যুব বিশ্বকাপ শুরুর মাস খানেক আগেই যুব এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। তাই এবারের আসরে আশার পারদটা চূড়াতে ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খায় যুব টাইগাররা। ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে বড় হার আর সুপার সিক্সের অদ্ভুত নিয়মে সেমি ফাইনালের স্বপ্নে তখনই মরিচা ধরেছিল। এরপর টানা তিন জয়ে সেমির পালে হাওয়া দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তীরে এসে তরি ডুবেছে!

সুপার সিক্সে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ ওভার ১ বলে ছুঁতে পারলেই সেমি ফাইনালের টিকিট পেত বাংলাদেশ। তবে সর্বনাশ যা হওয়ার তা ব্যাটাররাই করেছেন! দ্রুত রান তুলতেই গিয়ে ১২৭ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

তখনই অনেকে ম্যাচের এপিটাফ লিখে ফেলেছিলেন! তবে দশম উইকেটে মারুফ মৃধাকে নিয়ে আবারও স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন রোহানাত দৌলা বর্ষণ। তবে তা কেবলই আফসোস বাড়িয়েছে, জয় আর পাওয়া হয়নি। দল ৫ রানে হারলেও বর্ষণের অপরাজিত ২১ রানের ইনিংস ছিল ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। একজন জেনুইন পেসার হয়ে চাপ নিয়ন্ত্রণ করে যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন সেটা উদাহরণ হতে পারে যে কারও জন্যই।

ব্যাট হাতে এমন ইনিংস খেলার আগে বল হাতেও ছিলেন দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার। ২৪ রানের বিনিময়ে শিকার করেছিলেন ৪ উইকেট। শুধুই এই ম্যাচ নয়, পুরো আসরেই দুর্দান্ত ছিলেন এই পেসার। সবমিলিয়ে ৪ ম্যাচ খেলে ৯ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বর্ষণ।

আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ষণ তার সেই ইনিংস নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে। সেই আলোচনার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: শেষ উইকেটে ২৯ রান প্রয়োজন ছিল, কোনো পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করছিলেন?

বর্ষণ: দল ৮ উইকেট হারানোর পর আমি উইকেটে যাই। ব্যাটিংয়ে গিয়ে তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল। তখন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না। ম্যাচের যে পরিস্থিতি ছিল, মনে হচ্ছিল এখনই হেরে গেছি। কিন্তু কিছুটা সময় যাওয়ার পর যখন ব্যাটে-বলে ভালো টাইমিং হচ্ছিল, রানের ব্যবধানও কিছুটা কমল, তখন মনে হয়েছে পারব। কিন্তু তারপরও তো আসলে হলো না।

প্রশ্ন: এই হারটা নিশ্চয়ই একটু বেশি কষ্ট দিয়েছে?

বর্ষণ: এমনভাবে ম্যাচটা হেরে গেলাম, রাতে ঘুমই হয়নি আমার। না হওয়াটাই আসলে স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: পাকিস্তানকে অল্প রানে আটকে রাখায় আপনার বড় ভূমিকা ছিল। প্রথম ইনিংস শেষে কী ভাবছিলেন?

বর্ষণ: যখন আমরা জানতে পারি সেমিফাইনালে যেতে আমাদের কোন ব্যবধানে জিততে হবে, তখন আমরা ওটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি। আর আমি ম্যাচের আগের রাত থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। যে আমাকে কিছু না কিছু করতে হবে। আমি কিছু করতে পারলে দলের জয় পেতে সহজ হবে। মনের মধ্যে এমন একটা লক্ষ্য ও সংকল্প নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। আল্লাহর রহমতে শুরুটা ভালো করেছিলাম। আমাদের প্রথম ইনিংস অনেক ভালো ছিলো। ৪ উইকেট পেয়ে আমারও ভালো লেগেছিল।

প্রশ্ন: যে লক্ষ্য নিয়ে আসর শুরু করেছিলেন তার কতটা পূরণ করতে পেরেছেন?

বর্ষণ: টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম, এটা অবশ্যই খারাপ লাগার। আমাদের সবারই লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিলাম। সেটা তো আর হলো না। এ কারণেই বেশি খারাপ লাগছে।

প্রশ্ন: পুরো দল নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

বর্ষণ: আমাদের সবাই অনেক ভালো খেলোয়াড়। আমরা সবাই একসঙ্গে অনেকদিন ধরে আছি। আমরা চমৎকার একটা বন্ডিংয়ের মধ্যে আছি। এখন সবার মনই একটু খারাপ। আশা করি সময়ের সঙ্গে এটা মানিয়ে নেবে সবাই। আমাদের দলের সবারই যোগ্যতা আছে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার। আমি দোয়া করি, সবাই যেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন: পরিবার থেকে দূরে আছেন, তাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে?

বর্ষণ: আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যারা আছে, তারা ছোট থেকেই আমাকে অনেক সাহায্য করছে। মানে আমি সবসময় তাদের সাপোর্ট পেয়েছি। অনেক সময় আমাকে বাড়ি থেকে বলা হয়েছে যে, পরীক্ষা দিতে হবে না তুমি খেলো। বুঝতেই পারছেন, কেমন সাপোর্ট পেয়েছি। ভালো-খারাপ সবসময় তারা আমার পাশে ছিল।

এসএইচ/এইচজেএস