সময় ঘনিয়ে এসেছে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঢাকে কাঠি পড়েছে বেশ আগে। এবার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে অপেক্ষায় মাঠের মহারণ, যুদ্ধ ব্যাট-বল আর অস্তিত্বের। এ লড়াই শ্রেষ্ঠত্বের, নিজের যোগ্যতা প্রমাণের। বিশ্বকাপের মিশনে দেশ ছাড়ার আগে আশা দেখিয়ে গেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ও ক্রিকেটাররা। একই প্রত্যাশা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদেরও। তবে সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও কোচ আফতাব আহমেদ বললেন, বিশ্বকাপে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা রাখা উচিত হবে না।

এতদিনে সে গল্প সবারই জানা। এযাবৎ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কোন সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশ দলের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একমাত্র জয় একপাশে রাখলে টেস্ট খেলুড়ে কোন দলের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যাওয়ার আগে একাধিকার বলে গেছেন, এবার বিশ্বকাপে ভালো সুযোগ টাইগারদের। নির্বাচকরা এক কাঠি সরেস, বেশ গর্ব করে বলেছেন, এবারের দলটি ইতিহাস সেরা!

বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ দল নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন না। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো পরাশক্তিদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে প্রস্তুতিটাও যে ভালো হয়েছে সেটি স্বীকার করে নিলেন এক বাক্যে। আস্থা রাখছেন জাতীয় দলের সাবেক সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমদের ওপর।

ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফতাব বললেন, ‘এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমাদের দলটা বেশ ভালো হয়েছে। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতিটাও খারাপ হয়নি। সে হিসেবে আশা তো করাই যায় এবার ভালো একটি ফলাফল আসবে।’

আফতাবের এই কথাটুকু যে সাবেক ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে বলা কথা ছিল সেটি ফুটে উঠল তার পরের আলাপনে। বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসলেন আফতাব। জানালেন, এই দলটির প্রতি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা রাখা উচিত হবে না। এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি।

আফতাব বলেন, ‘আমি বলব প্রত্যাশা বড় রাখা উচিত হবে না। প্রথম পর্ব পার করে সুপার টুয়েলভে গেলে আমাদের প্রতিপক্ষ দলগুলো বেশ শক্তিশালী। আপনি যদি প্রত্যাশা আকাশচুম্বী রাখেন তাহলে হবে না। আমরা সবাই জানি বিশ্বকাপ খুব চাপের জায়গা। এখানে যাদের নার্ভ যত শক্ত, তাদের রেজাল্ট করার সক্ষমতা তত বেশি। আমাদের প্রতিপক্ষ যেহেতু খুব কঠিন, সে হিসেবে আমাদের সামর্থ্য থেকে বেশি দিতে হবে। আমি বলব আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস হিতে-বিপরীত হতে পারে।’

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে সমালোচকরা তেঁতো কথা বলে আসছেন। ঘরের মাঠে মন্থর উইকেটের ফায়দা নিয়ে সিরিজ জয় কোন কাজেই আসবে না বিশ্বকাপে। এতে বরং নিজেদেরই ক্ষতি ডেকে এনেছে বাংলাদেশ। টানা দুই সিরিজে রান পাননি ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও হার। দুই ওপেনার পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না। মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসানরাও ব্যাট হাতে ছন্দে নেই একেবারে।

আফতাব স্পষ্ট জানালেন, বাকিদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেই বিশ্বকাপ শুরু করবে বাংলাদেশ। আফতাবের জবাব, ‘অবশ্যই মাইনাস পয়েন্ট। অভিনন্দন যে আমরা ঘরের মাঠে দুটি সিরিজ জিতেছি। তবে এখানে আমাদের ব্যাটসম্যানরা একেবারেই ভালো করতে পারেনি। যেহেতু বিশ্বকাপটা খুব কাছে ছিল, সে হিসেবে আমাদের উচিত ছিল যে বিশ্বকাপটাকে নজরে রেখে খেলার। যদি আমরা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে নিতাম, তাহলে আমার মনে হয় আরো ভালো হতো।’ 

সঙ্গে যোগ করেন আফতাব, ‘ওমানে আমরা যে ধরনের উইকেট দেখলাম সেখানে আপনাকে ১৮০-২০০ রান টপকাতে হবে। ওই জায়গাটা যদি চিন্তা করেন তাহলে আমরা কিছুটা ব্যাকফুটে আছি।’

প্রথম পর্ব পাড়ি দিতে পারলে বিশ্বকাপে লম্বা জার্নি হবে বাংলাদেশের। করোনাকালীন সময়ে ভাইরাসজনিত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সঙ্গে ইনজুরি আর ক্লান্তি তো আছেই। বাকিরা যেখানে ১৫ জন মূল স্কোয়াডের সঙ্গে একাধিক বাড়তি ক্রিকেটার নিয়ে বিশ্বমঞ্চে, সেখানে দুজন বাড়তি খেলোয়াড় নিয়ে গিয়ে একজনকে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দেশের বিমানে তুলে দিয়েছে বোর্ড। একে তো স্কোয়াডে লেগ স্পিনার নেই, তার উপর নেট বোলার সঙ্কট! আফতাব জানালেন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হতে পারে গোটা দলকে।

আফতাব বললেন, ‘যেহেতু জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকবে দল তখন বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে বাইরে থেকে এনে নেট বোলার ব্যবহার করতে পারবেন না। এখানে কিন্তু অতিরিক্ত বোলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেটে শুরুর ৪ জন ব্যাটসম্যান অনেকক্ষণ ব্যাটিং করবে, তখন আপনি সব বোলারদের ব্যবহার করতে চাইবেন। এরপরের ব্যাটসম্যানদের নেট শেষ করা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যাবে ‌যদি বাড়তি বোলার না থাকে। এজন্য আমার মনে হয় আমাদের অবশ্যই অতিরিক্ত বোলার রাখাটা ভালো হতো।’

টিআইএস/এমএইচ