপ এগিয়ে বলে দিয়েছেন, রোহিত-কোহলিদের পথেই হাঁটছেন এই ওপেনার। তার পরিসংখ্যানও এমনটাই বলছে। ওয়ানডেতে এখনও পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ খেলে প্রায় ৬২ গড়ে করেছেন ১৪৩৭ রান। যেখানে তিনি ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১০৪ স্ট্রাইকরেটে। এবার তার সামনে সুযোগ এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে নিজেকে প্রামণ করার। 

এই দুইজনের ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে আছেন ঈশান কিষাণ। একই সঙ্গে ব্যাকআপ উইকেটকিপারও এই তরুণ। নিয়মিত ওপেনারদের চোট কিংবা বিশ্রাম ছাড়া একাদশে তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নেপালের বিপক্ষে হয়তোবা সুযোগ মিলতে পারে তার। তাছাড়া বাকিটা সময় বেঞ্চে বসেই কাটাতে হবে তাকে।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞাপনে শচীনের কণ্ঠ-ছবি ব্যবহার, মামলা দায়ের

তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটা বিরাট কোহলির দখলে। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসেও তার ব্যাটের যেই ধার তাতে এই পজিশনটায় এখনও তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই! গত এশিয়া কাপের আগে প্রায় বছর তিনেক সেঞ্চুরি খরায় ভুগছিলেন তিনি। তবে সেবার এশিয়া সেরার মঞ্চেই সেই বৃত্ত ভাঙেন তিনি। তার মতো বড় মাপের ব্যাটাররা বোধ হয় বড় মঞ্চের জন্যই বিশেষ ইনিংসগুলো তুলে রাখেন!

চার নম্বরে দেখা যাবে শ্রেয়াস আইয়ারকে। সম্প্রতি চোট কাটিয়ে ফিরেছেন তিনি। মিডল অর্ডারে তার অর্ন্তভুক্তি দলের শক্তি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার দিনে বড় ইনিংস খেলে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি। পাঁচে খেলবেন চোট কাটিয়ে এশিয়া কাপ দিয়ে দলে ফেরার অপেক্ষায় থাকা আরেক মিডল অর্ডার ব্যাটার লোকেশ রাহুল। তার সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো না। অভিজ্ঞতার জোরে স্কোয়াডে টিকে গেছেন।উইকেটকিপার হিসেবে একাদশে নিয়মিত খেলার সম্ভাবনা বেশি তারই। রাহুল-আইয়ারের ব্যাকআপ হিসেবে আছেন সূর্যকুমার যাদব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও ক্রিকেটের সংস্করণ যত বড় হয় ততই খোলসবন্দী থাকে তার ব্যাট। ওয়ানডেতেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। তবে ১৭ সদস্যের স্কোয়াডে রাখা হয়েছে এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে।

আরও পড়ুন: সৌরভের চোখে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড 

ভারতের স্কোয়াডে অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন মোট ৪জন। তাদের মধ্যে হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজার একাদশে জায়গা পাকা। বাকি দুইজন- তিলম ভার্মা ও অক্ষর প্যাটেলকে আসরের বেশিরভাগ সময়ই সাইড বেঞ্চে বসে কাটাতে হবে। টপ অর্ডারে কোনো ব্যাটার চোটে পড়লে সুযোগ আসতে পারে তিলকের।

স্পিন বিভাগে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন জাদেজা। তার ডানহাতি অফ স্পিন উপমহাদেশের মাটিতে বেশ কার্যকরী। তার সঙ্গে নিয়মিতই একাদশে দেখা যাবে কুলদ্বীপ যাদবকে। এই চায়নাম্যান বরাবরই উইকেট টেকার। তাই বোলিংয়ে রোহিতের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন এই বাঁহাতি লেগ স্পিনার। এই দুইজনের ব্যাকআপ হিসেবে স্কোয়াডে আছেন অক্ষর। দলের প্রয়োজনে হাত ঘুরাতে পারেন তিলকও।

স্পিনের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ভারতের পেস বিভাগ। এখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন জাসপ্রিত বুমরাহ। সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে লম্বা সময় পর বাইশ গজে ফিরেছেন তিনি। ফেরার সিরিজেই হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। দুই টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেট শিকার করে ভালো সময়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন এই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার।

বুমরাহকে সঙ্গ দেবেন মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণা, শার্দুল ঠাকুর। তবে তাদের মধ্যে শামি ও সিরাজ একাদশে নিয়মিত খেলবেন। বাকি দুইজনকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ পেসারদের ছাড়া হার্দিকের মিডিয়াম পেসও কার্যকরী হতে পারে। উইকেট আর কন্ডিশন অনুযায়ী প্রতিপক্ষের জন্য থ্রেট হতে পারেন হার্দিকও।

ভারত স্কোয়াড: রোহিত শর্মা, শুবমান গিল, ভিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, ইশান কিষাণ, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদ্বীপ যাদব, প্রসিধ কৃষ্ণা।

এইচজেএস