ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ উঠছে। যা বাদ যায়নি আজ (বুধবার) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া সেমিফাইনালেরও আগেও। আর মাত্র ঘণ্টা তিনেক পরই কিউইদের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে রোহিত শর্মার দল। তার আগে এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে— স্বাগতিকদের সুবিধা দিতে মুম্বাইয়ের পিচ বদলে ফেলা হয়েছে। এমনকি আইসিসির অনুমতি না নিয়েই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এই কাজ করেছে বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন বলছে, ‘ভারতীয় স্পিনারদের সুবিধা দিতে আলাদা পিচ বেছে নেওয়া হয়েছে। আইসিসির পিচ কনসালটেন্ট অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনের সঙ্গে বিসিসিআই একটি সম্মতিতে পৌঁছেছিল যে– ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালের জন্য আজ অব্যবহৃত একটি পিচ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই পিচের পরিবর্তে ইতোমধ্যে চলতি টুর্নামেন্টের দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া ২২ গজকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদমাধ্যমটি আরও একটি দাবি করেছে, সেমিফাইনাল জিতে ভারত ফাইনালে উঠতে পারলে ‘তারা একই কাজ করবে।’ অর্থাৎ রোহিত শর্মার দল ফাইনালে উঠলে উইকেট পাল্টানো হবে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ব্রিটেনের খ্যাতিমান ক্রীড়া সংবাদকর্মী, লেখক ও উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের সম্পাদক লরেন্স বুথ। আগামী রোববার (১৯ নভেম্বর) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল। এই মাঠে লিগ পর্বে অনুষ্ঠিত চার ম্যাচের তিনটিতে ভিন্ন ভিন্ন উইকেটে খেলা হয়েছে। এমনকি আজকের ম্যাচের জন্য মুম্বাইয়ের ৬ নম্বর পিচ ব্যবহারের বিষয়ে ভারতীয় বোর্ড ও আইসিসি হোয়াটস্যাপে মেসেজ আদান-প্রদান করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

এর আগে ওয়াংখেড়ের ৭ নম্বর পিচে ভারত-নিউজিল্যান্ডের আজকের ম্যাচটি আয়োজনের কথা ছিল। যেখানে এর আগে কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। বিপরীতে ৬ নম্বর পিচে বিশ্বকাপের রাউন্ড রবিন পর্বে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ খেলেছিল। সেই পিচে আজকের ম্যাচটিও আয়োজন চূড়ান্ত করছে বিসিসিআই। যদিও প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে– সেমিফাইনাল ম্যাচের উইকেট পাল্টানো নিয়ে অ্যাটকিনসনকে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

অ্যাটকিনসনের পাঠানো মেইলের কিছু অংশ প্রকাশ করেছে মেইল অনলাইন। সেখানে অ্যাটকিনসন সতর্কতার সুরে বলেছেন, ‘এসব কাজের কারণে অবশ্যই এটা ভাবার সুযোগ আছে যে এটাই কি প্রথম আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল, যেখানে পিচ বিশেষভাবে পছন্দ ও প্রস্তুত করা হয় টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা আয়োজক দেশের বোর্ডের উচ্চস্তরের অনুরোধে। কিংবা ব্যাপারটা কি এমন হবে যে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের কারও প্রতি সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন থেকে কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে (উইকেট) বাছাই ও প্রস্তুত করা হবে, কারণ উপলক্ষ্যের (ম্যাচ) জন্য এটাই আদর্শ পিচ?’

বিসিসিআইয়ের এক মুখপাত্র এ নিয়ে বলেছেন, ‘আইসিসির স্বাধীন পিচ কনসালট্যান্ট আয়োজকদের সঙ্গে এবং ভেন্যুতে পিচের প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছেন। আর এত দীর্ঘ পরিসরের একটি ইভেন্টে এটি চলমান প্রক্রিয়া।’

ফাইনালের প্রস্তুতি নিয়ে অ্যাটকিনসন আয়োজক দেশের বোর্ডের কাছ থেকে সরাসরি কোনো উত্তর না পাওয়ায় ধৈর্যহারা হয়ে গত শুক্রবার নিজেই আহমেদাবাদে গিয়েছিলেন। মেইল অনলাইন দাবি করেছে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড প্রথম ম্যাচটি পূর্বনির্ধারিত ৬ নম্বর উইকেটে অনুষ্ঠিত হলেও পরের তিনটি ম্যাচ পূর্বনির্ধারিত উইকেটে খেলা হয়নি বলে তারা জানতে পেরেছে। আর অ্যাটকিনসন এ নিয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো মেইলে জানিয়েছেন ‘যথাযথ প্রক্রিয়া কিংবা পূর্বসতর্কতা ছাড়াই’ এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অ্যাটকিনসনকে আইসিসির সিনিয়র ইভেন্টস ম্যানেজার জানিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তান (১৪ অক্টোবর) ম্যাচটি পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ৭ নম্বর উইকেটে খেলা হয়েছে। কিন্তু আসলে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ৫ নম্বর উইকেটে। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক দেশটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ফল কিংবা পরবর্তীতে কী ঘটে সেটাই এখন দেখার পালা!

এএইচএস