শেষ ছয় বছরে চতুর্থ বারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তবে সবশেষ লিগটা অবশ্য সহজে আসেনি সিটিজেনদের। শেষ দিনে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপরই পাঁচ মিনিটে তিন গোলে ম্যাচের রঙ বদলে শিরোপা উৎসবে মেতেছে সিটি। কোচ পেপ গার্দিওলা মজার ছলে জানালেন, এমন প্রত্যাবর্তনের গল্প তার দল লিখেছে ফোনকলে রিয়াল মাদ্রিদের দারুণ পরামর্শ নিয়েই!

প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ শীর্ষ দুই হাতছাড়া হয়েছিল সেই ২০১৬-১৭ মৌসুমে, গার্দিওলার প্রথম মৌসুমে। এরপর থেকে সিটি লিগই জিতেছে চার বার, আর যেবার জেতেনি, সেবারও হয়েছিল রানার্স আপ। ইউরোপসেরার মঞ্চে যেমনই হোক, প্রিমিয়ার লিগে যে সময়টা দারুণ কাটছে সিটির, তা অস্বীকার করার উপায় নেই একটুও।

প্রিমিয়ার লিগে সিটির শ্রেষ্ঠত্বটা আরেকটু পরিষ্কার হয় লিভারপুলের দিকে তাকালে। শেষ চার মৌসুমে এই নিয়ে তৃতীয়বার অল রেডরা মৌসুম শেষ করল ৯০ এর বেশি পয়েন্ট নিয়ে। এর মধ্যে আবার ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৯৭ পয়েন্ট, আর চলতি মৌসুমে ৯২ পয়েন্ট নিয়েও লিগ জেতা হয়নি লিভারপুলের। দুবারই শিরোপা জিতেছে গার্দিওলার অতিমানবীয় সিটি। দলটির কাতালান কোচের মতে তাই তার দলের সবাই ইতোমধ্যেই কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। 

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গার্দিওলা বললেন, ‘আমরা কিংবদন্তি, মানুষজন আমাদের সবসময়ই স্মরণে রাখবে। এই খেলোয়াড়রা ইতোমধ্যেই ক্লাবের ইতিহাসে অমর হয়ে গেছে।’

এভাবে লিগ জেতার মাহাত্ম্যটা গার্দিওলা মনে করিয়ে দিলেন আরও একবার। বললেন, ‘আমরা যা করেছি, তা খুবই কঠিন। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে বহু বছর আগে করেছিলেন, দুই তিন বারের মতো। সেটা মনে পড়লেই এই শিরোপার বিশালতাটা আন্দাজ করা যায়।’

গার্দিওলার এই শিরোপাজয়কে আরও রঙ দিয়েছে লিভারপুল। শেষ কয়েক বছরে যে দলটার সঙ্গে সিটির সম্পর্কটা রীতিমতো ব্যাটম্যান আর জোকারের মতো! ডার্ক নাইট সিনেমায় জোকার যেমন ব্যাটম্যানকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে ছাড়া আমি কী করতাম? তুমিই তো আমাকে পরিপূর্ণ করো!’ ঠিক তেমনই এক শংসা গার্দিওলার কণ্ঠেও ঝরে পড়ল লিগ জেতার পরমুহূর্তে। বললেন, ‘আমি আমার জীবনে কখনো লিভারপুলের মতো একটা দল দেখিনি। আমাদের জয়ের মাহাত্ম্যটা আমাদের প্রতিপক্ষের শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে। লিভারপুলকে অভিনন্দন, তারা আমাদের আরও ভালো বানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে আমাদের ভালো করার তাড়না দিয়েছে।’

এরপরই গার্দিওলার মাথায় যেন চাপল শয়তানি। কীভাবে সম্ভব হলো এই প্রত্যাবর্তন, তার উত্তরে জানালেন রিয়াল মাদ্রিদের কথা। বললেন, ‘আমি রিয়াল মাদ্রিদে ফোন করেছিলাম। তারা আমাকে দারুণ পরামর্শ দিয়েছে।’ 

গার্দিওলার এই উক্তির কারণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের অবিশ্বাস্য সব পারফর্ম্যান্স। নকআউটের প্রতিটি পর্বেই রিয়ালকে চোখরাঙানি দিয়েছে বিদায়ের শঙ্কা। পিএসজি, চেলসি ও সবশেষ গার্দিওলার দল ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষেই অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিগে রিয়াল পাড়ি দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। 

তবে সেমিফাইনালের সেই ম্যাচের মতোই যে প্রত্যাবর্তনটা ঘটেছে গত রাতের ম্যাচে সেটা জানিয়ে গার্দিওলা বললেন, ‘মাদ্রিদের সেই ম্যাচের কোনো ব্যাখ্যা নেই, আজকেরটারও নেই; স্রেফ মোমেন্টামের কারণে হয়েছে।’

তবে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে এমন এক জয় সিটিকে পরের মৌসুমে ভালো করার রসদও যোগাবে, বিশ্বাস গার্দিওলার। বললেন, ‘কখনো কখনো এমন সব মুহূর্তের সাক্ষী হওয়াটা বেশ ভালো ব্যাপার। আমার মনে হচ্ছে, পরের মৌসুমে আরও শক্তিশালী হওয়ার রসদও যোগাবে এই ম্যাচ।’

এনইউ/এটি