লেসলি হিলটন: একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার, যার মৃত্যু হয়েছে ফাঁসিতে
লেসলি হিলটন
‘তুমি অপদার্থ! এতগুলো বছর তোমার সাথে থেকে আমার জীবন নষ্ট করেছি। এখন আমি মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছি, যাকে আমি ভালোবাসি। তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না। সে আমাকে আনন্দ দিয়েছে যা আমি তোমার কাছ থেকে পাইনি। আমি তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাই। হ্যাঁ, আমি তার সাথে শুয়েছি। আমি এর আগে এমন আনন্দ পাইনি। আমি আমার সবকিছু তার কাছে সমর্পণ করেছি। আমি কেবল রয়ের, রয়ের, রয়ের!’
দিনটি ছিল ১৯৫৪ সালের ৬ মে। লেসলি হিলটন আগেরদিন স্থানীয় পোস্ট অফিসে গিয়ে যা দেখতে চেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে তাকে দেওয়া হয়নি। এর আগে প্রিয় স্ত্রী লারলাইন রোজকে বিষয়টি নিয়ে যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, উত্তর না বোধক এসেছিল। তবুও মনের অশান্তি যাচ্ছিল না। আর তাই এবার চতুরতার আশ্রয় নিয়ে প্রশ্ন করলেন স্ত্রীকে, বললেন- আমি সেই চিঠি পড়েছি।
বিজ্ঞাপন
বিপদ আঁচ করে এবার আর না লুকিয়ে পরকীয়ার কথা স্বীকার করেন রোজ। একইসঙ্গে হিলটনকে উপরোক্ত কথাগুলো একনাগাড়ে বলে যান। কর্মজীবনে কখনোই অন্যায় সহ্য না করা হিলটন এরপর নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেননি। গুলিভর্তি রিভলবার মুহূর্তেই খালি করেন প্রিয়তমার ওপর। পরবর্তীতে আবার ফুল রিলোড করে আরো একটি গুলি করেন। যতক্ষণে হুঁশ ফিরে পেলেন, ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। এরপর নিজেই পুলিশে খবর দেন, জানান স্ত্রীকে হত্যার কথা।
বিচার শেষে ফাঁসির রায় আসে হিলটনের বিরুদ্ধে। আপিল করেছিলেন, কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই হয়েছেন ব্যর্থ। আর শাস্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নাম উঠে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক তালিকায়। ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার যে তিনিই!
বিজ্ঞাপন
অথচ হিলটনের জীবনটা অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা যেমন করেছিলেন, তাতে মাত্র ৬ টেস্টে তার থেমে যাওয়াটা হতাশারই। তবে এই পেস বোলারের ভাগ্যটা যেন এভাবেই লেখা, প্রতি ক্ষেত্রেই!
১৯০৫ সালের ২৯ মার্চ জ্যামাইকার কিংস্টনে লেসলি হিলটনের জন্ম। চরম দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে বড় হন তিনি। তবে থেমে থাকেননি। ১৯২৭ সালে প্রথমবার জ্যামাইকার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান। কখনো ব্যাট, কখনো বল হাতে আলো ছড়াতে থাকলেও বেশ কয়েকবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে উপেক্ষিত হন।
শারীরিকভাবে হিলটন বেশ কালো ছিলেন। ১৯২০-এর দশকে আন্তঃদ্বীপপুঞ্জে বর্ণপ্রথা বেশ তীব্র ছিল। ক্রিকেট লেখক মার্ক হুইটেকার মনে করেন, হয়তো বর্ণপ্রথাই লেসলি হিলটনের দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল। ব্রিজটাউনের গণমাধ্যম তাকে বল নিক্ষেপকারী ও বাগানের বোলার হিসেবে আখ্যা দেয়।
১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে এমসিসি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। আর.ই.এস ওয়াটের নেতৃত্বে দলটিতে ওয়ালি হ্যামন্ড ও মরিস লেল্যান্ডের মতো ক্রিকেটাররা ছিলেন। একদম শেষ মুহুর্তে দলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে সুযোগ পান প্রায় ৩০ বছর বয়সী হিলটন। ৮ জানুয়ারি, ১৯৩৫ সালে ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে সিরিজের প্রথম টেস্টে সুযোগ পান এ পেসার।
ইতিহাস হিলটনকে মনে রেখেছে ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে। কিন্তু অন্যভাবেও স্মরণীয় থাকতে পারতেন তিনি। তার অভিষেক টেস্টেই যে বিরল এক ঘটনা ঘটেছিল, যা ক্রিকেট ইতিহাসের অধিকাংশ পাঠকই জানেন না।
ব্যাটিং অর্ডার ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা বললে সবার আগে উঠে আসে কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নাম। যিনি ১৯৩৭ সালের অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে এই কাজ করেছিলেন। কিন্তু তার দুই বছর আগেই এই কাজ করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন জ্যাকি গ্রান্ট! সে সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল, মাঠের অবস্থা ছিল শোচনীয়।
হিলটনের সেই অভিষেক টেস্টে টস হেরে প্রথম ইনিংসে অল আউট হওয়ার আগে মাত্র ১০২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭ উইকেটে ৮১ রান তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ইংল্যান্ড। এরপরই সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভাই রলফ গ্রান্টের সাথে জ্যাকি ওপেন করতে পাঠান হিলটনকে!
অবশ্য সেই ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি জ্যাকি। ৫১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে জর্জ হেডলি আউট হওয়ার সাথে সাথে ডিক্লেয়ার করেন তিনি। জ্যাকি ভেবেছিলেন, এই পিচে সামনে আর ব্যাটিং করা রীতিমতো অসম্ভব। আর প্রথম ইনিংসের ২১ রানের লিড মিলিয়ে ইংল্যান্ডের টার্গেট ততক্ষণে দাঁড়িয়েছে ৭৩ রান। ফলে জয়ের স্বপ্নে ইনিংস ঘোষণা করেন উইন্ডিজ অধিনায়ক।
তবে জ্যাকি ভুল ভেবেছিলেন। তার উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি। ইংল্যান্ড ম্যাচটি জেতে ৪ উইকেটে। অবশ্য এই ম্যাচেও রান তাড়ায় ৪৮ রানের ভেতর ৬ উইকেট হারিয়েছিল ইংলিশরা। কিন্তু এরপর অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্পটা লেখেন ওয়ালি হ্যামন্ড আর প্যাটসি হেনড্রেন। হ্যামন্ডের ২৯ আর হেনড্রেনের ২০ রানের ইনিংসে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
এই ম্যাচ হারের পেছনে অবশ্য হিলটনের দায়ও কম নয়। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে খুব বাজে বল করেন। ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে নিতে পারেন মাত্র ১ উইকেট। অভিষেক ম্যাচের গল্পটাই যেন তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ম্যাচ জিততে পারলে জ্যাকির এই ব্যাটিং অর্ডার ঘুরিয়ে দেওয়া নিয়ে হয়তো অনেক কিছুই লেখা হতো। যেমনটা করা হয় ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে। কিন্তু দিনশেষে মানুষ সফলতারই জয়গান গায়, ব্যর্থতা তো অনাহুত অতিথি মাত্র। আর তাই ইতিহাসের পাতায় এই গল্প সেভাবে দেখা যায় না। হিলটনও তাই ব্যর্থদের দলে থাকা বিস্মৃত ক্রিকেটার।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ টেস্টে ১৩ উইকেট নেন হিলটন। চতুর্থ টেস্টে উইকেট পেলেন না, সেই সাথে বাদ পড়লেন দল থেকে। এরপর টানা চার বছর তিনি আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। পরে ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড সফরের দলে আবার ডাক পান। যা ছিল তার শেষ সিরিজ। আর এই সিরিজে ডাক পাওয়াটাও সহজ ছিল না।
সেবার ইংল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট দলে লেসলি হিলটনকে নেওয়া না হলে জ্যামাইকার গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় উঠে। গুঞ্জন বের হয়, ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ক্লাবের প্রভাবে তাকে নেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে ১৮ বছর বয়সী ত্রিনিদাদের তরুণ ব্যাটসম্যান জেফ্রি স্টলমেয়ারকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল।
এ সময় অর্থনৈতিক কারণেই হিলটনকে পাশ কাটানোর বিষয়টি জানা যায়। বেশ কিছু প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড দলে আরেকজন খেলোয়াড়ের ব্যয়ভার বহনে অক্ষম ছিল। এ অবস্থায় জ্যামাইকায় ডেইলি গ্লেনারের প্রচারণায় ইংল্যান্ড সফরে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে হিলটনকে সহায়তার জন্য অর্থ তহবিল গঠন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ড নমনীয় হয় ও হিলটনকে দলে যুক্ত করা হয়।
সেই সিরিজের প্রথম ২ টেস্টে মাত্র ৩ উইকেট নেওয়ার পর বাকি ম্যাচগুলোতে আর সুযোগ পাননি হিলটন। সফর শেষে দেশে ফিরেই অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। আর তাই ৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২৬.১২ গড়ে ১৬ উইকেট আর ১১.৬৬ গড়ে ৭০ রানই এই পেসারের সঙ্গী।
দেশে ফিরে এসে জ্যামাইকান সিভিল সার্ভিস পুনর্বাসন অধিদপ্তরে ভালোমানের চাকরি লাভ করেন হিলটন। সেখানে থাকা অবস্থায় ১৯৪০ সালে লারলাইন রোজের সঙ্গে তার পরিচিয়, সেখান থেকে প্রেম শুরু। শিক্ষাদীক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে জ্যামাইকার পুলিশ ইন্সপেক্টরের মেয়ে রোজের সাথে ছিল তার বিস্তর ব্যবধান।
হিলটনের সাথে মেয়ের বিয়েতে একদমই রাজি ছিলেন না রোজের বাবা। এমনকি এই সাবেক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কোনো পুলিশ কেস আছে কি না, সেই খোঁজও নেন তিনি। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ১৯৪২ সালে দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর এটাই হয়তো ছিল হিলটনের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল! ‘হ্যাপি এন্ডিং’ এর বদলে ট্র্যাজেডিতে পরিণত হলো দুজনের জীবন। যেখানে হিলটন হয়ে গেলেন ট্র্যাজিক হিরো।
আপাতঃদৃষ্টিতে হিলটন-রোজের বৈবাহিক সম্পর্ক ভালোভাবেই কাটছিল। ১৯৪৭ সালে এই পরিবারে এক সন্তানের জন্ম হয়। উচ্চাভিলাসী রোজ ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন। আর তাই সন্তান জন্মের পর নিউইয়র্কের ফ্যাশন স্কুলগুলোয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চলে যান। এসময় হিলটন ও তার সন্তান রোজের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিধবা শ্বাশুরী সন্তানের দেখাশোনা করতে থাকেন। শ্বাশুড়ির সাথে হিলটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক না থাকলেও এর বিকল্প ছিল না তার সামনে।
এদিকে ১৯৫৪ সালে রোজের সাথে রয় ফ্রান্সিসের পরিচয় হয়। খুব তাড়াতাড়িই দুজন সম্পর্কে জড়িয়ে যান। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নিউইয়র্ক থেকে বেনামী চিঠি পান হিলটন। সেখানে তার স্ত্রীর সাথে কোন এক রয় ফ্রান্সিসের গভীর সম্পর্কের কথা লেখা ছিল। বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে বেশ ধাক্কা খান তিনি। লারলাইনকে দ্রুত ফিরে আসতে বলেন। ২ মে জ্যামাইকায় ফেরেন রোজ। হিলটনের কাছে রয়ের সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এক পর্যায়ে ঘটনাটি সাময়িকভাবে চাপা পড়ে যায়।
এদিকে সেই সময় জ্যামাইকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধির ফলে রিভলবারের গুলি কিনে রাখেন হিলটন। ৫ মে তিনি জানতে পারেন, এক বাগান মালী রোজের চিঠি স্থানীয় ডাকঘরে নিয়ে গেছে। দ্রুত ডাকঘরে গেলেও তাকে সেই চিঠি দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরদিন তিনি রোজকে মিথ্যা বলেন সেই চিঠি পড়ার কথা জানান।
এক পর্যায়ে রোজ তার পরকীয়ার কথা স্বীকার করেন। এর পেছনে পিতামাতার প্ররোচনা থাকার কথা জানান তিনি। এছাড়া হিলটনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে অনেক কথা বলেন। ঝগড়া একসময় ধস্তাধস্তিতে রুপান্তরিত হয়। এক পর্যায়ে হিলটন স্ত্রীর নিথর দেহ দেখতে পান। এ বিষয়ে জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ‘আকস্মিকভাবে আমি রক্ত দেখতে পাই। আমি অনুধাবন করি যে, আমি স্ত্রীকে গুলি করেছি।‘ তখন হিলটন নিজেই পুলিশকে খবর দেন।
পরবর্তীতে বিচার কার্যক্রম বেশ দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয়। ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। বিচারকমণ্ডলী রায় প্রদানে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। সাধারণ জনগণ হিলটনের মুক্তি চাইছিলেন। তবে জুরি বোর্ডের আলোচনা শেষে বিচারক তাকে দোষী হিসেবে আখ্যায়িত করেন মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দেন।
রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে ১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে জ্যামাইকার সর্বোচ্চ আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। আইনজীবীরা লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করলে ২১ এপ্রিল সেটিও নাকচ করা হয়। সর্বশেষ ভরসা ছিল জ্যামাইকার ঔপনিবেশিক গভর্নর স্যার হিউ ফুটের সাধারণ ক্ষমা। উপনিবেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক গণ্যমান্য নাগরিকের স্বাক্ষরসম্বলিত আবেদনও করা হয়। কিন্তু ৯ মে গভর্নর তা প্রত্যাখ্যান করেন ও ১৭ মে তারিখে লেসলি হিল্টনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে রোমান ক্যাথলিক চার্চে দীক্ষিত হন হিলটন। ১৭ মে সকালে সেন্ট ক্যাথরিন ডিস্ট্রিক্ট কারাগারের বাইরে বিপুলসংখ্যক জনতা একত্রিত হয়। তারা আন্দোলন করলেও লাভ হয়নি। কারাগারেই সাবেক এই ক্রিকেটারের নিথর দেহ সমাহিত করা হয়।
লেসলি হিলটনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগেরদিন বার্বাডোজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়ার মাঝে টেস্ট খেলা চলছিল। স্বাগতিকদের দলে ছিলেন জে.কে. হল্ট নামের এক জ্যামাইকান খেলোয়াড়। মাঠে তিনি বেশ কয়েকবার ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি। ব্যাট হাতেও ছিলেন ব্যর্থ।
ক্রিকেট লেখক ও ধারাভাষ্যকার টনি কোজিয়ার জানান, মাঠের মাঝে দর্শকরা ব্যানার নিয়ে আসে যেখানে লেখা ছিল- ‘হল্টকে ফাঁসি দাও, হিলটনকে বাঁচাও।’ এ থেকে বোঝা যায় সাধারণ জনতার কাছে হিলটন কতটা জনপ্রিয় ও নির্দোষ ছিলেন। তবে তার বিদায়টা হয়েছিল তিক্ততার মধ্য দিয়েই।
একজন মানুষ স্মরণীয় হয় সাধারণত তিনভাবে। প্রথমত, নিজের কোনো কীর্তির কারণে। যেমন: স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, শচীন টেন্ডুলকার, শেন ওয়ার্ন প্রমুখ। দ্বিতীয়ত, অন্যের কীর্তির সাথে নিজের নাম জড়িয়ে যাওয়ার কারণে। যেমন ব্র্যাডম্যানকে তার শেষ টেস্ট ইনিংসে ০ রানে ফিরিয়ে এরিক হলিস, যুবরাজ সিংয়ের কাছে ৬ ছক্কা খেয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড আলাদাভাবে পরিচিত হয়েছেন।
এর বাইরে স্মরণীয় হওয়ার তৃতীয় কারণ হতে পারে নিজের কোনো কুকীর্তি। যেমন আজহারউদ্দীন, হ্যান্সি ক্রনিয়েরা ফিক্সিং করে নিজেরাই নিজেদের নামকে কলঙ্কিত করেছেন। ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া হিলটন তৃতীয় কারণেই ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়েছেন। পরবর্তীতে অনেক ক্রিকেট লেখক বলেছেন, হিলটনের মামলাটি আরও সহানুভূতির সাথে পরিচালিত হতে পারতো। যেখানে তার মানসিক চিকিৎসার বিষয়টিও দেখা যেতো।
মাইকেল ম্যানলি ১৯৮৮ সালে ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ শীর্ষক গ্রন্থে লেসলি হিলটনকে ভালোমানের কিন্তু দুর্ভাগ্যে নিপতিত ফাস্ট বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় তো তার জীবনে দেখা গেছেই। বলা যেতে পারে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও ছিলেন দুর্ভাগা। তার মৃত্যুর মাত্র দুই বছর পর জ্যামাইকার আইন পরিবর্তন হয়। যদি বছর দুয়েক আগে আইন পরিবর্তিত হতো, তাহলে হয়তো মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পেতেন হিলটন।
জীবনটা হয়তো এমনই। হিলটন তাই ইতিহাসের পাতায় বেঁচে আছেন অভিষেক টেস্টে ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা বা তাকে দলে নিতে সমর্থকদের অর্থ তহবিল গঠনের গল্পে নয়। বেঁচে আছেন ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে।
এএল