নাজমুল হোসেন শান্ত এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত এক নাম। সাম্প্রতিক সময়ে বিপিএল ও জাতীয় দলের হয়ে সেভাবে আশানুরূপ রান পাচ্ছিলেন না টাইগারদের তিন ফরম্যাটের এই অধিনায়ক। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান সিরিজের একটি টি-টোয়েন্টিতে জয় এসেছিল তার ফিফটিতে। এবার তার অপরাজিত ১২২ রানে ভর করে প্রথম ওয়ানডেতেও জয় এসেছে।

অথচ এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা বা ট্রল হয়েছে বাঁ–হাতি এই তারকা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। সেই পরিস্থিতি বদলাতে তিনি নিজে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি ভূমিকা ছিল টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টেরও। বিশেষ করে ২০২০–২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হওয়া নানা ব্যক্তি আক্রমণকে পাশ কাটিয়ে গেল বছর ব্যাট হাতে রানের পসরা সাজিয়েছিলেন শান্ত। আর এই পুরো সময়ে তিনি নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছিলেন।

যদিও সেই নির্বাচক প্যানেলের দুই সদস্য মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং হাবিবুল বাশার সুমন এখন দায়িত্বে নেই। তবুও শান্তর এমন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে খুব খুশি সাবেক নির্বাচক বাশার। যা নিয়ে বর্তমানে নারী ক্রিকেটের এই প্রধান কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক হওয়ার পর গতকাল প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন শান্ত। বিষয়টি নিয়ে বাশার বলেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার পর এমন ইনিংসে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শান্ত এরকমই, আরও ভালো খেলতে পারবে সে। তবে শান্ত ভালো করে দেখে ভালো লেগেছে।’

অনেক সময় দেখা গেছে রান না পাওয়ার পরেও শান্তকে দলে রেখেছিলেন নির্বাচকরা। যখন ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে পারেননি, তখন কিছুটা দায় এসে পড়ত নির্বাচকদের ওপরও। আবার ভালো করলেও সেভাবে কৃতজ্ঞতা পেতেন না নির্বাচকরা। যে কারণে একটু আফসোস রয়েছে বাশারের, ‘শুধু শান্ত’র ব্যাপারেই না, সব বিষয়েই আমরা প্রোপার সম্মানটা পাইনি। ভালো করলে কেউ আমাদের স্মরণ করেনি, তবে খারাপ করলে সবসময় মনে করেছে।’

বাশারের মনে হয়েছে অনেক অবিচার হয়েছে তাদের সঙ্গে, তবে কখনও ক্রেডিটও চাননি। জানালেন– শান্তরা ভালো খেললেই ভালো লাগে তার, ‘আনফেয়ারও হয়েছে কিছুটা, অনেক সময় অনেক আনফেয়ার হয়েছে। ওরা যদি ভালো খেলে তাতেই খুশি, আমাদের ক্রেডিট দরকার নাই, আমরা কখনও ক্রেডিট চাইনি। ওরা ভালো খেললেই ভালো লাগে।’

আক্ষেপের সুরে আবার বাশার স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘আমাদের নিয়ে আশা করি এখন কথা বন্ধ হবে, কেননা আমরা আর নাই। এই দুই ম্যাচ পর মুক্তি পাব। এই দুইটা ম্যাচ পর আমাদের নিয়ে কেউ কথা বলবে না যে এই টিমটা আমরা করেছি। আজকে (গতকাল বুধবার) হারলেও সবাই বলত যে টিমটা আমরা করেছি।’

শান্তকে সেই ছোট থেকেই দেখে আসছেন বাশার। যে কারণে তার প্রতি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। তাই ভালো করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না, ‘শান্ত যে এরকম খেলতে পারে আমরা জানি। আমাদের জন্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমার জন্যও নয়। তাকে একদম ছোট থেকেই দেখে আসছি। যে কারণে আমাকে অবাক করেনি। আমরা ওর কাজটা প্রথমদিকে কঠিন করে দিয়েছিলাম, এখনও ওর কাজটা কঠিন করছি।’

বিসিবির সাবেক দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু

বাশারের চাওয়া জাজমেন্টাল না হয়ে ক্রিকেটারদের প্রতি আরেকটু সাপোর্টিভ হওয়া দরকার, ‘শেষ টি-টোয়েন্টি হারের পরও কথা হয়েছে তাকে নিয়ে। এটা হয়তো কোনোদিনই থামবে না। আজকে সেঞ্চুরি করায় প্রশংসা হলো, পরের দুইটা ম্যাচে খারাপ করলে আবার যা তাই...আমরা আসলে খেলোয়াড়দের কাজটা নিজেরাই কঠিন করে দিই। একটু জাজমেন্টাল না হয়ে সাপোর্টিভ হওয়া উচিৎ। শুধু শান্ত না, সবার ব্যাপারেই সাপোর্টিভ হওয়া উচিৎ। কথা হবে স্বাভাবিক, খারাপ করলে অবশ্যই সমালোচনা করব।’

চলমান ওয়ানডে দলের স্কোয়াড প্রস্তুত করেছিলেন নান্নু–বাশারদের গত নির্বাচক প্যানেল। নির্বাচক হিসেবে এটাই তাদের শেষ দল বাছাই ছিল। তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে সমালোচনা হতো, তিনি আশা করছেন এবার সেগুলো বন্ধ হবে। একইসঙ্গে আক্ষেপের সুরে আবার বাশার স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘আমাদের নিয়ে আশা করি কথা বন্ধ হবে, কেননা আমরা আর নাই। এই দুই ম্যাচ পর মুক্তি পাব। এই দুইটা ম্যাচ পর আমাদের নিয়ে কেউ কথা বলবে না যে এই টিমটা আমরা করেছি। আজকে হারলেও সবাই বলত যে টিমটা আমরা করেছি।’

নান্নু-বাশারদের নিয়ে যত সমালোচনা হয় তাতে করে প্রশ্ন থেকে যায় তারা কি এতটাও ডিজার্ভ করেন! কেননা এই জুটির হাত ধরেই এসেছে বড় বড় সব সিরিজ জয়, বড় বড় অধিকাংশ ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশ!

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ পান নান্নু। ২০১৬ সালে তাকে করা হয় প্রধান নির্বাচক, তখন নির্বাচক কমিটিতে ঢোকেন হাবিবুল বাশাররা। এরপর থেকে তারা টানা দায়িত্ব পালন করছিলেন। সর্বশেষ বিশ্বকাপের পর ডিসেম্বরে বিসিবির সঙ্গে তাদের চুক্তির মেয়াদ ফুরোয়। এরপর নান্নু-বাশাররা আবারও নির্বাচক কমিটিতে থাকবেন কি না এমন দোলাচলের মাঝে ফেব্রুয়ারিতে আসে পরিবর্তন। নতুন প্রধান নির্বাচক করা হয় সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। বাশারের জায়গায় বসানো হয় হান্নান সরকারকে এবং আগের কমিটির আব্দুর রাজ্জাককে করা হয় পুনর্বহাল।

এসএইচ/এএইচএস