এ একটা সুবিধা হাসান মাহমুদের! মুখ দেখে বোঝা ভার, তিনি আসলে খুশি নাকি বেজার হয়ে আছেন। এই দুইয়ের কোনটাই যেন খুব বেশি স্পর্শ করে না এই ডানহাতি পেসারকে। অভিব্যক্ত এক এবং অভিন্ন। 

হাসানের বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্য দুই রকমই বার্তা দিচ্ছে। তিনি যেখানে একাই অনুশীলন করছেন, তার ঠিক পাশেই চলছে জমকালো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। তার জাতীয় দলের সতীর্থরা খেলছেন সেখানে। গোটা দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের দৃষ্টি সেদিকেই। এনিয়ে মন খারাপ থাকাটা স্বাভাবিকই হাসানের। মন ভালো করা খবর হচ্ছে, যে অদৃশ্য চোটের সঙ্গে লড়ছিলেন হাসান, তার সুরহা হয়েছে ইংল্যান্ডে। স্ক্যানে ধরা পড়েছে চিড়। চলছে চিকিৎসা। এক বছরের বিরতির পর মাঠে ফেরার স্বপ্ন বুনেছেন তিনি।

স্বস্তির খবর শুনিয়ে সোমবার ঢাকা পোস্টকে হাসান বলছিলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে আমার যে ব্যথাটা শুরু হয় সেটা আসলে ফ্র্যাকচার ছিল। ওটা বাংলাদেশে করা স্ক্যানে ধরা পড়েনি। ইংল্যান্ডে গিয়ে ডাক্তার দেখালাম, সেখানে একটা সিটি স্ক্যান করেছে, ওখানে ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে। এখন রিহ্যাব চলছে। মার্চের ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত চলবে।’

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমে বাজিমাত করেন হাসান। ঢাকা প্লাটুনের জার্সিতে নিজের জাত চিনিয়ে ১৩ ম্যাচে ১০ উইকেট নেন। গতিময় বোলিংয়ের সঙ্গে নিখুঁত লাইন-লেংথ আর সুইংয়ে আলো কাড়েন। এরপর ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে। তবে প্রায় দেড় বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩টি ওয়ানডে ও ১টি টি-টোয়েন্টিতেই থমকে আছে।

গত বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে চোট নিয়ে ফিরে সুযোগ পাননি শ্রীলঙ্কা সফরের স্কোয়াডে। এরপর শ্রীলঙ্কা দল বাংলাদেশে এলো, সেখানেও ছিলেন না হাসান। খেলতে পারেননি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। যেতে পারেননি জিম্বাবুয়ে সফরেও। চোটের কারণে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও দর্শক হয়ে ছিলেন ২১ বছর বয়সী এই পেসার। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এমনকি ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও ছিলেন না হাসান মাহমুদ। খেলতে পারেননি ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে। এবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও নেই হাসান। ফ্যাসিট জয়েন্ট ইনজুরিতে ভুগছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ভোগা এই ইনজুরির সুরহা হচ্ছিল না। বল করতে গেলে ডেলিভারির পর ব্যথা পাচ্ছিলেন। অনেক নাটকীয়তার পর বিসিবির সহযোগিতায় ইংল্যান্ডের গিয়ে সুরহা হয়েছে।

ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এখন রিহ্যাব চলছে হাসানের। আজ (সোমবার) দ্বিতীয়দিনের মতো অনুশীলন করেছেন। ৭০ শতাংশ দিয়ে পূর্ণ রান-আপ নিয়েই আজ মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেন হাসান। প্রায় ৬ ওভার বোলিং করেছেন তিনি। স্পট বোলিংয়ের সঙ্গে ঝালিয়ে নিচ্ছেন সুইং। তবে লড়াইয়ে কাউকেই যেন সঙ্গে পাচ্ছেন না।

একাডেমি মাঠে বসন্তের শুরুর দিনে তপ্ত রোদে নিজে বল করে নিজেই সে বল কুড়িয়ে আবার নিজেই বোলিং মার্ক ঠিক করছেন হাসান। কোনো কোচ তো নেই-ই, পাননি কোনো বল বয়ও, যে ডেলিভারি করবেন, বলটি অন্তত এগিয়ে দিতে পারে।

হাসান বললেন, ‘এখন ব্যথা নাই। ব্যথা ছাড়া বোলিং করছি। এটা আগের ফ্র্যাকচার ছিল। এখন তো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চলছে। এসময় সবাই অনেক ব্যস্ত। আমাকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে (বোর্ড) কী করতে হবে, আমি আমার মতো করছি সেটা। এখন বোলিংয়ে রিদম ফেরাতে অনুশীলন করছি। পাশাপাশি সুইংটা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’

আগামী মার্চের মাঝামাঝি শুরু হবে এবারের ঢাকা লিগ। এরই মধ্যে নিজের দল চূড়ান্ত করে ফেলেছেন হাসান। এখন কেবল মাঠে ফেরার প্রস্তুতি। সে লড়াইয়ে কাউকে পাশে না পেলেও লড়াই থামাননি হাসান। তিনি জানেন, এখনি থেমে যাওয়ার সময় নয়, যেতে হবে অনেক দূর। যে পথে বাধা আসবেই।

টিআইএস