‘এবার আমাদের খুব ভালো সুযোগ আছে। সরাসরি ফেভারিট বলবো না, তবে লড়াই হবে ফিফটি-ফিফটি। আমরা প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালো জানি। এখানকার উইকেট-কন্ডিশন ভালোভাবেই চেনা। সফরকারী হিসেবে এগুলো আমাদের এগিয়ে রাখবে’- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল শেষ হতেই কোনো জড়তা ছাড়াই খোশমেজাজে কথাগুলো বলছিলেন আফগানিস্তান জাতীয় দলের অলরাউন্ডার করিম জানাত।

করিম এবার বিপিএল খেলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। তার দল এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন। করিম অবশ্য তাদের বাংলাদেশ সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে নেই, খেলবেন শুধু টি-টোয়েন্টি। তবে সতীর্থদের প্রতি আস্থা আছে তার। জানা আছে শক্তিমত্তা আর দুর্বলতার জায়গাগুলো। 

২০১৬ সালের পর দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে আফগান দল। এই ৬ বছরে বেশ পরিণত তারা। যদিও এই ফরম্যাট প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশও বেশ শক্ত অবস্থানে আছে, তবে করিম নিজেদের এগিয়ে রেখেছেন একখানে, ভয়ডরহীন আগ্রাসী ক্রিকেটই তাদের মূল অস্ত্র। 

২০১৬ সালে সেই ৩ ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। সব মিলিয়ে একদিনের সংস্করণে দুই দলের ৮ দেখায় জয়ের পাল্লা ভারি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। আফগানদের ৩ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ ম্যাচ। 

এবারের লড়াইটা অবশ্য খানিকটা ভিন্ন। শুধু ওয়ানডে ম্যাচ বা সিরিজ দিয়েই এর মর্যাদাকে বেধে ফেলা যাচ্ছে না। আইসিসির করে দেওয়া নিয়মে এই সিরিজ ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ। এই সুপার লিগের পয়েন্টের মারপ্যাঁচেই ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের যোগ্যতা বিচার করা হবে। সে পথে অবশ্য বেশ এগিয়ে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। 

১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ৮০ পয়েন্ট। এবার এই পয়েন্ট তালিকায় চূড়ায় ওঠার লক্ষ্য বাংলাদেশ দলের। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও ইংল্যান্ডকে (৯৫) টপকে প্রতিযোগিতার শীর্ষে উঠবে টাইগাররা। সঙ্গে প্রথম দল হিসেবে সুপার লিগের ১০০ পয়েন্টের মালিক বনে যাবে বাংলাদেশ দল। 

বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য থাকবে চট্টগ্রামে সিরিজটি ৩-০ ব্যবধানে জিতে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ খেলার দৌড়ে এগিয়ে থাকার। কিন্তু প্রতিপক্ষের নাম যখন আফগানিস্তান, কাজটা তখন সহজ নয় মোটেও। সুপার লিগে দারুণ অবস্থান আফগানদেরও। ছয় ম্যাচের সবগুলোতেই জিতেছে তারা। নামের পাশে আছে ৬০ পয়েন্ট। তারাও চাইবে এই সিরিজে বাংলাদেশকে টপকে যেতে।

আফগানদের সঙ্গে মাঠের লড়াই কতটা জমবে তার জন্য খুব বেশি অপেক্ষার করতে হচ্ছে না। প্রতিপক্ষর নাম যেখানে আফগানিস্তান, তখন অন্তরে ধাক্কা দিচ্ছে আত্মমর্যাদার লড়াই। যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে ৩ ম্যাচের এই ওয়ানডে সিরিজ, সেই চট্টগ্রামে দুই দল এখনো কোনো ওয়ানডেতে মুখোমুখি না হলেও এই মাঠে খেলা একমাত্র টেস্টটা হেরেছিল টাইগাররা। সে নিয়ে তো তোলপাড়ই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

তিন ফরম্যাটে দুই দলের মুখোমুখি দেখায় এগিয়ে আফিগানরাই। তাদের ৮ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জিতেছে ৭টি। তুলনামূলক নবীন এই দলের বিপক্ষে হতশ্রী পরিসংখ্যানের জন্য ‘আত্মমর্যাদায়’ টানটা ঠিক অনুভব করেন ক্রিকেটাররা।

নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে তরুণ এক ক্রিকেটার যেমন বলছিলেন, ‘আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে আমাদের বেশি সতর্ক থাকতে হয়।’ বেশি সতর্ক থাকার কারণও আছে বৈকি। প্রথম সারির দলের বিপক্ষে হারলে যতটা না আলোচনায় হয়, তার থেকে ঢের বেশি হয় আফগানদের বিপক্ষে হারে।

যদিও অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘ভয় পেলে তো খেলার আগেই হেরে যাব। ওভাবে আমরা কেউ ভাবছি না।’

চোখে ৩০ পয়েন্ট, অন্তরে আত্মমর্যাদার লড়াই নিয়ে রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, মুজিব উর রহমানদের বিপক্ষে মাঠের লড়াইটা কিভাবে সামলাবে টাইগারা, এখন সেটাই দেখার।

টিআইএস/এনইউ/এটি