ভারতীয় ক্রিকেটের ভক্তরা এই সময়ে এসে রীতিমত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ সাফাই গাইছেন বিরাট কোহলির পক্ষ নিয়ে। আবার কেউ কেউ রানে থাকলেও এই ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখার ঘোর বিরোধী। তাদের মতে, কোহলি রান করলেও ধীরগতির ইনিংস খেলছেন। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এমন ইনিংস দেখতে রাজি নন ভক্তরা। 

চলতি আসরে ব্যাট হাতে নিজের সেরা সময়টাকে নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছেন কোহলি। আসরের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন। ২ ফিফটি আর ১ শতকের সুবাদে বাকি ব্যাটারদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছেন তিনি। সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায় ৩১৬ রান করে সবার আগে আছেন বেঙ্গালুরুর এই ওপেনার। দুইয়ে থাকা রিয়ান পরাগের রান ১৮৫। বাকিদের তুলনায় কোহলি ঠিক কতটা এগিয়ে সেটা বোঝাতে এইটুক তথ্যই হয়ত যথেষ্ট। 

কিন্তু এরপরেও সবার মন পাচ্ছেন না এই ব্যাটার। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। বেঙ্গালুরু এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত জিতেছে মোটে ১ ম্যাচ। কোহলি রান করেও দলের স্কোর বড় করতে পারছেন না। স্ট্রাইকরেটের নিরিখেও পিছিয়ে আছেন বাকি সবার থেকে। রিয়ান পরাগের স্ট্রাইক রেট যেখানে ১৫৮.১১। সেখানে কোহলির ১৪৬.২৯। 

শুধু এটাও না, আইপিএলের এবারের আসরে সেরা ৫ রান সংগ্রাহক তালিকায় সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেট কোহলির। ১৭৭ রান নিয়ে চারে থাকা হেনরিখ ক্লাসেনের স্ট্রাইকরেট আবার ২০৩ এর বেশি। জাতীয় দলে কোহলির সতীর্থ শুভমান গিলের স্ট্রাইকরেট ১৫৯.২২। এমনকি সেরা দশে কোহলির চেয়ে কম স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন কেবল সাই সুদর্শন (১২৮) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (১৪৩.৬৮)। 

আইপিএলের মানদণ্ডে কোহলি যে ধীরগতির ইনিংস খেলছেন তা কিছুটা স্পষ্ট। এমনকি গতকালের সেঞ্চুরি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ৬৭ বলের এই সেঞ্চুরি যে আইপিএলে ইতিহাসেই সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি। ২০০৯ সালে সবশেষ ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন মনীশ পান্ডে। ৬৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনজন। ২০১১ সালে শচীন টেন্ডুলকার, ২০১০ সালে ডেভিড ওয়ার্নার এবং ২০২২ সালে জশ বাটলার তিন অঙ্কে যেতে খেলেছিলেন ৬৬ বল। 

তবে কোহলি নিজে জানিয়েছেন তিনি এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন, ‘কোনও ধরনের ভাবনা নিয়ে কখনও খেলতে নামি না। আক্রমণ করব না ধরে খেলব এই ভাবনা মাথাতেই থাকে না। আজ এক সময় ১০ বলে ১২ রান ছিল আমার। তখনও অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে যাইনি। বোলারকে ভাবতে বাধ্য করেছি।’ 

কোহলি নিজেও জানেন পরিস্থিতির কথা। তবে এমন সময়ে এসে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার প্রতিই আস্থা রাখছেন তিনি, ‘বোলারেরা সব সময় চায় আমি যাতে শট খেলি এবং আউট হই। কিন্তু এত দিনে এটুকু অভিজ্ঞতা এবং পরিণত মানসিকতা আমার হয়েছে যাতে ওদের ভাবাতে পারি। আমি পরিবেশ এবং পিচ অনুযায়ী খেলি।’ 

অবশ্য, গতকাল যে পিচে খেলেছেন, সেই জয়পুরে খুব একটা ভাল রেকর্ড ছিল না কোহলির। উত্তরাঞ্চলীয় এই মাঠে গতকালের আগে কোহলির গড় ছিল ২২ এর নিচে। এমনকি এর আগে কেবল একবারই এই মাঠে আইপিএলে সেঞ্চুরি এসেছিল। ২০১৯ সালে আজিঙ্কা রাহানে দিল্লির বিপক্ষে খেলেছিলেন ১০৫ রানের ইনিংস। 

যদিও গতকাল একদিনেই হয়েছে দুই সেঞ্চুরি। এরপরেও কোহলি জানালেন পিচের কথাও, ‘অন্যান্য মাঠের থেকে এখানকার উইকেট একটু আলাদা। দেখে মনে হবে ফ্ল্যাট উইকেট। কিন্তু বল পড়ে ধীরে ব্যাটে আসছে। স্পিনারদের ক্ষেত্রে হঠাৎই বলের বাউন্স বদলে যাচ্ছে। মাঠে আয়তনটাও অন্য রকম।’  

অবশ্য কোহলি যে সঙ্গ পাচ্ছেন তাও না। ফাফ ডু প্লেসি, ক্যামেরন গ্রিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছেন। গতকালের ম্যাচেই পুরো দলের ৬২ শতাংশ রান একাই করেছেন কোহলি। একা খেলতে গিয়েই হয়ত নিজের ইনিংসে আরও খানিকটা ধীরগতির হচ্ছেন তিনি। কিন্তু, ক্রিকেট পাগল ভারতীয়দের এমন কিছু বোঝানোটাই হয়ত দুঃসাধ্য। 

জেএ