বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সাকিব আল হাসান জানিয়েছিলেন— ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলতে চান। যদিও এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের খেলা অনিশ্চিত। এরই মাঝে শেষ হয়েছে সাকিবের চলতি বিশ্বকাপ যাত্রা। আঙুলের চোটে পড়ে দিল্লি থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকায়ও ফিরে এসেছেন টাইগার অধিনায়ক। তাহলে কি নিরবেই শেষ হয়ে গেল সাকিবের বিশ্বকাপ অধ্যায়?

১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সাকিব সবমিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেন ৫টি। যার শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ সালে, হ্যাংলা-পাতলা গড়ন, গায়ে ঢিলেঢালা লাল সবুজের জার্সি। আর মাথার হেলমেটটা বারবার ঠিক করতে হতো তার। সেই সাকিবই আজ বিশ্বসেরা তারকাদের একজন। যদিও তার জন্য পোর্ট অব স্পেন থেকে দিল্লির রাস্তাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। কত বাধা-বিপত্তিও এসেছে, একের পর এক জর্জরিত হয়েছেন সমালোচনায়। সবকিছু পাশ কাটিয়েই তিনি পৌঁছেছেন অনন্য উচ্চতায়।

কখনও মিরপুর, কখনও লর্ডস, কখনওবা ওভাল– সবখানেই ব্যাট-বল হাতে সাকিব দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিবের যাত্রাটা শেষ হলো একেবারে নিরবে-নিভৃতেই! সাকিবকে মনে রাখার জন্য আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। রেকর্ড আর পরিসংখ্যানের পাতা উল্টাতে গেলেই দেখা যাবে লাল সবুজের দেশে একজন ছিল, যে রয়েছেন অলরাউন্ডারদের শীর্ষে, কখনওবা বোলার কিংবা ব্যাটারদের সঙ্গেও পাল্লা দিচ্ছেন। 

ভারতবধ দিয়ে সাকিবের শুরু, আর শেষটা হলো শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেও যেন সাকিব ছাপ রাখলেন নিজের। ৮২ রান আর ২ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যাচসেরা হয়েই থামলেন! সেদিন পুরো ব্যাটিং ইনিংসে ভাঙা আঙুলে টেপ পেঁচিয়ে খেলে দলকে জিতিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। অথচ পুরো ইনিংসে কাউকেই বুঝতে দেননি তিনি ইনজুরিতে। বড় খেলোয়াড়দের বৈশিষ্ট্যই এমন, যে কারণে আলাদা করে বলা লাগে না তিনি সেরা! 

চলমান বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার পেছনের নায়ক হিসেবে সাকিবকে আপনি দাঁড় করাতেই পারেন। আসরজুড়ে ব্যাট হাতে বড় ইনিংস না খেলতে পারার কারণে। তবে মাঠে নেমে দলের প্রতি তার ডেডিকেশন আপনাকে মনে রাখতেই হবে। সেটা এর আগেই খালেদ মাহমুদ সুজন বলে দিয়েছেন যে— তার মতো দলে তো আরও ১০ জন খেলোয়াড় আছে। দায় তো সবারই রয়েছে। দর্শকরা অবশ্য এমন ব্যর্থতার পেছনে সাকিবকেই দায়ী করেছেন। ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানও দিয়েছেন তারা। সাকিব নিজেও স্বীকার করেছেন– তিনি এটা ডিজার্ভ করেন।

তবে পুরো বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনায় আনলে বিশ্বকাপজয়ী কপিল দেব, ইমরান খানদের সঙ্গে সাকিবের তুলনা অনেকে বাড়াবাড়ি বলবেন। তবে হোক না একটু বাড়াবাড়ি! রান ও উইকেটের বিচারে তো বাড়াবাড়ি করার মতোই পারফর্ম করে গেলেন সাকিব। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে ৩৬ ম্যাচ খেলে ৪১.৬২ গড়ে তিনি ১ হাজার ৩৩২ রান করেছেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল ৬ ব্যাটসম্যান। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ৪৩টি। বাঁ-হাতি স্পিনে তিনিই সেরা। সবমিলিয়ে তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন কেবল ১০ জন বোলার।

এমন রেকর্ড কোনো ব্যাটার বা বোলারের থাকলে তিনিই হয়ে উঠেন এক এবং অনন্য। তবে সাকিব সবজায়গায় রয়েছেন। সেটা ব্যাট হোক কিংবা বল, তবে নিজের রাজত্বের শেষ হয়েও যেন শেষ নয়। ওয়ানডে ফরম্যাটে অন্তত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত খেলার আশা সাকিবের। বিশ্বকাপে অন্তত ১ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার মতো ৩০ উইকেট নেই আর কারও। বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট শিকারি বোলারদের মধ্যে তাদের কারও ৭০০ রানও নেই।

২০২৭ সালের বিশ্বকাপে সাকিবকে দেখা যাবে কিনা সে আলোচনা এখন অনেক পরের। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তিনি জানিয়েছেন ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত খেলতে চান। সে কারণে পরবর্তী বিশ্বকাপে সাকিবের না থাকারই সম্ভাবনা বেশি।

এসএইচ/এএইচএস