নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ভুল স্বীকার করতে হবে নাসুমকে
ঐতিহ্যবাহী প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে ব্যাটসমান হিসেবে এক যুগ আগে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন সুনামগঞ্জের নাসুম আহমদ। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর নায়ক এই ক্রিকেটারকে নিয়ে তাই এই ক্লাবের কর্মকর্তারা খুশি। তবে ক্লাবের সাবেক সদস্যের এমন সাফল্যে যেমন বাড়তি আনন্দ যোগ করছে তাদের মাঝে তেমনই চাপা কষ্টও রয়েছে।
কারণ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি ২০১৯ সালে তাকে জেলা কমিটিতে খেলতে না দিয়েই ফিরিয়ে দিয়েছিল। ২০১৫ সালে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে কারণ দেখিয়ে তাকে ওই সময় খেলতে না দেওয়ায় ফিরে যান নাসুম।
বিজ্ঞাপন
তবে তার বহিষ্কারাদেশের সময় এবং খেলতে না দেওয়ার সময়ও ক্লাবের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। তবে এখন ওই ক্লাবের কর্মকর্তাসহ জেলার সাধারণ মানুষ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন। তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হবে নাসুমকে।
নাসুম আহমেদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরঘেরা দুর্গম জনপদ মধুরাপুরে। তবে তিনি সপরিবারে বিভাগীয় শহর সিলেটে অবস্থান করেন। তার বাবা আক্কাস আলী একজন কৃষক। নাসুমের ছোট বেলাতেই অন্য আট-দশটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো স্বপ্ন নিয়ে সিলেটে পাড়ি জমায় তার পরিবার। পরে সিলেট থেকেই জায়গা করেন নেন জাতীয় দলে। বর্তমানে তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছে জেলার ক্রীড়াপ্রেমীরা।
বিজ্ঞাপন
সুনামগঞ্জ প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল বখত বলেন, ‘আমার হাত ধরেই প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে সুনামগঞ্জ জেলায় ক্রিকেট চর্চা শুরু করে নাসুম। তখন ২০০৯ সাল। সে ছিল উঠতি কিশোর। কিন্তু ক্রিকেট অন্তপ্রাণ ছিল। সুনামগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলার লক্ষ্যে নিয়েই এখানে আসে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমাদের ক্লাবে নিয়মিত খেলে। পরে সে বয়সভিত্তিক সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলে। এভাবেই সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিকেটের সঙ্গে ছেদ পড়ে তার।’
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের তরুণ খেলোয়াড় তাসলিমুল ইসলাম বলেন, ‘নাসুম ভাই ছিলেন আমাদের কাছে আদর্শ অলরাউন্ডার। আমরা ব্যাটিং বোলিংয়ে তার নৈপুণ্য দেখেছি। জেলার উঠতি কিশোররা তার সংস্পর্শ পেলে তার মতো আরো অনেক মেধাবীর ঝলক আমরা দেখতে পারব।’
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক অধিনায়ক হোসেন আহমদ রাসেল বললেন, ‘ক্রিকেট পাগল নাসুম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দলের তারকা ক্রিকেটারদের খেলার কৌশল খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতো। বা হাতে ধুন্ধমার ব্যাটিং করতো। সঙ্গে অফ স্পিন ছিল বাড়তি যোগ্যতা। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ব্যাটিং লাইন চাপা পড়ে আগুনে বোলিংয়ের কারণে। তবে আমার বিশ্বাস সে সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়েও তার যোগ্যতা দেখাতে পারবে জাতিকে। ক্রিকেটই তার ধ্যান ধারণার কারণে আরো দূর যাবে সে।’
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এনাম আহমদ বলেন, ‘বিশ্ববাসী আমাদের নাসুমকে চিনছে অফ স্পিনার বোলার হিসেবে। কিন্তু আমাদের ক্লাবে ২০০৯ সালে ছোট্ট নাসুম বাহাতি ব্যাটসমান হিসেবে সুযোগ পেয়েছিল। পরে সে অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে আমাদের টিমকে একাধিক জয় এনে দিয়েছিল। কিন্তু আমার তাকে বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে পারিনি।’
‘জেলা ক্রিকেট কমিটিও তাকে তেমন সুযোগ সুবিধা দিতে পারেনি। এ কারণে জাতীয় ক্রিকেট লিগ শুরু হলে সে আমাদের জানায় সুনামগঞ্জ জেলা দলে সুযোগ সুবিধা কম। তাই সিলেট দলে খেলবে। ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সে সিলেট জেলার হয়ে খেলে। এই কারণে তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজীবনের জন্য যখন তাকে নিষিদ্ধ করে তখন ওই বৈঠকে উপস্থিত হয়ে আমি তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম।’
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী নাসুমের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বলেন, ‘জেলা ক্রিকেট সংস্থার ক্রিকেট কমিটি জেলা পর্যায়ে জাতীয় লিগ শুরু হলে তাকে জেলা দলে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়ে সে সুনামগঞ্জের বদলে সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলে। এ কারণে তাকে ওই কমিটি তাকে আজীবন বহিষ্কার করেছিল।’
ইমদাদ রেজা চৌধুরী আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে নাসুম যখন ২০১৯ সালে ক্রিকেট খেলতে সুনামগঞ্জে আসে তখন এই কারণে তাকে খেলতে দেওয়া হয়নি। তবে এখন যদি সে লিখিতভাবে ভুল স্বীকার করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করে আমরা আগামী মিটিংয়ে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
এটি