আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজের দল তৈরি করতে মন্দের ভালো খুঁজতে হচ্ছে নির্বাচকদের। বাঁহাতি পেসারের অভয়নগর না হলেও হাতে একাধিক বিকল্প আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে শরিফুল ইসলাম জাতীয় দলে থিতু। মেহেদী হাসান রানা আর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বেশ ভালো ছন্দে আছেন। তবে ভাবনার নাম ডানহাতি পেসার। 

তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন চোটের সঙ্গে লড়ছেন। রুবেল হোসেনের পড়তি ফর্ম। সাদা বলের ফরম্যাটে ভাবনাই নেই এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদরা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কামরুল ইসলাম রাব্বি রান বিলাচ্ছেন দুহাতে! ছন্দ হারিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। ডানহাতি পেসার খুঁজতে নির্বাচকদের যেন গলদঘর্ম অবস্থা। 

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আলো ছাড়ানো রিপন মণ্ডলকে নিয়ে হয়তো এখনি ভাবছেন না নির্বাচকরা। আবার না ভেবেও যেন উপায় নেই! ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে এসে পরের বছরই জাতীয় দলের ক্যাপ মাথায় তোলেন শরিফুল। জায়গা করে নিয়েছেন তিন ফরম্যাটেই। মাত্র ২০ বছর বয়সে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন। এখনি শরিফুলের মতো সুযোগ না পেলেও ডানহাতি পেসার রিপন এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে ঝলক দিয়েছেন, তাতে তাকে নিয়ে আলাদাকরে ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে।

ঢাকা পোস্টকে রিপন বলছিলেন, জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া হবে স্বপ্নের মতো। তবে সুযোগ আসলে লুফে নিতে চান। যদিও এখনই এনিয়ে ভাবছেন না তিনি। আগামী এপ্রিলে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নিজেকে চেনাতে চান বিস্তরভাবে। এরই মধ্যে দলবদল চূড়ান্ত করেছেন শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে।

রিপন বলেন, ‘জাতীয় দলের জন্য অবশ্যই প্রস্তুত। সুযোগ আসলে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। তবে এখন ভাবনা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। আমি প্রিমিয়ার লিগে ভালো করতে চাই। সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হতে চাই।’

১/২৩, ৪/২৪, ৩/৩১, ৪/৩১, ২/৬২- এগুলো এবারের যুব বিশ্বকাপে রিপনের বোলিং পারফরম্যান্স। ইকোনমিক ধরে রেখে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে পটু রিপন। বিশ্বকাপে ৬ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। তার এমন অনবদ্য পারফরম্যান্স জায়গা করে দিয়েছে টুর্নামেন্ট সেরা একাদশে। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এমন সম্মাননা রিপনের।

আইসিসি থেকে পাওয়া এই অনুপ্রেরণায় জীবনের বাকি পথ চলতে চান রিপন, ‘এটা আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণার। আইসিসির কোনো ইভেন্টের মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়া, এটা বড় পাওয়া। এটা আমাকে সামনে এগোতে সাহায্য করবে।’

ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে খুশি হলেও দলীয় পারফরম্যান্সের কাছে সেটি মলিন লাগছে রিপনের। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের খেতাব নিয়ে খেলতে নেমে ৮ নম্বরে শেষ করেছে বাংলাদেশ। রিপন মনে করছেন, আরটু ভালো হতে পারতো দলীয় অর্জন।

আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘আমরা যদি আরেকটু বেটার ক্রিকেট খেলতে পারতাম তাহলে ভালো লাগতো। ব্যক্তিগত অর্জন ভালো হয়েছে কিন্তু দল হিসেবে আমরা যদি ভালো খেলতে পারতাম, পারফরম্যান্সটা ভালো করতে পারতাম, তাহলে আরো ভালো লাগতো।’

বোলিংয়ের পাশাপাশি টেলেন্ডারের তকমা নিয়ে ব্যাটিংটাও নেহায়েত মন্দ করেন না রিপন। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস। সেটিই ছিল দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত। এরপর আরো ৩ বার ব্যাট হাতে নেমেছেন রিপন। তবে প্রতিবারই তার নামের পাশে ছিল ‘অপরাজিত’ তকমা। তবে ব্যাটিং নিয়ে ভাবনা নেই রিপনের। ডেল স্ট্রেইন, জফরা আর্চারদের মতো নিজেকে পেসার হিসবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

রিপনের ভাষায়, ‘প্রথমত আমি পেসার হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এরপর যখন ব্যাটিং এর সুযোগ আসবে, সেখানে যদি ভালো করতে পারি তারপর সেটা অন্যভাবে ভাবা যাবে।’

টিআইএস/এটি