সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১২ অলআউট, ৪৪ ওভার (হোপ ৫৩; অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ান ৪-২৮)
আয়ারল্যান্ড ২১৪/৮, ৪৪.৫ ওভার (ম্যাকব্রায়ান ৫৯, রস্টন চেজ ৩-৪৪)
ফল- আয়ারল্যান্ড দুই উইকেটে জয়ী
সিরিজ- আয়ারল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচসেরা- অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ান
সিরিজসেরা- অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ান

ম্যাচের ভাগ্যটা যেন দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। শেষমেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ হাসিটা হাসল আয়ারল্যান্ডই, লো স্কোরিং ম্যাচটা জিতল দুই উইকেটের ব্যবধানে। তাতে ইতিহাসই গড়ে ফেলল আইরিশরা। এই প্রথম আইসিসির কোনো পূর্ণ সদস্যের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে সিরিজ জিতল দলটি।

মঞ্চটা গড়া ছিল আগেই। সিরিজের প্রথম ম্যাচে লড়াই করে হারলেও আইরিশরা জিতেই গিয়েছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ম্যাচে। তাতেই সিরিজের শেষ ম্যাচটা অঘোষিত ফাইনালে রূপ নিয়েছিল। 

জিতলেই গড়া হয়ে যাবে ইতিহাস, এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আইরিশরা জিতেছে টস, চলতি সিরিজের আগের দুই ম্যাচে যেমন জিতেছিল। সিদ্ধান্তেও কোনো হেরফের হয়নি, অধিনায়ক পল স্টার্লিং শুরুতে বোলিংই বেছে নিয়েছিলেন। 

তবে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা উইন্ডিজ সে সিদ্ধান্তটাকে যেন ভুল প্রমাণেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। অন্তত দুই ওপেনার তো বটেই। জাস্টিন গ্রিভস ৩১ বলে ১২ রানের ইনিংসে ছিলেন বেশ সাবধানী। তবে অপর দিক থেকে শেই হোপ যেন ছিলেন খুনে মেজাজেই। তাতেই কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে স্বাগতিকরা পেয়ে গিয়েছিল নিখুঁত একটা সূচনা, বিনা উইকেটেই তুলে ফেলেছিল ৭২ রান।

৩৯ বলে ৫১ রান করা হোপ ফিরলেন ইনিংসের ১১তম ওভারে। এরপরই যেন ‘মড়ক’ লাগল উইন্ডিজ ইনিংসে। ক্রেইগ ইয়াং ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ান তুলে নিলেন দুটো করে উইকেট। তাতেই ১৪ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে স্বাগতিকরা।

পরিস্থিতিটা খারাপ থেকে আরও খারাপে রূপ নিল যখন ইনিংসের ২৩তম ওভারে রস্টন চেজ ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। উইন্ডিজ ১০১ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছে।

এরপর ৬২ রানের জুটি গড়ে জেসন হোল্ডার আর রোমারিও শেফার্ড পরিস্থিতিটা সামাল দিয়েছেন বটে, কিন্তু উইন্ডিজের আর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো হয়নি। আকিল হোসেইন আর ওডিয়ান স্মিথের মতো লেজের ব্যাটারদের স্বাগতিকরা কিছুটা প্রতিরোধ তুলে দাঁড়িয়েছিল, তা আইরিশদের অল্পস্বল্প হতাশাই উপহার দিয়েছিল, তবে উইন্ডিজকে বড় রানের দিশা আর দিতে পারেনি। লাভ যা হয়েছে, ক্যারিবিয়রা তাতে পেরোতে পেরেছে ২০০ রানের কোটা, এই যা! 

২১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সফরকারীরা ধাক্কা খায় শুরুতেই। উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ফেরেন প্রথম বলে। তবে পল স্টার্লিং আর ম্যাকব্রায়ানের ৭২ রানের জুটিতে তারা সে ধাক্কা সামলায় ভালোভাবেই। প্রতি আক্রমণে দ্রুত ৪৪ রান তুলে স্টার্লিং ফিরলেও আইরিশদের হয়ে লড়াইটা চালিয়ে যান ম্যাকব্রায়ান, সঙ্গী হিসেবে পান হ্যারি টেক্টরকে। দু’জনের ৭৯ রানের জুটি অনেকটাই জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয় দলটিকে।

তবে স্মিথের বলে ম্যাকব্রায়ান এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতেই শুরু হয় নাটক। ১৫২-২ থেকে দুইশ’ পেরোনোর আগেই ষষ্ঠ উইকেট খুইয়ে বসে সফরকারীরা, উইন্ডিজ তখন দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে সিরিজ জেতার স্বপ্নে বিভোর। গ্যারেথ ডেলানির দশ রানের ক্যামিওতে সে ধাক্কা সামলায় আইরিশরা, তবে তিনি ফিরতেই আরও এক প্রস্থ নাটক যেন দেখল স্যাবাইনা পার্ক। চার রান তুলতেই হারিয়ে বসে দুই উইকেট। 

পাঁচ রানের ব্যবধানটাকে তখন আয়ারল্যান্ডের জন্য মনে হচ্ছিল এক আলোকবর্ষের দূরত্বে। ভাগ্যিস মার্ক অ্যাডায়ার আর ইয়াং ছিলেন, দু’জনে মিলে আর দলকে পা হড়কাতে দেননি, তাতেই গড়া হয়ে যায় ইতিহাস। দুই উইকেটের রূদ্ধশ্বাস জয়ে দলটি পকেটে পুরে ফেলে সিরিজ। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের মূল্যবান ২০টা পয়েন্টই সঙ্গী হয় তাদের। ফলে ১৮ ম্যাচ থেকে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে দলটি উঠে এসেছে সুপার লিগের ৩য় অবস্থানে, দুইয়ে থাকা বাংলাদেশ থেকে ১২ পয়েন্টে পিছিয়ে দলটি। শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট।

এনইউ