ক্রীড়ার প্রতিটি ইভেন্টই অনেকগুলো নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। ক্রিকেটে এমন অনেক নিয়ম আছে যা অনেকেই সেভাবে জানেন না। তার একটি টাইমড আউট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন আউট প্রথম দেখা গেল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার চলমান ম্যাচে। হেলমেট পরিবর্তনে ৩ মিনিটেরও বেশি সময় দেরি করায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইম আউট হয়েছেন। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচে আজ (সোমবার) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। যেখানে টস হেরে আগে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের ২৫তম ওভারেই ঘটে সেই ঘটনা। কোনো বল খেলার আগেই ম্যাথিউস টাইম আউট হয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা প্রথম।

যে হেলমেট নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন ম্যাথিউস, সেটিতে নিরাপদ বোধ করছিলেন না তিনি। পরে নতুন আরেকটি হেলমেট নিয়ে আসা হয়। সেটিতেও খানিকটা সমস্যা ছিল। তাই আবারও হেলমেট পরিবর্তন করতে চান ম্যাথিউস। কিন্তু ততক্ষণে ৩ মিনিট পার হয়ে যায়। টাইম আউটের আবেদন করেন সাকিব। আর তাতে নিয়ম অনুযায়ী আউট দেন আম্পায়াররা।

বোল্ড অথবা ফিল্ডার দ্বারা কোন ক্যাচ নেওয়া ছাড়া বাকি আউটগুলোর ক্ষেত্রে আম্পায়ারকে অবশ্যই আবেদন জানানো বাধ্যতামূলক। বর্তমানে একজন ব্যাটসম্যান ১১ ধরনের মারপ্যাচে আউট হতে পারেন। আউট হওয়ার সেসব ধরন দেখে নেওয়া যাক—

বোল্ড : একজন বোলার বল ডেলিভারি করার পর সরাসরি, ব্যাট-পা কিংবা অন্য কোনোভাবে যদি স্টাম্পে গিয়ে সেটি আঘাত করে এবং বেল পড়ে যায় তাহলে ওই ব্যাটসম্যান বোল্ড আউট হন। 

ক্যাচ আউট : ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে কিংবা গ্লাভস ছুঁয়ে বল মাটিতে স্পর্শ করার আগেই ফিল্ডিং দলের কেউ বলটি তালুবন্দী করতে পারলে সেটি ক্যাচ আউট। এটিও তিন ধরনের হয়ে থাকে — ১) কট বাই দ্যা ফিল্ডার, ২) কট অ্যান্ড বোল্ড ও ৩) কট বিহাইন্ড।

এলবিডব্লিউ : বোলারের বল ডেলিভারি করার পর ব্যাটে স্পর্শ না করে ব্যাটসম্যানের পায়ে লাগলে আম্পায়ারের বিবেচনায় যদি মনে হয় স্টাম্প লাইনে রয়েছে তাহলে তিনি এই আউট দিতে পারেন। 

স্টাম্পিং : ব্যাটসম্যান বলে হিট করার আগেই যদি ক্রিজ থেকে বাইরে বেরিয়ে যান অথবা শরীরের কোন অংশ যদি লাইন স্পর্শ না করে থাকে তাহলে উইকেটরক্ষক বলটিকে ধরে বেল উড়িয়ে দিতে পারেন।

রান আউট : ব্যাটসম্যান যখন রান নেওয়ার সময় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ান এবং তার ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই যদি কোনো ফিল্ডার দ্বারা সরাসরি অথবা তালুবন্দি করে উইকেটের বেল ফেলে দেন, তাহলে তিনি রান আউট হবেন।

হিট উইকেট : রান নেওয়ার সময় কিংবা ক্রিজে থাকাকালে ব্যাটম্যানের ব্যাট অথবা শরীরের কোন অংশ যদি স্টাম্পে লেগে বেল পড়ে যায় তাহলে তিনি হিট আউট।

অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড : ফিল্ডার দ্বারা ছোড়া বল উইকেটরক্ষকের হাতে পৌঁছানোর আগে ব্যাটসম্যান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সেটিকে বাধা দেন তাহলে এ ধরনের আউটের পর্যায়ে পড়বেন।

হিট দ্যা বল টোয়াইস : ডেলিভারি হওয়া কোন বল যদি ব্যাটসম্যান দুই বার আঘাত করেন তাহলে তিনি ‘হিট দ্য বল টোয়াইস’ আউট হবেন। প্রথমবার হিট করার পর দ্বিতীয়বার যদি ব্যাট, পা অথবা অন্যকোনো ভাবে বলটিকে আঘাত করা হয় তবুও এই আউট হবে।

হ্যান্ডেল্ড দ্যা বল : ব্যাটের স্পর্শ এবং প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ডিংয়ের সম্মতি ছাড়া যদি ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বলে স্পর্শ করেন তাহলে সেটি ‘হ্যান্ডেল্ড দ্যা বল’ আউট।

টাইমড আউট : একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর যদি নতুন ব্যাটসম্যান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাউন্ডারি লাইনের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারেন তাহলে তিনি টাইমড আউট হবেন।এক্ষেত্রে টেস্টে ১৮০ সেকেন্ড, ওয়ানডেতে ১২০ সেকেন্ড এবং টি-টোয়েন্টিতে ৯০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ব্যাটসম্যানকে বাউন্ডারি লাইনের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। এটি কেবল ব্যাটারদের ক্রিজে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেই নয়, হেলমেট-ব্যাট কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রতিপক্ষ ও আম্পায়ারের অনুমতি ছাড়া তিনি সময় ক্ষেপণ করতে পারবেন না। 

রিটায়ার্ড হার্ট : কোন ব্যাটসম্যান যদি আঘাত পেয়ে আম্পায়ারের সম্মতি ছাড়াই মাঠ ছাড়েন এবং তিনি ওই ইনিংস পুনরায় শুরু করতে চাইলে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সম্মতি না থাকলে ওই ব্যাটসম্যানকে রিটায়ার্ড আউট বলে গণ্য করা হয়।

এএইচএস