‘বাংলাদেশের খেলা দেখতে মিথ্যা বলে শুটিংয়ে অনেক ফাঁকি দিয়েছি’
জিয়াউল হক পলাশ
দেশের বিনোদন জগতের বড় নাম জিয়াউল হক পলাশ। গেল কয়েক বছর ধরে দেশের তরুণদের কাছে পছন্দের শীর্ষে তিনি। অভিনয় জগতের বাইরে তিনি এবার দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। তবে খেলা কিংবা প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বে না।
পলাশের নিজ জেলা নোয়াখালী এবার বিপিএলে অংশগ্রহণ করছে। আর দলটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ঢাকা থেকে আজ (শনিবার) সিলেটে এসে নিজ দলের খেলা মাঠে বসে দেখছেন পলাশ। তার আগে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে জানিয়েছেন, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা, প্রিয় ক্রিকেটার, শুটিং ফাঁকি দিয়ে খেলা দেখার গল্প।
বিজ্ঞাপন
প্রথমবার বিপিএলের সঙ্গে যুক্ত হলেন কেমন লাগছে...
পলাশ: এটা তো অবশ্যই একটা গর্বের ব্যাপার। বিপিএলের মত এত বড় টুর্নামেন্টে একটা দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি এবং সে দলটা আবার আমার নিজের জেলা নোয়াখালী এক্সপ্রেস। যে কারণে আসলে ভালো লাগাটা বেশি কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পেয়েছেন কেমন উপভোগ করছেন
পলাশ: ভাই উপভোগ করি অনেক। এটা ভালো লাগে, এজন্য যুক্ত হয়েছি। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মানেই হচ্ছে যে আপনি একটা দলকে কিন্তু ধারণ করছেন। এটা কিন্তু অন্যরকম একটা সম্মানের। আমি বিষয়টা এভাবেই দেখি। আমি মাঠে থেকে দলকে উজ্জীবিত রাখতে, দলের খেলা দেখতেই কিন্তু এসেছি।
মাঠে খেলতে পারলে বুঝি আরও বেশি ভালো লাগতো
পলাশ: মাঠে খেলতে পারলে তো অবশ্যই ভালো লাগতো। তবে এটা একটা প্রস্তুতির ব্যাপার তো, যেহেতু মাঠে এখন আর আসলে খেলতে যেতে পারছি না। বাইরে থেকে এনজয় করছি, যে দায়িত্বটা পেয়েছি সেটার মাধ্যমে।
নোয়াখালী কি সব বিতর্ক পেছনে ফেলে মাঠের ক্রিকেটে পারফর্ম করে ফিরতে পারবে
পলাশ: একটা স্পিরিট কিন্তু রয়েছে নোয়াখালী দলের মধ্যে। এরপর যখন বিদেশি ক্রিকেটার যুক্ত হবে তখন দল আরও শক্তিশালী হবে। তারা দ্রুততম সময়ে দলের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। তখন দলটা কিন্তু শক্ত হবে, আর যেটা বললেন যে অনেক সময় দলের ভিতরে অনেক কিছু হয়। এগুলো আসলে আমলে নেওয়ার কিছু নেই কারণ সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু পারফর্ম করার পালা।
কখনো কি আপনার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল
পলাশ: হ্যাঁ অবশ্যই। জীবনের সব চাওয়া তো আর পূরণ হয়না। একদম ছোটবেলা থেকে আমার মধ্যে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। হতে পারিনি আসলে, তারপরে তো পড়াশোনা বা অন্য পেশায় চলে আসা। মাঠের ক্রিকেট থেকে অন্য জায়গায় চলে এসেছি এখন।
৫ বছর আগেও কি ভেবেছিলেন বিপিএলে কোনো একটা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন
পলাশ: না আসলেই ভাবিনি এভাবে। তবে এটা হয় না যে, আসলে আপনি খেলা দেখছেন, সেটা দেখতে দেখতে মনে হতেই পারে তো সবকিছু আসলে খুব স্বপ্নের মত লাগে এখন।
ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে একটা ভালো ইনিংস টার্নিং পয়েন্ট থাকে, আপনার ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট নিশ্চয় ব্যাচেলর পয়েন্ট
পলাশ: অবশ্যই ব্যাচেলর পয়েন্ট আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ যদি দেখেন এই নাটকটা করার পরে কিন্তু আমি মানুষের যত ভালোবাসা, সব কিছুই পেয়েছি। আগে থেকেই অনেক কাজ করেছি, তবে সেভাবে সাড়া মেলেনি। এই নাটকের পর প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি।
আবার যদি নতুন করে জীবনে ক্যারিয়ার সাজানোর সুযোগ হতো কোন পেশায় যেতে চাইতেন
পলাশ: আমার যদি আবার সুযোগ আসতো, নিজের ক্যারিয়ার পরিবর্তন করার সুযোগ থাকতো তবে আমি আবারো ডিরেক্টর হতে চাইতাম। আমি ডিরেকশন দিতে চাই সবসময়। আমি এখন আছি ডিরেক্টর এবং ডিরেক্টর হতে চাই। এটা আমার প্যাশন, নিজের ভেতর থেকে আসে সবসময়।
সাকিব আল হাসান আপনার প্রিয় ক্রিকেটার। তার খেলা দেখতে এমন কোনো পাগলামির স্মৃতি আছে যা মনে পড়লে এখন হাসি আসে
পলাশ: হাসি আসে এখনো, একটা ঘটনা যখন মনে পড়ে। ২০১৯ বিশ্বকাপটা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল সেই বছরটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তখন আমাদের অনেক কাজ হয়েছিল প্রোডাকশনের। আমার দেখা ২০১৯ বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ। কারণ ওই বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স এখনো আমার চোখে ভাসে।
তখন আমাদের শুটিং চলত তো আমি অনেক মিথ্যা কথা বলে শুটিং ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখেছি। আজকে অসুস্থ সময় দিতে পারব না, পারিবারিক কারণে এগুলো বলেই শুটিং ফাঁকি দিয়েছিলাম। খেলা যেদিন থাকতো ওইদিন ডেট থাকলেও আমি খেলার কারণে দেইনি। সবসময় আমি খেলাটাই দেখব এমন চিন্তা থাকতো।
বিপিএলে সাকিবকে মিস করছেন কিনা
পলাশ: অবশ্যই মিস করি। তাকে আসলে কে না মিস করে, বিপিএলে যে কয়টা দল আছে প্রত্যেকটা দলই তাকে মিস করে। তার মতো একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটার দলে থাকা মানেই দলের গতি বেড়ে যাওয়া। দেখেন মুশফিক ভাই বা রিয়াদ ভাই এখনও বিপিএল খেলে যাচ্ছেন। পারফর্ম করে যাচ্ছেন। একই সাথে এটা কিন্তু অনেক বড় কিছু, এত বছর ধরে খেলে যাওয়া।
আপনার যদি সুযোগ হয় কখনো কাউকে নিয়ে চাঁদে যাওয়ার, কাকে নিয়ে যেতে চান
পলাশ: আমার পছন্দের একজন গান লেখক এবং গায়ক লেহেনেট কোভেন্ট, আমি তাকে নিয়ে যেতে চাই। আমি তার গান লেখা এবং উপন্যাসের অনেক বড় একজন ভক্ত। তার ফিলোসফির ফ্যান আসলে আমি। এ কারণে তাকে নিয়ে যেতে চাই চাঁদে।
আপনার নিজের কি কখনো বিপিএলে দল কেনার ইচ্ছা আছে
পলাশ: আপাতত এগুলা ইচ্ছা নাই, আমি চিন্তাও করিনি। কারণ আমি খুব ছোট একজন মানুষ। এত বড় জিনিস নিয়ে আসলে ভাবিনি কখনো।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুপার স্টার কে হামজা চৌধুরি নাকি সাকিব আল হাসান। সবশেষ গেল কয়েক মাসে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অনেকেই
পলাশ: আমার কাছে অবশ্যই সাকিব আল হাসান। কেননা সাকিব যে পর্যায়ে গিয়েছেন, সে পর্যায়ে যেতে হলে হামজাকে কিন্তু অনেক বছর ওই সাধনাটা করতে হবে। তারপরে একজন সাকিব হতে পারবে, তার আগে না। হামজা একটা ভালো ক্লাবে খেলছে। এখন বাংলাদেশ দলে রয়েছে, কিছুদিন হলো জাতীয় দলে এসেছে। আর সাকিব যে সাকিব, সেটার জার্নি কিন্তু ১৮ বছরের। হামজা আগে ওই জার্নিটা করে আসুক, তারপরে সাকিবের ওই জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।
এসএইচ/এফএইচএম