সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৩.১ ওভারে ২২৫ (পৃথ্বী ৪৯, সাঞ্জু ৪৬, সূর্যকুমার ৪০; চামিরা ৫৫-২, আকিলা ৪৪-৪, জয়াবিক্রমা ৫৯-৩)।
শ্রীলঙ্কা: ৩৯ ওভারে ২২৭/৭ (আভিষ্কা ৭৬, রাজাপাকসে ৬৫, আসালঙ্কা ২৪, রমেশ ১৫*; সাকারিয়া ৩৪-২, চাহার ৫৪-৩)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত।
ম্যাচসেরা: আভিশকা ফার্নান্দো।
সিরিজসেরা: সূর্যকুমার যাদব।

ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বাদটা কেমন, সেটা যেন ভুলেই গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এমনকি ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের কাছেও হেরে গিয়েছিল সদ্যসমাপ্ত সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে। তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে অবশেষে জয়ের দেখা পেল লঙ্কানরা। তিন উইকেটের এই জয়ে নয় বছর পর নিজেদের মাটিতে ভারতকে হারানোর স্বাদটা পেল দলটা।

ঘরের মাটিতে ভারতকে সর্বশেষবার যখন হারায় লঙ্কানরা, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনেরা তখনও ছিলেন দলের কাণ্ডারি। সেই জয়ের পর তারা অবসর নিয়েছেন, যার যার জীবনে কাটাচ্ছেন বেশ ব্যস্ত সময়ও। কিন্তু ২০১২ সালের জুলাই মাসে সেই জয়ের পর থেকেই ভারতকে নিজেদের মাটিতে যেন হারাতেই পারছিল না লঙ্কানরা।

নয় বছর আর দশ ম্যাচ পর অবশেষে সে বাঁধাটা পেরিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সিরিজটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল আগের ম্যাচেই। তবে এদিনের এই জয় দলটাকে দিয়ে গেছে হারের বৃত্ত থেকে বেরোনোর স্বস্তি।

কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের নীতি, সুযোগ দেওয়া হবে দলের সবাইকেই। বিশেষ করে দল যখন নিশ্চিত করে ফেলে সিরিজ, তখন তো বটেই। সে নীতি থেকেই কিনা, শেষ ম্যাচে ভারত নেমেছিল ৫টি পরিবর্তন নিয়ে। অভিষেক হয় নিতিশ রানা, রাহুল চাহার, চেতন সাকারিয়া, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ও সাঞ্জু স্যামসনের। এতে একটা বিরল কীর্তিও গড়ে ফেলে ভারত। এক ম্যাচে ৫ জন অভিষেকের নজির যে ছিল না শেষ ৪১ বছরে। 

‘আনকোরাদের’ নিয়ে খেলতে নামা ভারত টসে জিতে নেয় ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। শিখর ধাওয়ানকে দ্রুত হারিয়ে ফেলার পরও স্যামসন আর পৃথ্বী শ’র ব্যাটে ভর করে তরতরিয়েই এগোচ্ছিল সফরকারীদের ইনিংস। ১৫ ওভারেই ছাড়িয়ে যায় দলীয় শতরানের মাইলফলক। 

ছন্দপতন ঘটল এরপরই। অর্ধশতক থেকে এক রান দূরে থাকা পৃথ্বীকে ফেরান দাসুন শানাকা। এর দুই ওভার পর বিদায় নেন অভিষিক্ত সাঞ্জুও। 

এরপরের নব্বই মিনিট অবশ্য প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ছড়ি ঘুরিয়েছে বৃষ্টি। তাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে তিন ওভার করে। 

বৃষ্টির একটু আগে হারানো ছন্দটা আর ফিরে পায়নি ভারত। প্রবীণ জয়াবিক্রমার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মনীশ পান্ডে, এলবিডব্লিউ হন হার্দিক পান্ডিয়া। উইকেটের অন্য পাশে অবশ্য সূর্যকুমার যাদব আশা দেখাচ্ছিলেন সফরকারীদের। কিন্তু তিনিও পেরোতে পারেননি ৪০ এর কোটা। ৩৭ বলে ৪০ করে তিনি ফিরেছেন আকিলা দনাঞ্জয়ার শিকার বনে। এরপর আর ভারত ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। ৩৫ রানে হারায় শেষ চার ব্যাটসম্যানকে। ২৩ বল বাকি থাকতেই অল আউট হয় ২২৫ রান তুলে।

জবাবে শ্রীলঙ্কা শুরুতেই হারায় মিনোদ ভানুকাকে। তবে এরপর রাজাপাকসেকে সঙ্গে নিয়ে আভিষ্কা নিখুঁত ব্যাটিং ১৬ ওভারেই লঙ্কান স্কোরবোর্ডে জমা করে ১০০ রান।

রাজাপাকশে অবশ্য থামেন ৬৫ রানে। শিকারি সাকারিয়া পরের ওভারেই তুলে নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকেও। লঙ্কানরা কিছুটা চাপেই পড়ে যায় তাতে। 
এরপর চারিথ আসালঙ্কা অবশ্য থিতু ব্যাটসম্যান আভিষ্কাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ২৪ রানে ফেরেন তিনিও।

এরপর চাহারকে প্রথম ওয়ানডে উইকেট উপহার দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন শানাকা। তার ডেলিভারিতে সর্বনাশ হয় সেঞ্চুরির দিকে এগতে থাকা আভিষ্কারও। চাহারের পরের ওভারেই স্টাম্পড হন চামিকা করুনারত্নে। তবে এরপর অবশ্য আর কোনো ভুলচুক না করে লক্ষ্য তাড়া করে স্বাগতিকরা। তাতেই পাওয়া হয়ে যায় প্রায় ভুলতে বসা এক জয়ের স্বাদ।

এনইউ