কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফে সব সময় ব্যস্ততা লেগেই থাকে। অন্য সব দিনের তুলনায় আজকের বিকেলটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। অনেকের এক পা নেই, দুই হাতে স্ক্র্যাচ এরপরও বল পায়ে লড়ছেন, গোল উৎসবে মাতছেন। জয়ে উল্লাসে যেমন মেতেছেন তেমনি হারে কেঁদেছেনও অনেকে। 

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ফুটবলারদের একটি সংগঠন আম্পুটি। এরা বিশ্বকাপও আয়োজন করে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সাথে এদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। ফুটবলীয় কর্মকান্ড এজন্য ফিফা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই খেলাগুলোতে সাহায্য-সহযোগিতা করে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এই খেলার আয়োজক হয়েছে ও অংশগ্রহণ করছে। 

৬০ বাই ৪০ গজের মাঠে পূর্ব এশিয়ার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ফুটবলাররা খেলছেন। জন্মগত সমস্যা আর অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা তাদের এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়েছে। ভাষা, গোত্র-বর্ণ ভিন্ন হলেও তারা যেন একই পথের যাত্রী। বাংলাদেশের আম্পুটি দলের ফুটবলার অনীকের গল্পটা খুব করুণ, ‘১২-১৩ বছর আগে ট্রেনে কাটা পড়ে এক পা হারাই। এর পর থেকে জীবনের এই অবস্থা।’ অনীক রেলে পা হারালেও অনেকে পা হারিয়েছেন বেশি সড়ক পথেই। অনীকের মতো গল্প আছে ইন্দোনেশিয়া, জাপানের আম্পুটি ফুটবলারদেরও। 

বাংলাদেশে ২০২০ সাল থেকে এক পা হারানোদের নিয়ে কাজ করছেন বদিউজ্জামান। তিনি আজ অনেকটা তৃপ্ত, ‘এরা যে সমাজের বোঝা নয়, সেটা প্রমাণ করতে পেরে ভালো লাগছে। অনেক ছেলে এই উপলক্ষে ঢাকায় প্রথম। তারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে এর চেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে।’ বদিউজ্জামান নিজেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। 

আম্পুটি বিশ্বকাপে পূর্ব এশিয়া থেকে দু’টি দেশ যাবে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলে হেরেছে। ম্যাচ শেষে সাইড বেঞ্চে হারের বেদনায় অনেকে কান্নাকাটি করেন। এই কান্নার মধ্যেও তাদের সুখ লুকিয়ে আছে। ‘আমাদের জন্য জাতীয় সংগীত বেজেছে, পতাকা আমাদের জার্সিতে। বিদেশি দলের সঙ্গে খেলছি। এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে।’-বলেন আম্পুটি দলের বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। 

আম্পুটিতে একজন গোলরক্ষক থাকেন। সেই গোলরক্ষকের অবশ্য দু’পা থাকলেও এক হাত নেই। খেলা পরিচালনা করা রেফারি অবশ্য সুস্থ-স্বাভাবিক। এই খেলায় কোনো অফ সাইড নেই, যখন-তখন খেলোয়াড় বদল করা যায়। আম্পুটির বিশ্বকাপ বাছাইয়ের খেলা পরিচালনা করতে চার দেশ থেকে চার জন রেফারি-ম্যাচ কমিশনার এসেছেন। 

এজেড/এনইউ