নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন সারওয়ার জাহান মানিক। রাজশাহীর ক্লাব মহুয়াবাগানের হয়ে খেলেছেন প্রথম বিভাগ। ৩২ বছর বয়সী মানিকের ক্রিকেটই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। প্রতিষ্ঠা পেতে নিজেকে রেখেছিলেন কঠোর অনুশীলনের ভেতর। যে ক্রিকেট আঁকড়ে ধরে জীবন গড়তে চেয়েছিলেন, সেই ক্রিকেটই কাল হলো মানিকের। 

অনুশীলনের সময় ডাবগাছে আটকে গিয়েছিল বল। সেটি নামাতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। এরপরই ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ডের হাড়। সেই থেকে শরীরের নিচের অংশ পুরোপুরি অবশ। হারিয়ে ফেলেছেন চলাচলের শক্তি।

২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনার পর থেকে বিছানায় মানিক। চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবার এখন সর্বশান্ত। দু দফা ভুল অপারেশনে ক্ষীণ হচ্ছে উঠে দাঁড়ানোর আশা। তবুও আশা ছাড়েনি পরিবার। ধার-দেনা করে চালিয়ে নিচ্ছে চিকিৎসা। এখন তার আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আর তাতে ব্যয় হবে অন্তত ২৫ লাখ টাকা। এই টাকা যোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। 

সারওয়ার জাহান মানিক নগরীর সপুরা পবাপাড়া এলাকার মোস্তাক আলীর ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। ক্রিকেট ছাড়াও তায়কোয়ান্দো জেলা দলের ৫০-৫৪ ওজন শ্রেণিতে খেলেছেন বহুদিন। নর্থবেঙ্গল স্পোটিং ক্লাবের হয়ে বাস্কেটবল খেলেছেন টানা ১০ বছর। শখে খেলতেন ফুটবলও। 

অনুশীলনের সময় ডাবগাছে আটকে গিয়েছিল বল। সেটি নামাতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। এরপরই ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ডের হাড়। সেই থেকে শরীরের নিচের অংশ পুরোপুরি অবশ।

খেলাধুলার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করে সংসারে হাল ধরার চেষ্টা করছিলেন। প্রথমে সামাজিক বন বিভাগে চাকরি নেন মাস্টাররোলে। সেটি ছেড়ে যুক্ত হন একটি বেসরকারী কোম্পানিতে। কিছুদিন সংবাদপত্রে পেস্টিং বিভাগের কর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। 

বিয়ে করে সংসারও গড়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের ৯ মাসের মাথায় দুর্ঘটনায় পড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। আপন ঘরই এখন পৃথিবী মানিকের। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মানিকের। 

তিনি জানান, নগরীর শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করছিলেন তিনি। ওই সময় বল মাঠের পাশের ডাবগাছে গিয়ে আটকে যায়। বল নামাতে গাছে উঠে পড়েন। ওই সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। গাছটি ছিল প্রায় ১৫ ফিট উঁচু। ভেবেছিলেন নির্বিঘ্নে বল নামিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, পড়ে যান গাছ থেকে। তখনই শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। 

দ্রুত হাসপাতালে নেন স্বজনরা। এরপর ৫দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, অপারেশন জরুরি। কিন্তু সিরিয়াল পেতে মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতাল ছেড়ে আসেন। ভর্তি হন নগরীর ডা. কায়সার রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতালে। বেসরকারি এই হাসপাতালে প্রথম দফা অপারেশন করেন নিউরো সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. লাইলাতুল কাদির মিল্কী। অপারেশন বাবদ চিকিৎসক নেন এক লাখ ৩০ হাজার হাজার টাকা।

দীর্ঘ ছয় মাসেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন ভারতে গিয়ে চিকিৎসার। বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালের গিয়ে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। প্রতিবেদন হাতে পেয়ে চিকিৎসক জানান, তার ভাঙা হাড়ের অপারেশন ভুল হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে ভারতে অপারেশন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এসে ফের অপারেশন করান।

এরপর পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ডাক্তার জানান, দীর্ঘ চিকিৎসা ও পুর্নবাসনে যেতে হবে তাকে। সবমিলিয়ে ব্যয় হবে ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা যোগাড় করা পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। মানিক জানান, দেশে দু দফা অপারেশন এবং ভারতে চিকিৎসায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই ঋণ করতে হয়ে তিন লাখ টাকার মতো। সহায় সম্বল বলতে মাথা গোঁজার ঠাঁয় টুকুনই। সেটি বিক্রি করলে হয়তো কিছু টাকার যোগাড় হবে। কিন্তু চিকিৎসা শেষে এসে কোথায় দাঁড়াবেন? 

সবমিলিয়ে ব্যয় হবে ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা যোগাড় করা পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। মানিক জানান, দেশে দু দফা অপারেশন এবং ভারতে চিকিৎসায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই ঋণ করতে হয়ে তিন লাখ টাকার মতো।

ছোটো ভাই মাসুদ রানা রতন আনসার সদস্য ছিলেন। ভাইয়ের চিকিৎসায় ভারতে যাওয়ায় সেই চাকরি চলে গেছে তার। রতনও এখন বেকার। সংসারের চাকা সচল রাখতে রিকশা চালাচ্ছেন বাবা মোস্তাক আলী। ২০ মাসের সন্তান নাবিল আল আমিনের মুখ চেয়ে পড়ে রয়েছেন স্ত্রী আফরোজা খাতুন।

পরিবারের দিকে তাকিয়ে মানিক আবারও উঠে দাঁড়াতে চান। খেলাধুলা না হোক, আয় রোজগার করে সংসারের হাল ধরতে চান। এ জন্য সমাজের বৃত্তবানদের সহায়তা চান তিনি।

সারওয়ার জাহান মানিককে সাহায্য পাঠাতে পারেন তার ব্যক্তিগত বিকাশ, নগদ ও রকেট নম্বরে- ০১৭৬৫৮৮৬২৬২। এ ছাড়াও ডাচ-বাংলা ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ১৩৫১৫৮০০০৫৭৯২ -এ সাহায্য পাঠানো যাবে।  

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এটি/এমএইচ