ভারতে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার ক্ষত এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে আছে ক্রিকেট ভক্তদের মনে। ৯ ম্যাচে মাত্র দুই জয় নিকট অতীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স। ২০০৩ সাল ছাড়া আর কোন বিশ্বকাপেই এত বাজে সময় পার করেনি টাইগাররা। আর এমন ব্যর্থতার দায়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরী করেছে বিসিবি। ক্রিকেট বোর্ডের তিন পরিচালকের এই কমিটি খুঁজে বের করবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ। 

কমিটিতে থাকার মধ্যে একজন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তি ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। দায়িত্ব পেয়ে গণমাধ্যমকে জানালেন দেশের ক্ষতি সহজভাবে নিবেন না তিনি। এমনকি সম্প্রতি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের মনোভাবকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আকরাম। 

নিজের দায়িত্ব প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে আমরা নিজের জন্য খেলি না বাংলাদেশের জন্য খেলি। বাংলাদেশ কিন্তু সবার। এখানে ব্যক্তিগত কোনো লাভের জন্য, হিংসার জন্য বা শয়তানির জন্য কেউ যদি দেশের ক্ষতি করে সেটা সহজভাবে নেওয়া উচিত না এবং আমি নিবও না। যেই সত্য জিনিসটা বের হবে আমরা তা বোর্ডকে দিব এবং আশা করি বোর্ড সেটা সিদ্ধান্ত নিবে।’

আকরাম আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ আসলে এমন একটা জায়গা আপনি ৭-৮টা সিরিজ জিতেন হারেন কোনো কিছু আসে যায় না। কিন্তু বিশ্বকাপে এত আকর্ষণ থাকে সেখানে আসলে দেশ কেমন খেলে সবকিছু ফুটে ওঠে। সে জায়গায় আমাদের ভালো করা উচিত ছিল। এই বিশ্বকাপের আগে ৪ বছর ধরে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসছিলাম। আমরা ভালো ত করিইনি আবার খারাপ করে এসেছি। যেটা আমাদের আশার মধ্যে ছিল না। কী কারণে খারাপ হয়েছে, কেন হয়েছে সেটা আমাদের বের করতে হবে।’ 

২০০৩ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছিল। সেবার মূল স্কোয়াডেই ছিলেন আকরাম খান। সেই আসরের পর তদন্ত কমিটি হলেও, সেখান থেকে আসেনি সিদ্ধান্ত। এই কথাও স্মরণে রেখেছেন আকরাম, ‘যেহেতু আমার মনে আছে ২০০৩ সালে আমি বিশ্বকাপে মাঝপথে গিয়েছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকা। তখনও বাংলাদেশ দল অত ভালো করেনি। শুরুতে কানাডার কাছে হেরেছিল। তখন তদন্ত ঠিকই হয়েছে তবে সিদ্ধান্তে যায়নি। এবার যেহেতু আমি আছি এবং আমাদের বোর্ড সভাপতি কিন্তু বলেছেন উনি কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিবে। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়।’

দল সম্পর্কে একাধিক খবর গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। অভিযোগ এসেছে কোচ নিয়েও। সেসব খবরের সত্যতা যাচাই করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন আকরাম খান, ‘যেগুলা নিউজ হয়েছে এটা সত্যি কিনা (সেটা আমরা দেখব), সত্য হলে কেন হয়েছে। এ ধরনের ত হওয়ার কথা না। আমার কাছে জুনিয়র ক্রিকেটার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কোচও গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে যাচাই করা হবে। সবার সাথে আলাপ হবে এরপর সিদ্ধান্ত নিব। যেই দোষী হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আকরামের ভাষ্যে, ‘বিশ্বকাপের জন্য যখন পরিকল্পনা করি আমি ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলাম। রাসেল (ডোমিঙ্গো) তখন আসছিল। আমরা বলেছি যেহেতু বিশ্বকাপ ভারতে আমাদের সম্ভাবনা ছিল। যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি সবচেয়ে বেশি ভালো করার সুযোগ ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। আমাদের কাছে যেই জিনিস মনে হবে, সাথে বাকি যেই দুইজন আছে তাদেরও ক্রিকেটজ্ঞান ভালো, উনারা অনেক সিনিয়র। যা খারাপ তা ত অবশ্যই বলব। যা করা উচিত ছিল না সবকিছু উল্লেখ থাকবে। ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল না হয় এই জিনিসটাও চিন্তায় রাখতে বলব। এসব বিষয় নিশ্চিত করব।’

কবে নাগাদ  কাজে আকরামরা, এমন প্রশ্নে কিছুটা ভরসাই জুগিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (কাজ শুরু করতে)। যার যা প্রয়োজন মনে করি সবাইকে দেশের স্বার্থে আসতে হবে এবং আসা উচিত যে যত ব্যস্তই থাকুক। আমরাও অনেক ব্যস্ত থাকি। যদি না আসে রিপোর্ট দেওয়া কঠিন। আমরা যদি দেশের জন্য কাজ করি সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে দেশের জন্য।’

তদন্তের ফলাফল কার্যকরে বদ্ধ পরিকর আকরাম, ‘সিদ্ধান্ত তো বোর্ডে আসবে। অবশ্যই এই রিপোর্ট যেন কার্যকর হয় তা আমি নিশ্চিত করব নাহলে এখানে আমার থাকার তো দরকার নেই। আমরা কাজ শেষ না করে কিন্তু শেষ করব। আমি অবশ্যই যা হয় বোর্ড সভাপতি আপনাদের বলবেন এটা আপনারাও জানতে পারবেন। সবকিছু যাচাই করব সত্য মিথ্যা যা আছে। যতটুকু পারি ১০০% যাচাই করব।’

এসএইচ/জেএ