টানা তিন ম্যাচ জিতে সিরিজটা আগেই নিজেদের করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু সেটি আর হলো না। চতুর্থ ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা।

কার্যত বাংলাদেশের ইনিংসের পরেই পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলেছেন অনেকেই। ১০৪ রানের মামুলি সংগ্রহের পর বাংলাদেশ যে ম্যাচ জিততে পারে, সেটি বিশ্বাস করেছেন ঠিক কজন? ডেন ক্রিশ্চিয়ান সাকিব আল হাসানের এক ওভারে ৫টি ছক্কা হাঁকানোর পর বাংলাদেশ দলের পাড় সমর্থকও অপেক্ষা করছিলেন, কত দ্রুত শেষ হবে এই ম্যাচ!

তবে মুস্তাফিজুর রহমান প্রায় বদলেই দিয়েছিলেন ম্যাচের ভাগ্য। এমন ম্যাচেও ফাইট করা যায়, লড়াই করে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনা যায় সেটি বল হাতে করে দেখিয়েছেন মুস্তাফিজ। তবে শেষ পর্যন্ত ভাগ্য স্বাগতিকদের পক্ষে কথা বলেনি। অল্প রানের জমজমাট ম্যাচে জয়ের হাসি অস্ট্রেলিয়ার। ক্রিশ্চিয়ানের সঙ্গে শেষদিকে অ্যাস্টন এগারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৬ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় অজিরা।

প্রায় ৪ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শুরুর ৩ ম্যাচ জিতে অবশ্য সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বাকি দুই ম্যাচ তাই রূপ নিয়েছে নিয়ম রক্ষার। অবশেষে টানা ৩ ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়াল সফরকারীরা।

সাকিব এই ম্যাচের ফলের সঙ্গে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও ভুলে যেতে চাইবেন। ব্যাট হাতে একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি সাকিব, ২৬ বল খেলে মাত্র ১৫ রান করে আউট হন। বল হাতেও উদার হস্তে রান বিলিয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার। প্রতিপক্ষ দলের লক্ষ্য পূরণের প্রায় অর্ধেক রানই দিয়েছেন তিনি। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫০ রান খরচ করেন সাকিব। কোনও উইকেট পাননি তিনি। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে এমন খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড নেই তার।

১০৫ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই শেখ মেহেদী হাসানের বলে উইকেট হারায় অজিরা। ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে না পারা অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড বোল্ড হন ২ রান করে। এরপর দৃশ্যপটে আসেন ক্রিশ্চিয়ান। প্রথম ৩ ওভারে অজি স্কোরবোর্ডে ১৫ রান। সাকিবের করা চতুর্থ ওভারে ক্রিশ্চিয়ান হাঁকান পাঁচ ছক্কা, প্রথম তিনটি টানা, পরে এক বল ডট দিয়ে আরও দুইটি। সে ওভারে আসে ৩০ রান।

নাসুম আহমেদের করা পঞ্চম ওভারে ওপেনার বেন ম্যাকডারমেট ফিরেছেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। ভাঙে ক্রিশ্চিয়ানের সাথে ৪৪ রানের জুটি, যেখানে ম্যাকডারমেটের অবদান ১২ বলে ৫। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের ঝলকে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে দুর্দান্ত প্রতাপে। ৬ষ্ঠ ওভারে দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন ক্রিশ্চিয়ান, থামেন ১৫ বলে ১ চার ৫ ছক্কায় ৩৯ রান করে। ওভারে কোনো রান খরচ করেননি মুস্তাফিজ। 

৭ম ওভারে সাকিব শেষ বলে রান আউট করেন ময়সেস হেনরিকসকে। ১০ম ওভারে স্লোয়ারে বোকা বানিয়ে অ্যালেক্স ক্যারিকে ৬ বলে ১ রান করে সাজঘরের পথ দেখান মুস্তাফিজ। ওভারে মাত্র ২ রান খরচ করেন। পরের ওভারেই শেখ মেহেদী বোল্ড করেন মিচেল মার্শকে (১৫ বলে ১১)। ১ উইকেটে ৪৭ থেকে ৬ উইকেটে ৬৫ সফরকারীদের। তবে সেখান থেকে অ্যাশটন আগার ও অ্যাশটন টার্নারের ৩৪ রানের জুটিতে জয়ের পথ মসৃণ হয় অস্ট্রেলিয়ার। 

দলকে জয় থেকে ৬ রান দূরে রেখে আগার ২৭ রান করে ফিরেছেন শামীম হোসেনের অসাধারণ এক ক্যাচে। অ্যান্ড্রু টাইকে (৭ বলে ৪) নিয়ে বাকি কাজ অনায়েসেই সারেন ২০ বলে ৯ রান করা টার্নার। ৬ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে ম্যাথু ওয়েডের দল। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ এবং শেখ মেহেদী নেন ২টি করে উইকেট।

এর আগে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আগের তিন ম্যাচে ২, ০, ২ রান করে আউট হলেও চতুর্থ ম্যাচে আবার সুযোগ পান সৌম্য সরকার। এ ম্যাচেও ব্যর্থ তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অজি পেসার জশ হ্যাজেলউডকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বৃত্তের মধ্যে অ্যালেক্স কেরির হাতে ধরা পড়ে আউট হন ১০ বলে ৮ রান করে। সাকিব আল হাসান ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রাণ। হ্যাজলউডের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ২৬ বলে ১৫ রান করে। 

অস্ট্রেলিয়া একাদশে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন মিশেল সোয়াপসন। ইনিংসের ১১তম ওভারে জোড়া আঘাতে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর নুরুল হাসান সোহানকে। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। এদিন থিতু হয়েও সুবিধা করতে পারেননি ওপেনার নাঈম শেখ। সোয়াপসনের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ৩৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে। আফিফ হোসেনকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি অ্যাগার। আফিফ আউট হন ১৭ বলে ২১ রান করে।

জিম্বাবুয়ে সফরে অভিষেক হওয়া শামীম পাটোয়ারী যেভাবে আলোচনায় আসেন মাত্র ২ ইনিংস দিয়ে, তার মান ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। আগের ৩ ম্যাচে ২ বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ তিনি। এ ম্যাচেও হাঁটেন একই পথে। ৬ বল খেলে ৩ রান করে আউট হন শামীম। পরে শেখ মেহেদী হাসানের ১৬ বলে ২৩ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১০৪ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় টাইগাররা।

টিআইএস