বিশ্ব ক্রিকেটে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হিসেবে পরিচিতি আছে পাকিস্তানের। কখনো জেতা ম্যাচ যেমন হেরে বসে থাকে, আবার নিশ্চিত হারের ম্যাচেও অবিশ্বাস্যভাবে জিতে যায় কখনো কখনো। ক্রিকেটারদের মতো দেশটির ক্রিকেট বোর্ডেও কখন কী হয় কেউ জানে না। পিসিবির খোদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে নির্বাচক কিংবা কোচ কারও পদই টেকসই বলা যায় না। গেল কয়েক মাসের কথাই ধরা যাক, বারবার রদবদল এসেছে পিসিবির বিভিন্ন পদে। 

ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাবর । ওয়ানডে ও টেস্টে শান মাসুদ এবং টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। কিন্তু কয়েক মাসেই নাকি মোহভঙ্গ হয়েছে! আবারও নাকি বাবরেই ভরসা রাখতে চাইছে পিসিবি। ক্রিকেট পাকিস্তানসহ দেশটির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের এমনই দাবি। 

গত বছর ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপে বাবরের নেতৃত্বেই খেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু খারাপ পারফরম্যান্সের জেরে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে যায় ম্যান ইন গ্রিনরা। সমর্থক তথা বোর্ডের তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় তাকে। এরপরই জাতীয় দলে সব ধরনের ফরম্যাটে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বাবর। ফলে নতুন অধিনায়কের খোঁজ শুরু করে পিসিবি। ঠিক হয়, টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেবেন মাসুদ। টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয় তারকা পেসার শাহিন আফ্রিদিকে। এবার শোনা যাচ্ছে, গত কয়েকটি ম্যাচের পারফরম্যান্সের পর বোর্ড বুঝতে পেরেছে, নেতা হিসেবে বাকিদের থেকে এগিয়ে বাবরই।

জাকা আশরাফ বোর্ড চেয়ারম্যান থাকাকালীন কার্যত বাধ্য হয়েই নেতৃত্ব ছাড়তে হয়েছিল বাবরকে। শোনা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান বদলের পর থেকেই নতুন করে বাবরের নাম ওঠে এসেছে। তবে গুঞ্জন ছিল উইকেটকিপার ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়েও। যদিও প্রাথমিকভাবে বাবরের দিকেই সবার নজর। 

অবশ্য এ নিয়ে বাবরের তরফে এখনও ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া যায়নি বলেই খবর। কয়েক জায়গায় দাবি করা হচ্ছে, আবারও নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে তৈরি কি না, তা জানতে চাওয়ায় বাবর নাকি আপাতত নিজের সিদ্ধান্তের কথা বলতে চাননি। ধারণা করা হচ্ছে, বোর্ডের তরফ থেকে তিনি একাধিক বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইছেন। শর্ত পূরণ হলে তবেই আবার অধিনায়কত্ব গ্রহণ করতে পারেন বাবর।

শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানের ক্রিকেট সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তের জন্য সাবেকদের পরামর্শ নিচ্ছেন পিসিবির বর্তমান চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। সেই সূত্রেই নাকি আবারও অধিনায়ক হিসেবে ওঠে এসেছে বাবর আজমের নাম। অবশ্য পাকিস্তানের নেতৃত্বে বাবর এলে নতুন করে সমস্যা বাড়তেও পারে।

সম্প্রতি অবসর ভাঙার ঘোষণা দিয়েছেন পাক অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম ও পেসার মোহাম্মদ আমির। এরই মধ্যে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে ২৯ সদস্যের অনুশীলন ক্যাম্পেও রাখা হয়েছে তাদের। এ দুজনের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক নয় বাবরের। সেক্ষেত্রে কেমন কি হতে পারে তা নিয়েও হয়তো ভাবনাচিন্তা চলতে পারে।

২০১৯ সালে পাকিস্তানের অধিনায়ক হয়েছিলেন বাবর। সেবার সীমিত ওভারের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। পরের বছর দায়িত্ব পান টেস্টেও। জনপ্রিয়তার দিক থেকে ওপরে উঠলেও বাবর নেতৃত্বের দিক থেকে তেমন বড় কোনো সাফল্য পাননি। ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলা এবং গত বছর ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে ওঠাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ অর্জন। 

যদিও বিশ্বকাপে বাদ পড়া, এশিয়া কাপের সুপার ফোর থেকে বাদ পড়া কিংবা দলে বন্ধুদের প্রাধান্য দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ বারবারই সঙ্গী হয়েছে তার। অবশ্য বাবরকে বাদ দিয়েও পাকিস্তান ক্রিকেটে রাতারাতি কোনো সাফল্য আসেনি। বাবর অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর দুটি সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ হেরেছে ৩–০ ব্যবধানে, আর নিউজিল্যান্ডে টি–টোয়েন্টি সিরিজে হার ৪–১ ব্যবধানে।

এফআই