স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হবেন। খেলবেন জাতীয় দলের হয়ে। হরিয়ানায় বয়সভিত্তিক দলেও ছিলেন তিনি। কিন্তু অভাবের সংসারে যখন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা- মরে যেতেই পাল্টে যায় সব। তখন ব্যাট-বলের জীবনকে বিদায় জানানো ছাড়া উপায় ছিল না। এখন অবশ্য ভারতের ম্যাচে যারা গ্যালারিতে চোখ রাখেন, তারা নাম না হোক অন্তত তার চেহারাটা চেনেন। বলছি চণ্ডীগড়ের রাম বাবুর কথা। ভারতীয় ক্রিকেটের আইকনিক ফ্যান।

অবশ্য তাকে আলাদা করে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভক্তও বলা যায়। মাহি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট-বল তুলে রেখেছেন। তবে রাম বাবু ঠিকই ধোনির স্লোগান দিয়ে যনি। যেখানেই ভারতের ক্রিকেট, ছুটে আসেন সেখানেই। শুক্রবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সামনে দেখা হয়ে গেল এই ধোনি ভক্তের সঙ্গে। 

কথা বলতেই জানা গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও খোঁজ খবর রাখেন তিনি। বিশেষ করে টাইগার শোয়েব তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেই বন্ধুটির দল টানা ৫ ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। ব্যাপারটা বেশ যন্ত্রণাও দিচ্ছে রাম বাবুকে। সব মিলিয়ে তিনবার বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন বলেও জানিয়ে রাখলেন। প্রতিবারই মুগ্ধ হয়েছেন আতিথেয়তায়।

ধোনির এই বড় ভক্তের বাংলাদেশের সমর্থকদের বার্তা দিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশে আমার বন্ধু রয়েছে, টাইগার শোয়েব। ওখানকার প্রতিটি মানুষ ভালো। আমি তোমাদের সবাইকে পছন্দ করি। এবার ভালো খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। গতিটা ধরে রাখতে হবে।’ সঙ্গে দিলেন বাংলাদেশের স্লোগান,  ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’

ধোনি ভারতীয় দলের সঙ্গে ফের যুক্ত হয়েছেন। এবার তিনি বিরাট কোহলিদের মেন্টর। ব্যাপারটায় দারুণ খুশি রামবাবু। জানাচ্ছিলেন, ‘ধোনি ভাই আমার হৃদয়ে। যতদিন বেঁচে থাকবো তার নামে স্লোগান দিয়ে যাবো। আজ এই যে মাঠে এসেছি, খেলা দেখেছি সব টিকিট তো ধোনিই দেন। আমি ধোনিকে অনেক ভালবাসি। আমার জীবনটা তিনিই গড়ে দিয়েছেন!’

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুঁতোয় ঝুলছে ভারতের সেমিফাইনাল ভাগ্য। প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের কাছে হারই বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিরাট কোহলিদের। এরপর আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারালেও এখনো অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় ৭ নভেম্বর আফগানিস্তানের কাছে নিউজিল্যান্ডকে হারতে হবে। আর নিজেদের তো শেষ ম্যাচে নামিবিয়াকে হারাতেই হবে। এই যদি-কিন্তু পেরিয়ে ভারত সেমিতে উঠবে এমন আশা রামবাবুর। 

স্লোগান তুলে জানান দিচ্ছিলেন, ‘আমি চাই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত ফাইনাল খেলুক। ওদের কাছে হারের প্রতিশোধটা এই বিশ্বকাপেই নিতে চাই। এখন আফগানিস্তানের জন্য গলা ফাটাবো। চাই ওরা যেন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়।’ কাজটা যে সহজ নয়, সেটা কী আর অন্ধ সমর্থক মন মানতে চায়?

এই যে হাসি খুশি রাম বাবু, ভারতের খেলা হলেই মাঠে স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তুলেন, তার জীবনটা কিন্তু ফুলে ফুলে সাজানো নয়। হাসির আড়ালেই লুকিয়ে আছে দুঃখ। পেশায় তিনি গাড়ি চালক। করোনার কারণে আয়-রোজগারও বেশ কম। তারপরও মোহালিতে গাড়ি চালিয়ে জুটে তিনবেলা খাবার। কিছুটা পয়সা জমিয়ে এরপর ভারতের খেলা হলেই উড়াল দেন। মাঝে-মধ্যে খুঁজে বেড়ান স্পন্সরও!

বিরাটব্রিগেডের জন্য গলা ফাটাতে এখন আছেন দুবাইয়ে। তবে নিজের পকেটের যে টাকা ফুরিয়ে এসেছে সেটা আঁচ করা গেল। খেলা শেষে হোটেলে ফিরবেন, একটু লিফটের আশায় কতজনের সঙ্গে যে কথা বললেন! এভাবেই প্রতিটি দিন হয়তো কাটে রামবাবুদের। কিন্তু গ্যালারিতে তাদের হাসিমুখ দেখে সেই দুঃখ টের পাওয়ার উপায় কোথায়?

এটি