বাফুফে পরিচালিত এএফসি প্রো লাইসেন্স কোচিং কোর্স করছেন দুই বিশ্বকাপ খেলা দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার লি চুন সু। অন্য সবার চেয়ে তাই লি’র প্রতি সবার আকর্ষণ একটু বেশি। মাঠে অত্যন্ত দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড হলেও ব্যক্তিজীবনে ধীরস্থির লি। ইংরেজি তেমন বোঝেন না। তাই এক কোরিয়ান দোভাষীকে নিয়ে কোচিং কোর্সে অংশ নিচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সেই দোভাষীকে সঙ্গে নিয়ে ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলা কিংবদন্তি ফুটবলার লি মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের।

-দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বিষয় ২০০২ বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে আপনি অন্যতম ফুটবলার। সেই স্মৃতি কিভাবে দেখেন

লি চুন সু:  নিঃসন্দেহে এটি কোরিয়ান ফুটবলের সুখস্মৃতিগুলোর একটি। শুধু কোরিয়া নয় আমি মনে করি এশিয়ান ফুটবলের জন্যও বিষয়টি দারুণ সুখের। স্পেন, ইতালির মতো ফুটবল পরাশক্তিকে কোরিয়া হারাতে পারে এটা আগে অনেকেই ভাবতে পারেনি। বিশ্বকাপের পর থেকেই ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার দেশগুলো এশিয়াকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছে। 

-সেই বিশ্বকাপে জার্মানির সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াই করে আপনারা স্বপ্নের ফাইনালে যেতে পারেননি...
 
লি চুন সু:  ব্রাজিল ও জার্মানি যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনাল খেলেছে। ইতিহাসটি ভিন্ন হলেও হতে পারত। যদি আমার শটটি অলিভার কান সেভ না করতেন। তখন ভিন্ন গল্পও হতে পারতো। সেই সেমিফাইনালের স্বপ্নটি ফিরে ফিরে আসে আমার কাছে প্রায়ই। 

-২০০২ সালে কোরিয়া স্বাগতিক হিসেবে দুর্দান্ত খেলেছিল। ২০০৬ জার্মানির বিশ্বকাপে সেভাবে দেখা যায়নি...

লি চুন সু:  পরের বিশ্বকাপটা আমাদের ভালো যায়নি। গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি। তবে ফাইনালিস্ট ফ্রান্স কিন্তু আমাদের সঙ্গে ড্র করেছিল। 

-দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে পার্ক জি সুং অন্যতম। আপনিও কি তাকে জনপ্রিয় ফুটবলার হিসেবে মানেন?

লি চুন সু: পার্ক অবশ্যই কোরিয়ার সেরা ফুটবলারদের একজন। সে ম্যানইউতে খেলেছে। কোরিয়ান ফুটবলকে ভিন্ন পরিচিত এনে দিয়েছে। আমার ও পার্কের শুরু এক সাথেই। আমি ও সে অ-১৮ দলে এক সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। 

-ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গতি অনেক বেশি। আপনার সতীর্থ পার্কের রানিং ছিল অসম্ভব। তাই অনেকে তাকে বলতেন তিন ফুসফুসের অধিকারী। 

লি চুন সু:  আসলেই বিষয়টি অনেকটা এরকমই (হাসি)। দৌড়ানোর ক্ষমতাটা তার স্বভাব জাত। সে অত্যন্ত পরিশ্রমী ফুটবলার।

-২০০৬ সালে দোহা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি ম্যাচে আপনি খেলেছিলেন। সেই ম্যাচটি যদি একটু স্মরণ করতেন...

লি চুন সু:  বাংলাদেশের ম্যাচটি মনে আছে। আমরা ম্যাচটি জিতেছিলাম কিন্তু বাংলাদেশ সব সময় ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে চ্যালেঞ্জিং মনোভাবটা অনেক।

-দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া তো বটেই ফুটবল বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ দেশগুলোর একটি। কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে কোচিং কোর্স করতে আসার কারণ

লি চুন সু: আমার ক্যারিয়ারের একটা টার্নিং পয়েন্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশে একটি টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিলাম বিশ্বকাপের আগে (১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ)। সেই টুর্নামেন্টে গোল করার পাশাপাশি দারুণ খেলেছিলাম। এরপর থেকে ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশে আবার আসার। যখন দেখলাম এখানে প্রো লাইসেন্স কোর্স হবে তখন সেই সুযোগটি নিয়ে নিলাম।

-এই কোর্সে বাংলাদেশের অনেক কোচ রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে আপনার কেমন ধারণা হলো ?

লি চুন সু:  বাংলাদেশের কোচরা যথেষ্ট মেধাবী। 

-কোরিয়ানরা মেধাবী তবে ভাষা সমস্যার জন্য ফুটবল বিশ্বে কোচিংয়ে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। ভাষা কতটুকু সমস্যা কোচিংয়ের জন্য?

লি চুন সু: অবশ্যই ভাষা একটি প্রতিবন্ধকতা। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভাবের আদান-প্রদান সঠিক ও যথার্থ না হলে সেটা অর্থবহ হয় না। কোরিয়ান ফুটবলাররা এখন আগের থেকে অনেক বেশি শিক্ষিত হচ্ছে।  তবে আরেকটি বিষয় ফুটবল হৃদয়ের স্পন্দন। একজন কোচ কি নির্দেশনা দিচ্ছেন সেটা ফুটবলার তার বুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পারেন। আবার ফুটবলার কোথায় ভুল করছেন সেটাও কোচ বুঝতে পারেন। 

-বাংলাদেশে কোচিংয়ের প্রস্তাব পেলে আসবেন ?

লি চুন সু:  ফুটবল খেলেছি ভিয়েতনাম,কোরিয়া, সৌদি.স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে। এখন কোচিংয়ের জ্ঞান অর্জন করছি। এই জ্ঞান প্রয়োগের যেখানে ভালো সুযোগ পাব সেখানেই যাব। বাংলাদেশে ভালো কোনো প্রস্তাব পেলে কেন নয়।

-ফুটবলে চিরদ্বৈতের মধ্যে অন্যতম উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। বিষয়টি উপভোগ্য না অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।

লি চুন সু:  এই বিয়ষটি অনেক বিস্তৃত এই মুহূর্তে নয় (ক্লাসের তাড়া)।

এজেড/এটি