আইপিএলের প্রতিটি বল করার জন্য মিচেল স্টার্ক পাচ্ছেন প্রায় ৭ লাখ রুপি। ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগটির ইতিহাসে সবচেয়ে দামি এই খেলোয়াড়কে দলে নিতে কলকাতা নাইট রাইডার্স খরচ করেছে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রূপি। আবার প্যাট কামিন্স এবং ট্রাভিস হেডের মতো দুই তারকাকে আনতেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের খরচ হয়েছিল প্রায় ২৭ কোটি রূপির বেশি। 

তবে বিষ্ময়কর ব্যাপার, এমন বড় অঙ্কের খরচের পরেও আইপিএলের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজকেই এখন পর্যন্ত আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। বরং প্রতিবছরই পকেট ফুলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজ মালিকদের। কখনো শিরোপার দেখা না পাওয়া রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কিংবা পাঞ্জাব কিংসের ব্র্যান্ডভ্যালুও বেড়েছে প্রতি বছরই। 

আইপিএলের দলগুলোর এত বিপুল আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস টিভি সম্প্রচারসত্ত্ব বিক্রি। অনলাইন স্ট্রিমিং ও বিজ্ঞাপনী স্লট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থও যুক্ত হয় এই খাতে। সেই খাত থেকে আয়কৃত অর্থ  প্রতি মৌসুমেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে ৫% হারে বন্টন করে বিসিসিআই। ২০১৭ সালে ১৬ হাজার ৩৪৭ কোটি রূপিতে বিক্রি হয়েছিল আইপিএলের টিভিস্বত্ত্ব। আর ২০২২ সালে পরের পাঁচ বছরের জন্য তা বিক্রি হয় ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি রূপিতে।  

গত ১৭ বছরে আইপিএলের জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্র্যান্ডভ্যালুও। তাই টাইটেল স্পন্সর হওয়ার দৌড়ে বিশাল অর্থ নিয়েই নামে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো। গত জানুয়ারি মাসে ২৫ হাজার কোটি রূপিতে পরের ৪ বছরের জন্য আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর হয়েছে টাটা গ্রুপ। প্রতি আসরে আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর বিক্রির অর্থের ৫০ ভাগ পায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। স্বাভবিকভাবেই এবারেও বড় অঙ্কের অর্থ এখান থেকেই পাচ্ছে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো।  

এছাড়া অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে যুক্ত হওয়া ব্র্যান্ডগুলোও বড় অংকের অর্থের যোগান দেয় আইপিএলে। অফিসিয়াল পার্টনারদের লোগো দেখা যায় বাউন্ডারি লাইনের ডিজিটাল বোর্ড কিংবা বাউন্ডারি কুশনে। এমনকি স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটেও নিজেদের প্রচারণা চালায় ব্র্যান্ডগুলো।

এছাড়া আইপিএলের দলগুলোর জার্সি ও প্র্যাক্টিস কিটে দেখা যায় নতুন স্পন্সরের নাম। ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থেকে মৌসুমপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ কোটি রুপি আয় করে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। যা মোট আয়ের ৩০ শতাংশ। 

ম্যাচের টিকেট বিক্রি থেকেও আয় করে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০১৯ আইপিএলের হিসাব অনুযায়ী ম্যাচ প্রতি গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। তার ৮০ ভাগ পায় হোম টিম, বাকি ২০ ভাগ পায় গ্রাউন্ডস কমিটি ও আইপিএল গভর্নিং বডি। মৌসুম প্রতি ২৫-২৮ কোটি রুপি আয় হয় টিকিট বিক্রি করে। 

এসবের বাইরে প্রতি মৌসুমেই দলের জার্সি ও প্র্যাক্টিস কিটের রেপ্লিকা, রিস্ট ব্যান্ড, ঘড়িসহ আনুষাঙ্গিক নানান জিনিস বিক্রি করে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এই মার্চেন্ডাইজিং একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি মৌসুমের ৫-১০ ভাগ আয়ের যোগান দেয়। সাথে স্টেডিয়ামে দর্শকদের খাবার ও পানীয়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে থার্ড পার্টির মাধ্যমে খাবারের স্টল ভাড়া দেয় হোম টিম। সেখান থেকেও আয় করে প্রতিটি দল।

হিন্দুস্থান টাইমসের এক প্রতিবেদন জানায়, ২০১৮ আইপিএল থেকে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি কমপক্ষে ৭৫ কোটি রুপি লাভ করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির লাভের অংক ছাড়িয়েছে শত কোটি রুপির ঘর। 

জেএ