২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া জনপ্রিয় ফ্র‌্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সপ্তদশ আসর চলছে। এই আসরেও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলছেন অভিজ্ঞ স্পিন অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রায় প্রতিটি আসর খেললেও, তিনি এবার আইপিএলের বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী এক অভিযোগ তুলেছেন। নির্দিষ্ট দলের প্রচারণার বাইরেও যেখানে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের পেছনে অনেক সময় ব্যয় হয় ক্রিকেটারদের।

সবকিছুর মাঝে ক্রিকেটটা গৌণ হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য অশ্বিনের। ‘ক্লাব প্রেইরি ফায়ার’ নামে এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে ভারতীয় এই তারকা বলেন, ‘আমি যখন প্রথম আইপিএল খেলতে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের কাছে অনেক কিছু শিখতে পারব। আমি তখনও জানতাম না আইপিএল ১০ বছর পরে কোথায় যাবে, এত বছর ধরে খেলছি। আইপিএল বিশাল বড় প্রতিযোগিতা। ক্রিকেটের পাশাপাশি এখানে আরও অনেক কিছু আছে।’

এরপরই চমকপ্রদ সেই মন্তব্য করেন রাজস্থানের গুরুত্বপূর্ণ এই ক্রিকেটার, ‘মাঝেমধ্যে আমি ভাবি, আইপিএল কি আদৌ কোনো ক্রিকেট? কারণ এখানে (আইপিএল চলাকালে) স্পোর্টসটা থাকে ব্যাকস্টেজ হিসেবে, অর্থাৎ ক্রিকেটকে সবার শেষে রাখা হয়। এটি বিশাল আয়োজন। এমনও সময় গেছে যখন আমরা বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ের মাঝে অনুশীলন করেছি। মাঠে অনুশীলনের সময়ই পাইনি।’

কিছুদিন আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন অশ্বিন। বর্তমানে সাদা পোশাকেই কেবল তাকে ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা যায়। এর আগে ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। পরবর্তীতে বেশকিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ঘুরে থিতু হয়েছেন রাজস্থানে। একই সময়ে আইপিএল থেকে ভারতের সব ফরম্যাটের দলেও জায়গা পান অশ্বিন। আইপিএল বর্তমানের এই অবস্থানে আসতে পারবে বলে কেউ ধারণা করেনি বলে পডকাস্ট অনুষ্ঠানটিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

অশ্বিন বলেন, ‘আইপিএলের যে ধরনের উন্নতি হয়েছে, তা কেউ কল্পনা করেনি। আমার এখনও মনে আছে, স্কট স্টাইরিসের (নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার) সঙ্গে আমার একবার কথা হচ্ছিল, তখন আমরা দুজনই চেন্নাই সুপার কিংসে ছিলাম। সে আমাকে বলেছিল, আইপিএলের শুরুর দিকে ডেকান চার্জার্সের হয়ে খেলার সময় সে ভাবেওনি যে আইপিএল দুই-তিন বছরের বেশি চলবে। প্রথম দিকে প্রচুর অর্থের প্রবাহ ছিল।’

আইপিএলের জনপ্রিয়তার পেছনে বড় অঙ্কের অর্থও বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ২০২২ সালে পাঁচ বছরের জন্য আইপিএলের টিভি ও ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রি হয় ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে। এতে প্রতি ম্যাচের মূল্য দাঁড়ায় ১১৮ কোটি ২ লাখ রুপি। সব ধরনের খেলায় ম্যাচপ্রতি মূল্যের দিক থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এনবিএ, মেজর লিগ বেসবলকেও ছাড়িয়ে যায় আইপিএল। এর সামনে এখন আছে কেবল এনএফএল।

ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে গতকাল ১৯ বলে ২৯ রান করেন অশ্বিন

আইপিএলের বেশকিছু ইতিবাচক দিকও উল্লেখ করেছেন অশ্বিন, ‘বছরের পর পর আইপিএলের নিলাম বিশাল আকার ধারণ করছে। আমি মনে করি পুরো টুর্নামেন্টের জন্য নিলাম গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবে আইপিএলের সৌর্ন্দয্য হচ্ছে এখানে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির তার দলের স্বত্ব রয়েছে। এখানে বিড়ালের চামড়া তোলার (রূপক অর্থে) একাধিক উপায় আছে। কোনো ক্রিকেটার দলের চেয়ে বড় নয়, কোনো স্লটে একজনই কেবল প্রাধান্য পায় না। এক্ষেত্রে দলগুলো খুব ভেবেচিন্তে অর্থ খরচ করে।’

এএইচএস