বাবার অনুপ্রেরণায় পথচলার শুরু সামিউল ইসলাম সিয়ামের। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নামও। নজর কাড়া লাইন ও লেন্থের সঙ্গে বলে আছে টার্ন। তার খেলার কারিশমা দেখে বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ডাক আসে লেগ স্পিনার সিয়ামের। মাত্র ৫ বছরে সিয়ামের পুরোদস্ত লেগ স্পিনার হওয়ার শুরু। এই গল্পটা যতটা আনন্দের। এর চেয়েও শঙ্কার কথা এই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন।

সিয়ামের বাবা দেলোয়ার হোসেন একজন শিক্ষক, ছিলেন ফুটবলপ্রেমি। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন গোপালেরপুর গ্রামের বাসিন্দা। অভাবের সংসারে তিনিও বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। নিজে কিছু করতে না পারলেও ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন বুনতেন তিনি। 

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে চলে তার সংসার। চার সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও দেলোয়ার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দুঃখ কষ্টে জীবন পাড় করলেও চোখে মুখে তার আকাশ সমান স্বপ্ন। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতায় ছেলেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে না পারলেও সিয়ামকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। এখন ছেলের জন্য একটু সহযোগিতার আশায় দিন কাটছে দেলোয়ারের।

সরেজমিনে গিয়ে ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মাঠেই অনুশীলন করতে দেখা যায় সিয়ামকে। দারুণভাবে বল টার্ন করাতেও দেখা যায় সিয়ামকে। সে বলছিল, ‘আমি ৭ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলি। ইউটিউবে শেন ওয়ার্ন, রশিদ খানের বোলিং দেখে লেগ স্পিনার হওয়ার ইচ্ছে জাগে, এরপর চেষ্টা শুরু করি।
 
‘বাবার অভাবের সংসার, আমাদের এই উপজেলায় ক্রিকেটের কোন পিচ নেই। এখান থেকে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম প্রায় ৪০ কিঃমিঃ দূরে। সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও শহরে মেস, হোস্টেলে থাকার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের নেই।’

সিয়ামের বাবা দেলোয়ার জানান, ‘ছোটবেলা থেকে সিয়ামের ছিল ক্রিকেটের প্রতি অন্য রকম টান। ক্রিকেট বল না থাকায় গাছের পেয়ারা, সুপারি দিয়ে বাড়ির উঠানে একা একা বোলিং করতো। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে কষ্ট হলেও মাঝে মধ্যে ব্যাট আর রাবার ডিউজ বল এনে দিতাম।আমি জানতাম না সে লেগ স্পিনার কৌশল এভাবে আয়ত্ব করবে। সেদিন সোহাগ নামে এক ভাই ওর খেলা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। সেদিনই জানতে পারি সে খুব ভালো লেগ স্পিন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিয়ামের লেখাপড়ার প্রতি আমি যথেষ্ট যত্ম নেই। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি তার খেলাটাকেও প্রধান্য দেই।তবে এখন একটাই চাওয়া অর্থের অভাবে যেন ছেলেটার স্বপ্ন ডুবে না যায়।’

কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার কোচ বিজন কুমার দাস বলেন, ‘সিয়ামের বোলিং এ্যাকশন দেখে বয়স ভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪ দলে নিয়েছিলাম। বোলিং কৌশলে ওর কিছুটা দুর্বলতা আছে। তবে সিয়ামকে ভালো প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে সে দারুণ করবে।’

কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান লোবান বলেন, ‘সিয়ামের বিষয়টি আমি সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রশিক্ষণ নিতে জেলা শহরে নিয়মিত আসতে পারে না। আমার পক্ষ থেকে সিয়ামের থাকার ব্যবস্থা, খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো। কিন্তু সিয়ামের যাতায়াত, খাওয়া ইত্যাদি কিছু বিষয় আছে এসব বিষয়েও তার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এমএইচ