বুমরাহর বলটা ঠিকঠাক খেলতে পারলেন না ওলি পোপ। সরাসরি গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থেকে আউট হয়ে গেলেন। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের হতাশা তখন পোপের চোখেমুখে। তার সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের দারুণ ইনিংসও। ভারতীয় ফিল্ডাররা দৌড়ে এসে অভিবাদন জানাতে ভুললেন না। স্ট্যান্ডিং এভিয়েশন জানালেন গ্যালারিতে থাকা গুটিকয়েক ইংলিশ সমর্থকও। ড্রেসিংরুম ছেড়ে বাইরে এসে মুহুর্মুহু করতালি আর পিঠ চাপড়ে বরণ করে নিলেন সতীর্থ ক্রিকেটাররাও।

ব্যক্তিগত ডাবল সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকলেও ওলি পোপের ২৭৮ বলে ১৯৬ রানের এই ইনিংসটার মাহাত্ম অনেক। ব্যাট হাতে একাই স্বাগতিকদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ২৪৬ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস।

জবাবে ভারত নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৩৬ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করানোয় ১৯০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল বেন স্টোকস বাহিনী। এমন ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার প্রয়োজন ছিল কারও। দলের হয়ে ছিল সেই কাজটাই করলেন পোপ।

ভারতীয় বোলারদের বেশ ভুগিয়েছেন ওলি পোপ।

তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দলকে নেতৃত্ব দিলেন। অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও তাকে টলাতে পারলেন না ভারতীয় বোলাররা। আগের দিন তার সেঞ্চুরিতে লিড নিয়েছিল ইংল্যান্ড, আজ ৪ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করলেও তার দায়িত্বশীল ইনিংসের সুবাদে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড থেমেছে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪২০ রানে। হায়দরাবাদ টেস্টে ভারতের জয়ের লক্ষ্য ২৩১। এখনো দেড় দিনের খেলা বাকি আছে। 

ভারতে সফরের আগেই ওলি পোপ জানিয়েছিলেন, পিচ স্পিন সহায়ক হলে কোনো প্রকার অভিযোগই করবেন না তিনি। এরপর প্রথম ইনিংসে ভারতের স্পিনেই কাবু হয়েছিলেন ইংলিশ সহ-অধিনায়ক। তাতে তার দলও পড়েছিল বিপাকে। ভারতের মাটিতে ইংলিশদের ‘বাজবল’ কতটা সফল সেই প্রশ্নও তুলতে ছাড়েননি অনেকে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ওলি পোপই ইংলিশদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনেন।

১৯০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসের মতোই সাহসী শুরু ছিল দুই ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট এবং জ্যাক ক্রলির। তবে সেটা পেসের বিপক্ষে। স্পিনারদের বিপক্ষে সাবধানী ছিলেন দুজনই। অশ্বিনের বলে কপাল পুড়ে ক্রলির। বেন ডাকেটকে সঙ্গ দিতে নামেন পোপ। দুজনের জুটি লড়াই করেছে দারুণভাবে। ডাকেটের সাহসী ক্রিকেটের বদলে পোপ খেলছিলেন কিছুটা রয়ে সয়ে। 

বুমরাহর সুইংয়ে পরাস্ত হন ডাকেট। জো রুটও প্রথম ইনিংসের মতো ব্যর্থ হন। ফিরেছেন মাত্র ২ রান করে। জনি বেয়ারস্টো চেষ্টা করেছিলেন টিকে থাকতে। তবে রবীন্দ্র জাদেজার বলটা যেভাবে তাকে বোল্ড করেছে, সেটা অনেকটা দিন মনে রাখবে হায়দরাবাদে উপস্থিত হওয়া মানুষরা। স্টোকস আগের ইনিংসে নায়ক হলেও এবার পথ হড়কেছেন। বেয়ারস্টো করেছেন ১০ রান। স্টোকস ৬। এমন আসা যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন ওলি পোপ। স্পিন কিংবা পেস, সবক্ষেত্রেই নিজেকে সামাল দিয়েছেন দারুণভাবে। তবে বাজবলের তত্ত্বটাও ছেড়ে যাননি। সুযোগ পেলেই বল সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন। মাপা ইনিংসে বল হাওয়ায় ভাসাননি। তবে ১৭টি চার মেরেছেন পুরোটা সময়। 

তাকে লম্বা সময়ের জন্য সঙ্গ দিয়েছেন বেন ফোকস। দুজনের জুটি থেকে আসে ১১২ রান। তৃতীয় দিন (শনিবার) শেষে ১৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন পোপ। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের লিড তখন ছিল ৬ উইকেটে ১২৬ রান। আজ চতুর্থ দিনে রেহানকে নিয়ে দারুণ শুরু করেন পোপ। ৯৫ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। রেহান আহমেদ করেন ২৮ রান। এরপর পোপকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন অভিষিক্ত টম হার্টলেও। তরুণ এই স্পিনারের ব্যাট থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৩৪ রান।

দশম উইকেটে পোপের ডাবল সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা কেবল ৪ রান। এমন সময় কিছুটা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভারতকে উইকেট উপহার দিলেন পোপ। দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে বুমরাহর বলে কাটা পড়লেন তিনি। ২৭৮ বলের ইনিংসে পোপ মেরেছেন ২১টি চার। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বুমরাহ। ৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১২৬ রান খরচ করে ৩ উইকেট অশ্বিনের। ১৩১ রান দিয়ে ২ উইকেট জাদেজার।

এফআই