অভিষেকে আলো ছড়িয়ে ১০০ টেস্ট খেলার স্বপ্ন মুরাদের
দুই বছর জাতীয় টেস্ট দলের সঙ্গে ঘোরাঘুরির পর অবশেষে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে অভিষেক হয়েছে হাসান মুরাদের। দুই টেস্টে বল হাতে নিয়েছেন ১২ উইকেট। হয়েছেন সিরিজের দ্বিতীয় শীর্ষ বোলারও।
বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ২-০ তে। সিরিজ জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখার পর ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে টেস্ট ক্যারিয়ার, নিজের স্বপ্ন, বোলিং অ্যাকশনসহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
টেস্ট সিরিজ জিতলেন কেমন লাগছে?
হাসান মুরাদ: আলহামদুলিল্লাহ টেস্ট সিরিজ জয় কিন্তু অনেক বড় পাওয়া। সবাই কিন্তু জানেন যে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আমরা আসলে অনেক কষ্ট করি। যখন আমরা সিরিজ জিততে পারি তখন কিন্তু আসলে ভালো লাগাটা অন্যরকম থাকে। এই খেলাটা ৫ দিন ধরে চলে, যে কারণে ৫ দিন পরে যখন রেজাল্ট পাওয়া যায়, তখন কিন্তু আসলে অন্যরকম লাগে।
বিজ্ঞাপন
১২ উইকেট পেয়েছেন, নিজের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের জন্য কি বেশি ভালো লাগছে?
হাসান মুরাদ: দেখেন আমি আসলে ব্যক্তিগত লক্ষ্যকে কখনো এগিয়ে রাখি না। নিজে ১২ উইকেট পেয়েছি বলে ভালো লাগছে এমন না। দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি এজন্য ভালো লাগছে। দলকে আসলে কিছু দিতে পেরেছি এজন্য আসলে বেশি খুশি।
দলের সঙ্গে দুই বছর সফর করার পরে অবশেষে অভিষেক হলো...
হাসান মুরাদ: দলের সঙ্গে কিন্তু আমি অনেকদিন ধরেই ছিলাম। এটা আমার জন্য ভালো ইতিবাচক দিক ছিল। আমি দলকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছি এই সময়ে। টেস্ট ফরম্যাটটা কেমন, অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েছিলাম এই সময়ে। যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম সেটাই আসলে মাঠে কাজে লাগিয়েছি এই সিরিজে।
আপনার বোলিং অ্যাকশন অন্যদের থেকে আলাদা, এটা কি স্বভাবজাত নাকি অনুশীলনের ফল?
হাসান মুরাদ: না, এটা আসলে কেমন অ্যাকশন সেটা জানি না। তবে ওইভাবে ছোটবেলা থেকে আমি বল করতাম। এখন যেটা দেখেন, সেভাবেই অনুশীলন করেছি ছোটবেলা থেকেই। সেভাবেই এখনো করছি, অ্যাকশনটা ছোট থেকেই এমন আর কি।
আপনি একটানা অনেক ওভার এক জায়গায় বল করতে পারেন...
হাসান মুরাদ: টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট নিতে হলে লম্বা সময় ধরে লাইন এবং লেন্থ ঠিক রেখে বল করতে হয়। ধৈর্য রাখতে হবে, সঙ্গে সাধারণ যে ব্যাপার হলো লাইন লেন্থটা ঠিক রেখে বল করা। এটা টেস্ট ক্রিকেটে বোলিংয়ের ক্ষেত্রে একটা মৌলিক ব্যাপার। আমি এটাই চেষ্টা করি আসলে।
আপনার টিমমেট নাঈম হাসান সবশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে সেরা উইকেট সংগ্রহ করেও আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাদ পড়েছেন। টিম কম্বিনেশনে জন্য আপনারও বাদ পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায় সামনে, এটা নিয়ে ভাবেন কি?
হাসান মুরাদ: দেখেন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এই জিনিসগুলো কিন্তু আসলে কোনো কিছু ম্যাটারই করে না। টিম কম্বিনেশন কিন্তু দলের ভালোর জন্যই হয়ে থাকে। আসলে এটা আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ পারফর্ম করা, পারফর্ম করে যাব। ম্যাচ যখন যেখানে খেলব টেষ্টা থাকবে পারফর্ম করার। আর কম্বিনেশন কি হবে সেটা তো সিলেক্টররা ঠিক করবেন।
কক্সবাজার থেকে জাতীয় দলে যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না...
হাসান মুরাদ: সহজ ব্যাপার ছিল, ছোটবেলা থেকে টেপ বলে ক্রিকেট খেলতাম আমি। বাসার টিচারের কাছে পড়তাম। উনি আসলে বিকেএসপি নিয়ে আমাকে বলেছিলেন। পড়াশোনা কম করতাম দেখেই উনি আমাকে বিকেএসপির কথা বলেছিলেন। যেন আমি ভর্তি হই, পড়াশোনা করব, খেলাধুলাও করব। পরে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আসলে ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম পেশাদারভাবে। ছোটবেলায় তো আসলে ক্রিকেট, ফুটবল খেলতাম। তবে ক্রিকেটকেই ভালোবেসে এই পেশায় এসেছি।
লম্বা সময় ধরে ছায়া হয়ে কারা রয়েছে আপনার পাশে?
হাসান মুরাদ: পরিবারের সম্পূর্ণ সাপোর্ট আমার সঙ্গে ছিল। এরপরে শেষ ৪-৫ বছর ধরে আমার স্ত্রী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমাকে মোটিভেশন বলেন বা উৎসাহ দেওয়া, যেটা বলেন। অনেক বেশি সাপোর্ট ছিল ওর, এই জায়গায় আসার পেছনে ওর অনেক বড় অবদান।
প্রত্যেক ম্যাচ শেষে কোন কোচের সঙ্গে আপনার কথা হয়?
হাসান মুরাদ: যখন জাতীয় দলের ভেতরে থাকি, তখন তো স্পিন কোচের সঙ্গে কাজ করি। আর যখন বাইরে থাকি, তখন সোহেল স্যারের সঙ্গে বেশি কাজ করা হয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকে ওনার সঙ্গে কাজ করি আমি। এছাড়া তাইজুল ভাইয়ের সঙ্গে বোলিং প্র্যাকটিস করি। অনেক কিছু শেয়ার করি তার সঙ্গে।
দেশের সেরা উইকেট শিকারি বোলারকে কাছ থেকে দেখলেন...
হাসান মুরাদ: এগুলো তো আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় কিছু, যারা আমরা জাতীয় দলে খেলা মাত্র শুরু করেছি। উনারা অনেক বড় নাম আমাদের দেশের ক্রিকেটে। সাকিব ভাই ছিলেন। এখন তাইজুল ভাই বিশ্ব ক্রিকেটে দাপট দেখাচ্ছেন, মিরাজ ভাই আছেন। ইনশাআল্লাহ আরো সামনে বড় কিছু করবে সবাই। এই জিনিসগুলো আসলে ভালো লাগার।
আপনি কি শুধু লাল বলের জন্য স্পেশালিস্ট হবেন নাকি সাদা বলেরও?
হাসান মুরাদ: না এগুলো নিয়ে আমি আসলে খুব একটা চিন্তা করি না। এগুলো আসলে বলার কথা তাই অনেকে বলে। এটা নিয়ে আসলে আমার কাছে কোনো কিছু ম্যাটার করে না। জিনিসটা হচ্ছে ক্রিকেট খেলাটা হচ্ছে, ক্রিকেটে একটা বড় ফরম্যাট আর একটা ছোট। আপাতত যেখানে আছি সেখানেই ফোকাস।
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে কিনা?
হাসান মুরাদ: না, ওনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না পারলেও কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। উনি আমাদের কিংবদন্তি ক্রিকেটার। উনার সঙ্গে খেলতে পারাটা একটা ভাগ্যের ব্যাপার। একবার বিপিএল খেলেছি সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আরেকবার বিসিএল খেলেছি।
মুশফিককে আপনি কী বলেছেন আর তিনি আপনাদের কী বলেছেন?
হাসান মুরাদ: দেখেন দুই বছর ধরে কিন্তু আমি জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। মুশফিক ভাইকে কাছ থেকে দেখেছি। তার অর্জনে পুরো বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু খুশি। এটা কিন্তু অনেক বড় অর্জন দেশের ক্রিকেটে। আর উনি অনেক অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন আমাদের।
১০০ টেস্ট খেলতে পারার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়!
হাসান মুরাদ: ভবিষ্যৎ নিয়ে কিন্তু আমি খুব একটা ভাবি না। আমি বর্তমানে থাকার চেষ্টা করি। এখন যে মুহূর্তে আছি সেটা নিয়েই ভাবছি। এরপরে যে খেলাটা আছে সেটা নিয়ে চিন্তা করি। আগে থেকে তো কিছু বলা যায় না। অনেকদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলার ইচ্ছা তো অবশ্যই থাকবে। দেশের জন্য অবদান রাখার ইচ্ছা। আর হ্যাঁ, দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলার ইচ্ছা তো থাকবে। মুশফিক ভাই খেলেছেন, উনি উদাহরণ তৈরি করে দিয়ে গেলেন। আমাদেরও এখন ইচ্ছা জাগে লম্বা সময় টেস্ট খেলার।
সামনে অনেক দিন টেস্ট ম্যাচ নেই, ফিট থাকবেন কীভাবে?
হাসান মুরাদ: পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে কিন্তু সবকিছু মেইন্টেইন করতে হবে। এরকম বিরতি তো থাকতেই পারে। দুটি এনসিএল আমি খেলব, এরপরে বিপিএল রয়েছে। তারপরে প্রিমিয়ার লিগ রয়েছে। সবকিছুই আসলে খেলতে হবে টেস্ট সিরিজের আগে। মানসিকভাবে সব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনেক সময় থাকছে।
২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপ দলের প্রায় সবাই খেলছেন জাতীয় দলে, কীভাবে দেখছেন বিষয়টা?
হাসান মুরাদ: হ্যাঁ অবশ্যই যে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে আমাদের একটা বড় ট্রফি ছিল। সবাই যারা ছিল দলে, তাদের অনেকে এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। কেউ টি-টোয়েন্টি, কেউ ওয়ানডে বা টেস্ট। এটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। একসঙ্গে আমরা অনেক আড্ডা দিই, ক্রিকেট নিয়ে আলাপ করি।
আপনি কি একটু আন্ডাররেটেড?
হাসান মুরাদ: আমার কাছে এটা মনে হয় না। আমি এগুলো নিয়ে আসলে চিন্তা করি না। এটা ম্যাটারও করে না। আমি পেশাদার ক্রিকেটার। আমার কাজ পারফর্ম করা, আমি ক্রিকেট উপভোগ করি। ক্রিকেটটা খেলি দলের জন্য, দেশের জন্য। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। সবসময় ইচ্ছা থাকে যখন যেখানে খেলি, অবদান রাখার। আর এগুলো তো আসলে আমার হাতে নেই, আমি আসলে দেখিও না।
এসএইচ/এফএইচএম