অবিশ্বাস্য এক ইনিংসের পর এমন বাহবাতো ম্যাক্সওয়েলরই প্রাপ্য।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতিমানবীয় ইনিংসে প্রশংসায় ভাসছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। প্রায় হারতে বসা ম্যাচটিতে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসে দলকে এনে দেন অবিস্মরণীয় এক জয়। অজি এই অলরাউন্ডারের ইনিংসটি ইতোমধ্যে ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ইনিংসের তকমাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। ম্যাচশেষে এক প্রতিক্রিয়ায় ম্যাক্সওয়েল জানিয়েছেন, তার পুরো শরীর ব্যথা করছিল এবং তিনি প্রায় ম্যাচ ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। 

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে আফগানদের দেওয়া ২৯২ রান তাড়া করতে নেমে ৯১ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩৩ রানের মাথায় জীবন পান ম্যাক্সওয়েল। নুর আহমেদের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন মুজিব। পরে আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে তাণ্ডবলীলা চালান ম্যাক্সওয়েল।

প্যাট কামিন্সের সঙ্গে ৮ম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২০২ রানের জুটি গড়ে দলকে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার যখন ২৩ বলে ২১ রান, দ্বিশতকের জন্য ম্যাক্সওয়েলেরও প্রয়োজন ছিল ২১। মুজিবের টানা চার বলে ছক্কা-ছক্কা-চারে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অনেকগুলো মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। 

ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দিনে ম্যাক্সওয়েলের দৃঢ় মানসিক শক্তির গল্পটাও উঠে আসছে বারবার। এক পর্যায়ে পেশীর টানে তিনি মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দলের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে আবারও উঠে দাঁড়ান। ম্যাক্সওয়েল পরে স্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ফিজিও নিক জোনসের সঙ্গে তিনি রিটায়ার্ড হার্টের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ১৪৭ রানে যখন তিনি ক্রিজে ছিলেন ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য আরও ৫৫ রান বাকি ছিল। ম্যাক্সওয়েল ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাটিতে শুয়ে পড়েন।

কিন্তু সেমিফাইনালে খেলার বিষয়টি সামনে রেখে ম্যাক্সওয়েল আবারও উঠে দাঁড়ান। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখনই ত্রাতা হয়ে উপস্থিত হন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমে ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘এটি অবাক করা একটি ইনিংস। কারণ আমার শরীর কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিল না। পায়ের আঙ্গুলগুলো অসাড় হয়ে আসছিল। পাঁজর ও কাফ পেশীতে বারবার টান পড়ছিল। যে কারণে দুই পায়ের নীচের দিকে কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। ওই সময় বাম হ্যামস্ট্রিংয়েও টান পড়ে। এরপর শুরু হয় পিঠের ব্যাথা। যে কারণে মনে হচ্ছিল পুরো শরীরে ব্যাথা করছে।’

জোনস ম্যাক্সওয়েলকে ফিরে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল মনে করেছেন চিকিৎসা শেষে আবারও ক্রিজে ফিরে আসার সময় হয়তো তিনি আর পাবেন না। ৩৫ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘মাঠ থেকে চলে আসার বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। ভেবেছি চিকিৎসা শেষে আবারো ফিরে আসা যায় কি না। কিন্তু জোনস আমাকে বলেছেন একবার ফিরে গেলে সিড়ি ভেঙ্গে আবারো মাঠে ফিরে আসা আমার জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেই দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত থাকতে পারি থাকবো। কামিন্স আমাকে এসময় পরিপূর্ণ সহযোগিতা করেছে।’

ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংস ওয়ানডেতে সর্বকালের সেরা ইনিংস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কামিন্স। অজি অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে ম্যাচ শেষে যখন কথা বলেছি তখন একটি বিষয় সামনে এসেছে, এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আমরা ছিলাম। ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংসে আমিও তার সাথে ছিলাম, এটাই আমার জন্য সৌভাগ্যের। সে বারবার পেশীর টানে ভুগছিল, কিন্তু আমি দেখেছি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলাটা সে কতটা ভালবাসে।’

ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ইনিংসে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকারও। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি বলেছেন, ‘আমার জীবনে ওয়ানডেতে দেখা এটাই সেরা ইনিংস।’ 

এফআই