ঘরোয়া ফুটবলে এখন আর আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথ নেই। কালের বিবর্তনে আবাহনীর প্রতিদ্বন্দ্বী এখন নতুন দল বসুন্ধরা কিংস। নতুন দল হলেও বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার, উঁচু মানের বিদেশি এনে কিংস ঘরোয়া ফুটবলে আকর্ষণ ফিরিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবাহনীও কম যায় না। কিংসের বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারকে এবার নিজেদের ডেরায় এনেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবটি। 

গত কয়েক বছরে দেশের ফুটবলে মুল মনোযোগটা দুই দলের উপর। গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রেও শিরোপার রেসে থাকা এই শীর্ষ দুই ক্লাব। এই দুই ক্লাব যখন দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যায় তখন ফুটবলপ্রেমীদের আকর্ষণ বাড়ে বহুগুণে। পাঠক, দর্শকদের চাহিদা মেটানোর ভার মিডিয়ার। দেশের গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে সেই চাহিদা পরিপূর্ণরূপে মেটাতে পারে না। এর পেছনে দায় রয়েছে এই দুই ক্লাবেরই। অনেক সূচকে দেশের দুই শীর্ষ ক্লাবের পেশাদারিত্ব পরিপূর্ণ হলেও মিডিয়া ইস্যুতে এখনো পরিপূর্ণ নয়। আবাহনী কিংবা কিংস যখন এএফসি কাপে খেলে দেশে থাকা সাংবাদিকদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় তথ্য-উপাত্ত, ছবির জন্য। 

পরিপূর্ণ পেশাদার ফুটবল ক্লাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিডিয়া ম্যানেজার। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশিবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে ঢাকা আবাহনী। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবটির সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডিয়া ম্যানেজার বা অফিসার নেই। বিদেশে দল নিয়ে নানাবিধ ব্যস্ততার মধ্যে থাকা টিম ম্যানেজারকেই সাংবাদিকদের ম্যাচের আগে-পরের নানা তথ্য জানাতে হয়।

আরেক ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডিয়া ম্যানেজার রয়েছে। এরপরও ক্লাবটি মিডিয়া খাতে পুরোপুরি পেশাদারিত্ব আনতে পারেনি। সদ্য সমাপ্ত এএফসি কাপে প্রতিটি ম্যাচের আগে ও পরে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। দেশের একমাত্র ক্রীড়া ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এই টুর্নামেন্টের স্বত্ব কেনায় কিংসের অনুশীলন ও প্রি-পোস্ট ম্যাচ কনফারেন্সের ফুটেজ দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সরবরাহ করেছে। কিংসের মিডিয়া উইং থেকে এই টুর্নামেন্টের কোনো দিনই কিংসের কোচ, অধিনায়ক ও প্রতিপক্ষ কোচের মন্তব্য সরবারহ করা হয়নি প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে। ফলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বাইরে থাকা অন্য দুই ধারার গণমাধ্যম প্রিন্ট ও অনলাইন তথ্য প্রাপ্তিতে উপেক্ষিত হয়েছে।

তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এখন অনেক যোগাযোগই হোয়াটসঅ্যাপ ভিত্তিক। পুরোনো ক্লাব আবাহনীর আগেই কিংস মিডিয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করেছে। সেই গ্রুপ থেকে এবার এএফসি কাপে শুধুমাত্র ম্যাচের আগে খেলোয়াড় তালিকা সরবারহ করেছে আর মোহনবাগানের ম্যাচের দিন ঝড়ের সময় বিশেষ আপডেট ছিল। কলকাতায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দলটি দশ দিন থাকলেও এই গ্রুপে এর বেশি কিছু পাওয়া যায়নি। গত বছর কিংস মিডিয়ার জন্য গ্রুপ খোলার মাস দুয়েক পরে আবাহনীও খুলেছে। আবাহনী গত মাসে কলকাতায় এএফসি কাপের প্লে অফ খেলার সময়ও সেই গ্রুপ ছিল নিষ্প্রাণ। 

দুই ক্লাবেরই ফেসবুক পেজ এখন বেশ সক্রিয়। খেলার ফলাফল সংক্রান্তই আপডেট বেশি থাকে। নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হওয়া এলিটা কিংসলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ঐতিহাসিক বিষয়। কিংস সেই ইতিহাসের অংশীদার। ফুটবলপ্রেমীদের কিংসলেকে নিয়ে আগ্রহ অনেক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিংসলের বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকের পর তার অনুভূতি পেজের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ ছিল। কিংসের ফেসবুক পেজে এ রকম কিছু ছিল না।

কিংস-মোহনবাগান ম্যাচ যেমন উত্তাপ ছড়িয়েছিল এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা ছিল প্লে অফে ঢাকা আবাহনী ও মোহনবাগানের ম্যাচে। সেই ম্যাচ দুই বাংলার বিশেষ লড়াইয়ে রুপ নিয়েছিল। আবাহনীর পক্ষ থেকে মিডিয়ায় ম্যাচের আগে-পরে সেভাবে তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। মিডিয়ার চাহিদা পূরণ না করতে পারলেও  ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সমর্থকদের ম্যাচ নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছিল।

দুই ক্লাবের মধ্যে মাঠে দ্বৈরথ থাকলেও সামাজিক মাধ্যমে বেশ বন্ধুত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক। বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে আবাহনী স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিংসের পেজে আবাহনীকে শিরোপা জয়ের অভিনন্দন জানানো হয়েছিল। কিংসের সেই অভিনন্দন বার্তার প্রেক্ষিতে আবার আবাহনী নিজেদের পেজে ধন্যবাদ দিয়েছিল। ফুটবলের নতুন এই সংস্কৃতির পথিকৃৎ হচ্ছে এই দুই ক্লাব! 

এজেড/এটি