শেষ বাঁশি বাজতেই ম্যানচেস্টার সিটি এমন উল্লাস শুরু করে দিলো, ইতিহাসে যেন এমন কিছু আর কখনোই অর্জন করেনি দলটি। ০-০ এক ড্রয়ের পর শেষ কবে কোচ পেপ গার্দিওলার সিটিকে এমন উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে, তা ইতিহাস খুঁজে বের করার মতো বিষয়ই বটে। সেখানেই শেষ নয়, উচ্ছ্বসিত গার্দিওলাও! সিটির-গার্দিওলার এমন উল্লাসের কারণ, ম্যাচের প্রকৃতি। নিজেদের মাঠ ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় যে রীতিমতো কুরুক্ষেত্রই রচে বসেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ! সেই কুরুক্ষেত্র থেকে কোনো গোল না খেয়ে, বড় কোনো ক্ষতি না নিয়ে বেরিয়ে আসাটা তো উদযাপন করার মতোই বিষয়।

সিটি সেটা করছেও। অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পরও প্রথম লেগের ১-০ গোলের জয় দলটিকে তুলে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে।

প্রথম লেগের ৯০ মিনিটে অ্যাটলেটিকো যেন ভেবেই বসেছিল গোল করার প্রয়োজন নেই, রক্ষণ সামলালেই হলো। সেই ম্যাচে অবশ্য শেষমেশ রোহিব্ল্যাঙ্কোদের জেদি রক্ষণ ভেঙে কেভিন ডি ব্রুইনা করেছিলেন গোল, জিতেছিল সিটি। অ্যাটলেটিকো শট নিতে পারেনি একটাও। নিতে পারেনি বা বলে  নেয়নি বললেই যেন বেশি যুক্তিযুক্ত হয় বিষয়টা। গোল হজমের পরেও যে সেদিন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি অ্যাটলেটিকোর।

সেই ম্যাচের চিত্র আজও প্রথমার্ধে দেখেছে ম্যাচটা। সিটি আক্রমণ শানিয়েছে, আর অ্যাটলেটিকো আক্রমণ সামলেছে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়। তাও অবশ্য বিফল হয়ে যেত, যদি না ২৯ মিনিটে বক্সের জটলা থেকে ইলকায় গুন্দোয়ানের শটটা জড়িয়ে যেত জালে। সেটা হয়নি, প্রতিহত হয়েছে বারপোস্টে। অ্যাটলেটিকো একটা চেষ্টা করেছিল, তবে তা আলোর মুখ দেখেনি আদৌ। তাই গোলশূন্য ভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

তবে বিরতির পরই পরিস্থিতি বদলায়। ১৩৫ মিনিটে যে অ্যাটলেটিকো সিটির গোলমুখে নিয়েছিল ১টি শট, সেই দলটাই পরের ৪৫ মিনিটে নিয়েছে আরও ১৩টি শট। সেসবও অবশ্য সিটির রক্ষণ সামলেছে দেয়াল হয়ে।

দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। ম্যাচের উত্তেজনার পারদ চড়ে বসল ৮৭ মিনিটে। বাম প্রান্ত দিয়ে ফিল ফোডেন উঠে যাচ্ছিলেন আক্রমণ, অ্যাটলেটিকোর ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ফেলিপে ফাউল করে বসেন ফোডেনকে। তিনি পড়ে গড়াগড়ি খাওয়ার সময় স্তেফান স্যাভিচের মনে হচ্ছিল বিষয়টা বুঝি নাটক, টেনে তুলতে চাইলেন। তখনই লেগে গেল হাতাহাতি, বাকবিতণ্ডা, ঝগড়া। জ্যাক গ্রিলিশ এসে যোগ দিতেই তার চুল টেনে বসেন স্যাভিচ। ঝগড়াটা আরও বেড়ে যায় তাতে। শেষমেশ রেফারি, অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান অবলাক আর সিটি অধিনায়ক ফের্নান্দিনিওর হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। লাল কার্ড দেখেন ফেলিপে, হলুদ কার্ডের তো ইয়ত্তাই ছিল না। সব মিলিয়ে দুই দলের কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫-এ।

এরপর যোগ করা সময় দেওয়া হয় ৯ মিনিট, সেটাও বার বার বাধায় গিয়ে ঠেকে ১২ মিনিটে। অ্যাটলেটিকো এই সময় চেষ্টা করেছে বটে। তবে গোলের মুখ আর দেখেনি। সিটি রক্ষণ সব আক্রমণ সামলেছে বেশ। তাতে গোলশূন্য এক ড্র ‘অর্জন’ করে ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানো ছাড়ে গার্দিওলার দল। উঠে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে।

এনইউ