সিলেটে প্রথম টেস্ট জিতলেও ঢাকা টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজয় বরণ করেছে বাংলাদেশ। যদিও ঢাকা টেস্টে জয়ের আশা জাগিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। তবে শেষ পর্যন্ত কিউই মিডল অর্ডার গ্লেন ফিলিপসের কাছেই স্বাগতিকদের আশাহত হতে হয়েছে। অথচ ব্যক্তিগত ১ রানেই ইনিংস থেমে যেতে পারত এই ব্যাটসম্যানের, স্লিপ থেকে তার ক্যাচ ফসকে গিয়েছিল অধিনায়ক শান্ত’র হাত থেকে।

তাই এমন পরাজয়ের কারণে আফসোস ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের। সদ্য সমাপ্ত দুই টেস্টের সিরিজ নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এই তারকা ক্রিকেটার। পুরো সিরিজে টাইগারদের পারফরম্যান্সে প্রাপ্তি কিংবা দুর্বলতা তিনি চিহ্নিত করেছেন প্রতিবেদক সাকিব শাওনের এই সাক্ষাৎকারে।

প্রশ্ন : কেমন দেখলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ?

আশরাফুল : এই সিরিজে দুর্ভাগ্য যে প্রথম টেস্ট জয়ের পরও আমরা সিরিজ জিততে পারিনি। সিরিজ জিততে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। ফিলিপসের ক্যাচটা যদি শান্ত নিতে পারত তাহলে ভিন্ন কিছু হলেও হতে পারত। আনলাকি বলতে হয়, তবে বিশ্বকাপে ওভারঅল বাজে পারফরম্যান্সের পরেও দুটি ভালো টেস্ট ম্যাচ খেললাম। রেজাল্টও ঠিকই আছে। প্রথম টেস্টে জয়ের পর শেষ টেস্টেও জয়ের মোমেন্টাম ছিল।

যথাক্রমে ৮৭ ও ৪০ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডের ম্যাচসেরা গ্লেন ফিলিপস

প্রশ্ন : জয়-জাকিরদের কেমন দেখলেন, তারা কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে?

আশরাফুল : ভালো, কিন্তু তরুণরা যারা আছে তারা করতে পারেনি। যা খেলছে দেখেন সিনিয়ররাই। চার ইনিংসে জয়-জাকির একটা করে ফিফটি করছে। এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করতে পারেনি। 

প্রশ্ন : আজ (চতুর্থ দিন) কি মিরপুরের উইকেট একটু বেশি কঠিন ছিল?

আশরাফুল : না, উইকেট বলতে– এখানে কঠিন হবে, আমরা সেটা জানি। আমাদের সুন্দর একটা সুযোগ ছিল ১৫০ রান করার। তৃতীয় দিন ৩০ রানের লিড ছিল, আজ (চতুর্থ দিন) ১২০ বা ১৪০ রান করলেই হতো। ব্যাটসম্যানরা কোন বলে কোন শট হবে এটা চিন্তা করেনি। অধিকাংশই শট সিলেকশনে ভুল করেছে। ফিলিপস কিন্তু রান করার জন্য স্কয়ার কাট বেছে নিয়েছিল। আমরা ওগুলো কিন্তু স্কুপ করতে গিয়ে আউট হয়েছি। আমাদের ব্যাটারদের শট সিলেকশনগুলো ভুল ছিল। 

প্রশ্ন : আজ (গতকাল শনিবার) কি মনে হয়েছিল, আরেকজন পেসার দরকার ছিল মিরপুর টেস্টে?

আশরাফুল : এদিন পেসার শরিফুল ইসলাম এত সুন্দর বোলিং করছে। তবে দেখেন তাকে মাত্র ৫ ওভার বোলিং দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যদি আরও বেশি বল করাতো, চা বিরতির আগে ২ ওভার বা চা বিরতির পরে আনত— তাহলে ব্রেক থ্রু আসতে পারত। পেসার মিস করা বলতে এখানে একজন পেসার খেলেছে, তাকেও ঠিকভাবে বলে দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন : শান্তর অধিনায়কত্ব কেমন দেখলেন, ঘাটতি আছে কোনো?

আশরাফুল : মাত্র নতুন দায়িত্ব পেয়েছে, যত অধিনায়কত্বে করবে তত শিখবে। আজকে ৬ উইকেট পড়ার পর পেসার আনার দরকার ছিল। তবুও সবমিলিয়ে ভালো বলব। তবে উন্নতির তো শেষ নেই, যত করবে তত শিখবে। 

প্রশ্ন : প্রায় বছর খানেক পর টেস্ট দলে ফিরে ব্যর্থ সোহান, এটি কিভাবে দেখেন...

আশরাফুল : সোহানকে মূলত উইকেটকিপার হিসেবে নিয়েছিল, যেহেতু সেখানে সে একশোতে একশো। চারটা ইনিংসেই অসাধারণ কিপিং করছে। ব্যাটিং তো কখনোই ওর এত ভালো ছিল না, এটা আমরা সবসময় জানি। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো ওর ব্যাটিংটা একদমই যায় না। ঘরোয়াতে হয়তো ভালো খেলে, কিন্তু আন্তর্জাতিকে তার ব্যাটিং সুন্দর লাগে না। কিপিংয়ে একশোতে একশো।

সিরিজ জয়ের হাতছানি থাকলেও, কিউইদের সঙ্গে ট্রফি ভাগাভাগি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে

প্রশ্ন : নতুন এই টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের পরবর্তী ম্যাচগুলোয় কেমন সুযোগ দেখছেন?

আশরাফুল : পরবর্তী টেস্ট ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। সে সময় সিনিয়র যারা আছে তারা ফিরবে। তাসকিন-লিটন। সাকিব ফিরবে কি না সেটা জানিনা। তবে লিটন খেলবে কি না, সে সময় আবার ছুটি নিবে কি না; না খেললে আরও খেলোয়াড় তো আছেই, তারাই খেলবে। ওরা তখন সুযোগ তো পাবেই।

প্রশ্ন : মুশফিকের সেই ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট নিয়ে আপনার মতামত কী?

আশরাফুল : এটা হয়ে গেছে আরকি। খেলার পরে এটা একটা স্টাইল করে পা সরানোর (হাত ছাড়া) মতো। এটা করে ও কনফিডেন্ট পায়, মনে হয় হুট করেই এটা হয়ে গেছে।

এসএইচ/এএইচএস