পরিসংখ্যানের খাতায় আর একটা অর্ধশতক হিসেবেই লেখা থাকবে বেন স্টোকসের ইনিংসটা। লেখা থাকবে না কত কিছু যে ঘটে গেছে এই এক ইনিংস। ব্লকাথন, প্রতি বল পর পর ব্যথায় কাতরে ওঠা, স্টাম্পে বল আঘাত করলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরা, কিংবা সেই বলেই তাকে দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত, কতো কিছু হয়ে গেছে এই একটা ইনিংসে! খেলা না দেখে থাকলে এই ইনিংসের মাহাত্ম্য বোঝা কঠিন।

সেই এক ইনিংসে স্টোকস কাটিয়েছেন খরা, হেসেছে তার ব্যাট, করেছেন ফিফটি। তাতেই বেপথু ইংল্যান্ড পেয়েছিল পথের দিশা। তার বিদায়ের পর জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে চড়ে ফলো অন এড়িয়েছে ইংলিশরা।

স্টোকসের ইনিংসের শুরুটা যখন হয়েছে ইংল্যান্ড তখন রীতিমতো কাঁপছে। ৩৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলায় চোখ রাঙাচ্ছিল ফলো অনও। উইকেটে এসে অপর পাশে দাভিদ মালানকেও হারালেন এক ওভার পরই। সঙ্গে সঙ্গে চলে এলো মধ্যাহ্ন বিরতি।

এরপরই শুরু তার সংগ্রামের। জায়গা মেপে, গতির হেরফের রেখে দারুণ বল করে যাচ্ছিলেন অজি বোলাররা। সেটাকেই সমীহ করে শুরু হলো তার ‘ব্লকাথন’, বলের পর বল টানা ছেড়ে যাচ্ছিলেন, নয়তো ডিফেন্ড করছিলেন বুঝেশুনে। সঙ্গী জনি বেয়ারস্টোও কম যাচ্ছিলেন না, সঙ্গ দিচ্ছেন সেই ব্লকাথনে। যার ফলে এক পর্যায়ে টানা ৭০ বলে কোনো রান পায়নি ইংলিশরা। 
সেই খরা অবশেষে কাটল ২৫তম ওভারে। স্টোকসের সেই রানটাও এলো ব্যাটের কোণায় লেগে, বলটা চলে গেল গালিতে; একটা রান যখন অবশেষে এলো তার ব্যাট থেকে, তখন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হাজির স্বাগতিক দর্শকরা বিপুল হর্ষধ্বনিতেই অভিবাদন জানালেন তাকে। সেটা যে বিদ্রুপার্থে ছিল, তা বলাই বাহুল্য। 

তবে রানের খাতা খুলতেই রানের ফোয়ারা ছুটলো। ভাগ্যও যেন কিছুটা পক্ষ নিলো তার। ৩১তম ওভারে ক্যামেরন গ্রিনের বলে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তে তর্জনি তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার পল রেইফেল। তার রিভিউতে দেখা গেল, প্যাডের ধারে কাছেও যায়নি বল। তবে তার লিভ করা বলটা চুমু দিয়ে গিয়েছিল অফ স্টাম্প। বেল পড়েনি, তাই আউটও হননি তিনি। এলবিডব্লিউর তো প্রশ্নই ওঠে না! 

আগের দিনে পাওয়া সাইড স্ট্রেইনের চোটটা ছিল। সঙ্গে যোগ হলো অজিদের বাউন্সারে পাওয়া ব্যথাও। তবে তাতে মাথা নোয়ানোর ইচ্ছা মোটেও ছিল না স্টোকসের। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন, তবু বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন।

অনির্দিষ্টকালের বিরতি শেষে চলতি অ্যাশেজে ফিরে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছিলেন না। হাসছিল না তার ব্যাট, বল হাতেও শাসাতে পারছিলেন না প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। দ্বিতীয়টা হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত চলতি অ্যাশেজে কম। তাই প্রথমটাই যেন বেছে নিলেন আজ। অবশেষে হাসলো তার ব্যাট। পেলেন ফিফটির দেখা। কিছুক্ষণ পর সঙ্গী বেয়ারস্টোও পেলেন ফিফটি। তাতে থরহরিকম্পমান ইংলিশরাও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেল। 

ফিফটির পর দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিলেন স্টোকস। তবে তার সে চেষ্টা টিকল না বেশিক্ষণ। ৫১তম ওভারে নাথান লায়নের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। ভাঙে বেয়ারস্টো আর তার ১২৮ রানের জুটি। 

এরপর উইকেটে আশা বাটলার অবশ্য টিকতে পারেননি। স্টোকসের বিদায়ের কিছু পরেই তিনি ফেরেন রানের খাতা খোলার আগে। তিন ওভারের ব্যবধানে দুটো উইকেট হারিয়ে আবারও পথ হারানোর শঙ্কা ফেরে ইংলিশ শিবিরে। তবে জনি বেয়ারস্টো তার সংগ্রামটা জারি রেখেছেন। প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত ৯০ রানে অপরাজিত আছেন তিনি, তাতেই ইংলিশরা এড়িয়েছে ফলো অন। ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৮ রান তুলে ফেলেছে দলটি।

এনইউ