সুনীল নারিনের ব্যাটিং দক্ষতা কারও অজানা নয়, তবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা এটাও জানেন যে– খুব সম্ভবত সেঞ্চুরি পাওয়ার মানসিকতা নিয়ে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার ব্যাট করেন না। অনেকটা অনায়াসী ও গা–ছাড়া শট খেলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই ওপেনার। টেল-এন্ডার থেকে ওপেনার বনে যাওয়া নারিন শাহরুখ খানের দলকে তার যোগ্য প্রতিদানও দিয়েছেন। তাদের হয়েই যে ঝোড়া ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করলেন নারিন। যার ওপর ভর করে ২২৩ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে কলকাতা।

বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয় মুখ নারিন, তবে ফরম্যাটটিতে পাঁচশ ম্যাচ খেলে ফেলার পর প্রথম ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেলেন আজ (মঙ্গলবার)। ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেনে এদিন কলকাতা আতিথ্য দিচ্ছে রাজস্থান রয়্যালসকে। যদিও আগে ব্যাটিং করা কলকাতাকে ম্যাচের গোড়া থেকেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে পারেননি ওপেনার নারিন-ফিল সল্টরা। রাজস্থানের ট্রেন্ট বোল্ট ও আবেশ খানদের সামনে কিছুটা ঢিমেতালে শুরু করেন ইনিংস। ষষ্ঠ ওভারের একটা সময় নারিন ১৪ বলে ১৩ রানে খেলছিলেন। কিন্তু ৫.৫ ওভারে একটা ছক্কা এবং ষষ্ঠ ওভারে একটা চারের পরই নারিনের ব্যাটে ‘প্রাণ’ চলে আসে। খুলে যায় রানবন্যার ‘স্লুইচগেট’!

এরপর আক্রমণের পর আক্রমণের জন্য তিনি বেছে নেন যুজবেন্দ্র চাহাল এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। ফলে মাঝের ওভারগুলোতে রাজস্থান যে বিপক্ষ দলকে চেপে ধরে, সেটা আজ হয়নি। বিশেষ করে অশ্বিনকে বেধড়ক মেরেছেন নারিন। অশ্বিনকে ছক্কা মেরেই ২৯ বলে অর্ধশতরান পূরণ করেন নারিন। আর পরের ৫০ রান তুলতে ক্যারিবিয়ান তারকা মাত্র ২০ বল খেলেছেন। ম্যাজিক ফিগারটাও পূর্ণ করেছেন একেবারে নিজস্ব স্টাইলে।

১৫.৫ ওভারে চাহালকে ছক্কা মেরে ৯৬ রানে পৌঁছে যান নারিন। এরপর ১৬তম ওভারের শেষ বলটা মিড-উইকেটের বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ৪৯ বলে শতরান পূরণ করেন। তারপরই ভেসে যান উচ্ছ্বাসে। অন্য কেউ হলে হয়ত উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা অনেক বেশি হতো। কিন্তু নারিন বলেই হয়তো উচ্ছ্বাসটা পরিমিত দেখা গেল। যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ায় সম্ভবত নিজের বাড়িতে বসেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখবেন। বোল্টের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে নারিন ৫৬ বলে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় করেছেন ১০৯ রান। এমন ইনিংসের জন্য দাঁড়িয়ে হাত তালিতে তাকে অভিবাদন জানান বলিউড বাদশাহ শাহরুখ।

এদিন নারিনের ব্যাটিং ছিল দলের জন্য কার্যকরী ও খুবই সময়োপযোগী। মাত্র ১০ রানে ওপেনার সল্ট আউট হওয়ায় স্বাগতিকরা কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অঙ্কৃশ রঘুবংশীর সঙ্গে ৮৫ রানের জুটিতে কলকাতাকে বিপদ থেকে টেনে তোলেন নারিন। তরুণ রঘুবংশী (১৮ বলে ৩০) ফিরলেও নিজের কাজটা অক্ষুণ্ন রাখেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। মাঝে শ্রেয়াশ আইয়ার (১১) ও আন্দ্রে রাসেলরা (১৩) ফিরলেও নারিন একপ্রান্ত আগলে ছিলেন।

শেষদিকে ছোট্ট ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন ফিনিশিংয়ে নির্ভরতার জায়গা করে নেওয়া রিঙ্কু সিং। ৯ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কার মারে তিনি ২০ রান করেন। ফলে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে কলকাতার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২৩ রান।

রাজস্থানের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আবেশ ও কুলদীপ সেন। এছাড়া বোল্ট ও চাহাল একটি করে উইকেট শিকার করেন।

এএইচএস