চলতি বিপিএলে টানা চার জয়ে শুরুটা কী দুর্দান্তই না হয়েছিল খুলনা টাইগার্সের। অথচ এরপরের ৮ ম্যাচে জয় কেবল একটিতে। আসরে ১২ ম্যাচে ৫ জয়ে পয়েন্ট টেবিলে পাঁচে থেকে গ্রুপপর্বেই যাত্রা শেষ হয়েছে খুলনার। কেন এমন দারুণ শুরুর পরও খুলনার এ দশা? 

ওয়াসিম জুনিয়র, নেওয়াজ, দাসুন শানাকাদের মতো বিদেশি তারকারা বিপিএল ছাড়ার পর তাদের মানের বিকল্প কাউকে না পাওয়া এবং দেশি ক্রিকেটারদের ব্যর্থতাকে মোটা দাগে দেখছেন খুলনার হেড কোচ তালহা জুবায়েরঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন তিনি। 

ঢাকা পোস্ট : রাউন্ড রবিন লিগের শেষ দিনে আপনাদের মাঠে নামার আগেই বরিশালের প্লে অফ নিশ্চিত হয়ে যায়। তখনকার টিমের পরিস্থিতি কেমন ছিল, যেহেতু আপনাদেরও কিছুটা আশা টিকে ছিল।

তালহা জুবায়ের : কোয়ালিফায়ার বলতে যে ইকুয়েশনটা ছিল আসলে বরিশাল হারলেও কঠিনই হতো আমাদের জন্য। অনেক রান করতে হবে, একই দিনে দুইটা সাইডে একস্ট্রা অর্ডিনারি খেলতে হবে যা ক্রিকেটে খুবই মিরাকেল হতে হতো। এ কারণে চেষ্টা ছিল যাতে জিতে বাসায় যেতে পারি এটা একটা ভালো লাগার জায়গা হতে পারত। 

ঢাকা পোস্ট : শেষ ম্যাচটাও হারলেন কষ্টের পরিমাণ আরও বেশি কি না....

তালহা জুবায়ের : কষ্টতো অবশ্যই। যেভাবে শুরু করেছিলাম সেখান থেকে এভাবে শেষ করব কখনোই চিন্তা করিনি। প্রতিটি মাচ যখন হেরেছি, কষ্টের পরিমাণ কেবল বেড়েছে। শেষ মাচটাও ভাবছিলাম যে জিতে শেষ করতে পারলে একটু হয়তো ভালোলাগার জায়গাটা থাকবে। কিন্তু সেটাও আসলে হয়নি। শেষ বছর খুলনা মোটে ৩ টা ম্যাচ জিতেছিল। পুরো সিজন খারাপ খেললেও শেষ ম্যাচটা জিতেছিলাম প্রত্যেকটা ম্যাচ চেষ্টা করেছিলাম। সিলেট যেটা করেছে দেখেন তারা কিন্তু খুশি মনে বাসায় গেল, যেটা আমরা ভালো শুরু করে পারলাম না।  

ঢাকা পোস্ট : ভালো শুরুর পরেও ছন্দপতনের কারণ কী?

তালহা জুবায়ের : না সমস্যাটা দেখেন অনেক জায়গাতেই ছিল। আমাদের বিদেশি ক্রিকেটাররা আসা যাওয়ার মধ্যে ছিল যা থাকলে দলটা গোছানো কঠিন হয়ে যায়। যদি সঠিক রিপ্লেসমেন্ট না আনতে পারেন তাহলে সেখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যেটা মিস করেছি নেওয়াজ, ফাহিম ও ওয়াসিমকে। তারা সবাই পারফর্ম করেছে পরে এই কম্বিনেশন ভাঙার পরে এরকমভাবে দাঁড়াতে পারেনি। আমার লোকাল খেলোয়াড়রাও ভালোভাবে ক্লিক করতে পারেনি। এটা বড় সমস্যা বলতে পারেন।

ঢাকা পোস্ট : বিদেশিরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবে এটা আগেই জানা ছিল। তবে তাদের ব্যাক-আপ তৈরি করতে কতটা প্রস্তুত ছিলেন....

তালহা জুবায়ের : বাজেট সমস্যা ছিল না। আমরা সব নামিদামি ক্রিকেটার এনেছিলাম। তখন আসলে অ্যাভেইলেবল ছিল না। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করেছি বিদেশি কাকে আনব কে আসবে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক খেলোয়াড়কে ফোন করেছি। সিকান্দার রাজা, স্যাম বিলিংস এরা কনফার্ম ছিল। কিন্তু আইএল টি-টোয়েন্টিতে থাকায় আসতে পারেনি। পরে হেলস আর লুক উড আসল। শানাকা চলে গেল। এটাও ব্যাড লাক আসলে।

ঢাকা পোস্ট : এনামুল হক বিজয়ের অধিনায়কত্ব কেমন দেখলেন...

তালহা জুবায়ের : বিজয় যেভাবে চেষ্টা করেছে আসলে হয় কি অধিনায়ক যখন দল থেকে সাপোর্ট পায়। বিজয় কিন্তু প্রথম চার ম্যাচে যখন আমরা জিতছিলাম তখন তার খেলার ধরণটা একরকম ছিল। এরপর যখন হারা শুরু করলাম তার ওপর হয়তো দায়িত্বটা বেশি ছিল যে তার উইকেটে থাকতে হবে। না হলে হবে না। এটা কিন্তু সত্যি অনেক ম্যাচেই বিজয় আউট হয়ে গেলে আমাদের আর রান হয়নি। সিলেটের সাথে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটা দেখেন তখন স্ট্রাইকরেট কম ছিল পরে শেষে পূরণ করে ফেলল সোহানের সাথে। সেই ম্যাচে হ্যারি টেক্টরের ওই ক্যাচ যদি রুবেল নিতে পারত। অবশ্যই আফসোস রয়েছে, বরিশালের সাথে আফসোস রয়েছে। আফসোসের শেষ নেই আসলে। 

ঢাকা পোস্ট : নতুন বলে নাহিদুল বা নাসুমের কাছে যেমন প্রত্যাশা ছিল পেয়েছেন?

তালহা জুবায়ের : হ্যাঁ নাহিদের কথা বলতে পারেন। নাহিদের ইকোনোমি রেটটা ভালো ছিল। কিন্তু নাহিদের কাছ থেকে আরেকটু ভালোর প্রত্যাশা ছিল। আমি বলব না সে চেষ্টা করেনি। আমি খুবই হতাশ নাসুমের পারফরম্যান্স নিয়ে। নাসুমের কাছে আমরা যেটা আশা করেছিলাম পাইনি। দেখেন নাসুম কিন্তু উইকেটটেকার বোলার। নতুন বলে বল করে, হয়কি আপনি তো ব্যাটার না যে তিনেই ব্যাট করাতে হবে কিংবা পাঁচে করেন ওখানে পাঁচেই করবেন। বা সাতে খেলালে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু একজন বোলার হিসেবে দল আপনাকে যেখানে চাইবে আপনাকে কিন্তু সেখানে বল করার সামর্থ্য থাকতে হবে। প্রস্তুত থাকতে হবে, আমি নাসুম থেকে যেটা আশা করেছি সেটি পাইনি। আমরা ওই জায়গায় অনেকটা পিছিয়ে গেছি। নাসুমের মতো বোলার যদি বিপক্ষ দলের ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে তাহলে বিপক্ষ দলের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। 

ঢাকা পোস্ট :সেরা উইকেট তালিকায় দশেও আপনার দলের কোনো বোলার নেই...

তালহা জুবায়ের :  আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে আমার একটা বোলারেরও দশটা উইকেট নেই। বিজয় আফিফ ছাড়া কারোর ২০০ রান নেই। আফিফের মতো খেলোয়াড়ের একটা ফিফটি। লুইসের ২০০ রান, সে একটা ম্যাচ জিতিয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : পারভেজ ইমন, আকবর কিংবা জয়দের নিয়ে কি বলবেন...

তালহা জুবায়ের : আকবরকে দুই ম্যাচে খেলালাম। তার কাছে আশা করলাম যে সে পারবে কিন্তু হলো না। তবে দেখেন দুই ম্যাচ একটা খেলোয়াড়ের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা হারের মধ্যে যেমন ছিলাম যে কারণে আকবরকে খুব বেশি সুযোগ দিতে পারিনি। ইমনকে নিয়ে বলব সে চেষ্টা করেছে তিন-চারটা ম্যাচে। আরও সুযোগ পেলে ভালো করতো, আমি খুশি। জয়কে নিয়ে আমি খুশি না, তাকে অনেক জায়গায় খেলিয়েছি, ভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছি। তাকে অনেক ম্যাচে সুযোগ দিয়েছি যেটা হয়তো আমি আশা করেছি। তার কাছে আশা সে ইনিংসকে লম্বা করবে উইকেট ধরে রাখবে, জয়ও ম্যাক্সিমাম সময় উইকেট দিয়ে আসছে। আমার দলের পরিকল্পনা ছিল উইকেট গিফট করব না। প্রায় উইকেট সেই উইকেট আমরা দিয়ে আসছি। শুরুতে শেষে উইকেট দিতে পারেন কিন্তু মিডলে উইকেট দিতে পারেন না। যেখানেও অনেক গিফট করেছি উইকেট।

 

ঢাকা পোস্ট : জাকের আলি বা তানজিদ তামিমরা টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ না পাওয়ায় অনেক কথা হচ্ছে, আপনার মত কি...

তালহা জুবায়ের : দেখেন তানজিদ তামিম তো বিশ্বকাপ খেলল। ওয়ানডে দলে আছে। তবে জাকেরের কথা যদি বলেন তার দলে সুযোগ পাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। সালাউদ্দিন ভাই যে কথাটা বলছে তাকে আমরা সুযোগটা দেই না। কিংবা তার পারফর্মম্যান্স আমাদের চোখে পড়ে না, এটা কিন্তু সত্যি। তাকে যেখানেই পাঠান আপনি তিনে, নিচে পাঠান, মাঝখানে পাঠান। অবস্থা যেরকম থাকে জাকের সেভাবেই খেলতে থাকে। ওর এই ট্যালেন্টটা আমার মনে হয় আমরা নষ্ট করছি জাতীয় দলে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিন্তু সহজ না আপনার সেখানে সময় লাগবে। ওর মতো খেলোয়াড়কে তার পিক সময়ে নেওয়া উচিত।

ঢাকা পোস্ট : প্রথমবার প্রধান কোচ ছিলেন কেমন উপভোগ করলেন...

তালহা জুবায়ের : মিশ্র অনুভূতি বলব। শুরুটা খুবই চমৎকার ছিল এতটাও আশা করিনি যে এভাবে শুরু করতে পারব। তবে আশা ছিল তরুণ দল আমার ব্যালেন্স দল। সবাই ভালো করলে কিছু করা সম্ভব। টানা চার ম্যাচ জিতেছি এরপর টানা হার। এতটাও খারাপ হবে ভাবিনি। আমার লক্ষ্য ছিল আগে কোয়ালিফায়ার করা এরপর বাকিটা....তবে হয়নি। অনেক কিছু শিখছি, জানছি। টিম মিটিং বিদেশি বা দেশি ক্রিকেটার হ্যান্ডেল করা। ডিসিপ্লিন খুব ভালো ছিল, আমার কমান্ড সবাই শুনেছে ভালোভাবেই। 

ঢাকা পোস্ট : পরবর্তী বিপিএলে খুলনার সাথেই থাকবেন ?

তালহা জুবায়ের :  টিম মালিক ইকবাল ভাই বলেছেন যে পরের বছরও আমাকে রাখতে চান। এখন সামনের বছর তো অনেক দেরি আছে দেখা যাক কি হয়।

এসএইচ/এফআই