চলতি আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ মানেই যেন এক অলিখিত রীতি– রান করবেন বিরাট কোহলি, কিন্তু হারবে দল। ভারতীয় এই তারকার সেঞ্চুরির জবাব আরেকটি সেঞ্চুরিতে দিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনার জস বাটলার। তাও সেই ম্যাজিক ফিগার এলো নাটকীয়ভাবে। দু’দলের স্কোর তখন সমান, জয় পেতে রাজস্থানের দরকার ১ রান, সেঞ্চুরির জন্য বাটলারের প্রয়োজন ৬। ক্যামেরন গ্রিনের বলকে পুল শটে উড়িয়ে দুটোই মিলিয়ে নিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।    

জয়পুরের সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে গতকাল (শনিবার) বেঙ্গালুরুকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান স্বাগতিক রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। কোহলির সেঞ্চুরিতে সফরকারীরা নির্ধারিত ওভারে ৩ উইকেটে ১৮৩ রান তোলে। যা ৪ উইকেটে ১৯.১ ওভারে পেরিয়েছে রাজস্থান। ৬ উইকেটের বড় জয়ের পর পিঙ্ক জার্সিধারীরা এ নিয়ে চার ম্যাচের সবকটির ফলই নিজেদের দখলে নিয়ে গেল। অন্যদিকে, এদিন হ্যাটট্রিক হারের কীর্তি গড়ে ফাফ ডু প্লেসির বেঙ্গালুরু। সবমিলিয়ে পাঁচ ম্যাচে তাদের জয় কেবল একটি।

কোহলি ও বাটলারের দুটি সেঞ্চুরিই চলতি আইপিএলের প্রথম। তাও আবার এমন দুটি ইনিংসই দেখা গেল একই ম্যাচে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে দুই মাস মাঠের বাইরে ছিলেন কোহলি। এরপর আইপিএলে ফিরেই একের পর এক বড় রানের ইনিংস খেলছেন। দল সেভাবে সাফল্য না পেলেও, চলতি আইপিএলে তিনিই সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। অন্যদিকে, আইপিএলে শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান বাটলার। ২০২২ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে নিজের একশতম ম্যাচে অপরাজিত ১০৩ রান করেছিলেন লখনৌ সুপার জায়ান্টসের লোকেশ রাহুল।

তবে একই সেঞ্চুরিতে সমালোচনাও সইতে হচ্ছে কোহলিকে। ৬৭ বলের এই সেঞ্চুরি যে আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি। ২০০৯ সালে সবশেষ ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন মনীশ পান্ডে। ৬৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনজন। ২০১১ সালে শচীন টেন্ডুলকার, ২০১০ সালে ডেভিড ওয়ার্নার এবং ২০২২ সালে জশ বাটলার তিন অঙ্কে যেতে খেলেছিলেন ৬৬ বল। বেঙ্গালুরু-রাজস্থানের ম্যাচে সফরকারীদের হয়ে কোহলি ছাড়া কেবল রান পেয়েছেন অধিনায়ক ডু প্লেসি। ৩৩ বলে ৪৪ রানে ফেরেন তিনি।

এছাড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এদিনও যথারীতি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আগের ডাক পাওয়া এই অস্ট্রেলিয়ান মারকুটে ব্যাটার এদিন ফেরেন মাত্র ১ রানে। দ্রুতই ফিরেছেন স্থানীয় ব্যাটার সৌরভ চৌহানও (৬ বলে ৯)। কোহলি শেষ পর্যন্ত ৭২ বলে ১২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। আরেক অপরাজিত ব্যাটার গ্রিন করেন ৫ রান। রাজস্থানের হয়ে সফলতম বোলার যুজভেন্দ্র চাহাল ৩৪ রানে ২ উইকেট নেন, এছাড়া ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে বেঙ্গালুরুর লাগাম টানা নান্দ্রে বার্গার ৩৩ রানে নেন ১ উইকেট।

১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালকে হারায় রাজস্থান। সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দুর্দান্ত রানের ফোয়ারা ছোটানো এই তরুণ এবারের আইপিএলে এখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে শুরুর ধাক্কা সামলে স্বাগতিকদের পক্ষে একপেশে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন বাটলার এবং সঞ্জু স্যামসনের জুটি। তাদের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১৪৮ রান। ৪২ বলে ৮টি চার এবং ২টি ছয়ের ৬৯ রানে ফেরেন স্যামসন। তবে ততক্ষণে লক্ষ্যকে হাতের প্রায় নাগালে নিয়ে এসেছে স্বাগতিকরা।

৮৬ বলে ১৪৮ রানের জুটি বাধেন বাটলার-স্যামসন

এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে রায়ান পরাগ ও ধ্রুব জুরেলকে ফিরিয়ে বেঙ্গালুরু ভিন্ন কিছুর আভাস দেয়। কিন্তু তখনও ক্রিজে সক্রিয় বাটলার। শেষ পর্যন্ত তিনি ৫৮ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। ৯টি চার এবং ৪টি ছয় দিয়ে সাজিয়েছেন আইপিএলে নিজের ষষ্ঠ শতক। এছাড়া শিমরন হেটমায়ার অপরাজিত থাকেন ৬ বলে ১১ রান করে।

বেঙ্গালুরুর হয়ে রিচ টপলি ২৭ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া যশ দয়াল ও মোহাম্মদ সিরাজ শিকার করেন ১টি করে উইকেট।

এএইচএস