‘কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই’ শেষ বাঁশি বাজতেই দিগ্বিদিক ছুটতে থাকা জোসে মরিনিওকে দেখে মনে হচ্ছিল, তার মনের অবস্থা এখন তা-ই। শিষ্যদের কাছে পেয়ে যখন ধাতস্থ হলেন, তখন ডান হাতের পাঁচ আঙুল দেখাচ্ছিলেন। যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, আমার ইউরোপীয় শিরোপা এই পাঁচ-পাঁচটা’। কিংবা এটাও, ‘পাঁচ ফাইনালে খেলে কখনো হারিনি আমি!’ 

কোচিং ক্যারিয়ারে যে ক’বার ইউরোপীয় আসরের ফাইনালে উঠেছেন, জয় ছাড়া মাঠ ছাড়েননি জোসে মরিনিও। দু’বার করে জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ইউরোপা লিগের শিরোপা। সে তুলনায় ইউরোপের তৃতীয় পর্যায়ের শিরোপা উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ তো নস্যি।

তবে সেটা প্রমাণ করতে হলে আজ প্রতিযোগিতার ফাইনালে জিতে দেখাতে হতো তার দল রোমাকে। ডাচ ক্লাব ফেয়েনুর্দকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে সেটা করে দেখিয়েছে মরিনিওর দল। তাতেই উঠে গেছে ইতিহাসের পাতায়, প্রতিযোগিতাটির প্রথম শিরোপাজয়ী দল হিসেবে যে লেখা থাকবে তাদেরই নাম! ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন জোসে মরিনিও নিজেও। ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে জিতে নিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ আর কনফারেন্স লিগের শিরোপা।

আলবেনিয়ার তিরানায় মাঠে গড়ানো এই ফাইনালে মরিনিওর দল খেলেছে ধ্রুপদী মরিনিও ঘরানার ফুটবলই। পুরো ম্যাচে পাস মোটে ২৮৯টা, প্রতিপক্ষ গোলমুখে শট মাত্র তিনটি, সবকটিই আবার এসেছে প্রথম ৪৫ মিনিটেই। তবে তার একটিই জড়িয়ে গেছে জালে। ম্যাচের ৩২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো জিয়ানলুকা মানচিনির লং বল দখলে নিয়ে দুই ডিফেন্ডারের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে বলটা জালে জড়িয়ে দেন নিকো জানিয়োলো।

তাতে একটা ইতিহাসও গড়ে বসেন তিনি। ২২ বছর ৩২৭ দিন বয়সে এই গোল করে তিনি বনে যান ইউরোপীয় কোনো ফাইনালে গোল করা দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ইতালিয়ান ফুটবলার। ১৯৯৭ সালে আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো যখন গোল করেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে, তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর ২২০ দিন।

তবে এমন ইতিহাস ফিকে হয়ে যেত, যদি না রোমা জিততো শিরোপাটা। তা জানতেন বলেই পুরো দল যখন গোলের উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন মরিনিও ছিলেন দারুণ শান্ত; কাজটা যে তখনো শেষ হয়ে যায়নি!

বাকি কাজটা পরের অর্ধে সেরেছে রোমার রক্ষণ। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে পর্তুগীজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিশিও আর ডিফেন্ডার ক্রিস্টোফার স্মলিং। গোল হজম করে পিছিয়ে পড়া ফেয়েনুর্দ যখন একের পর এক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে, তার একেকটা বারবার এসে ঠেকেছে এই দুজনের কাছে। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটাই দেখেছে এমন দৃশ্য।

তাতেই এই এক গোলের লিড ধরে রেখে কনফারেন্স লিগের ফাইনালটা জিতে নেয় রোমা। স্মলিং জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। প্রথম কনফারেন্স লিগের শিরোপা জিতে রোমা উঠে যায় ইতিহাসের পাতায়। আর মরিনিওর পায়ে এসে লুটিয়ে পড়ে প্রথম কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ আর কনফারেন্স লিগ শিরোপা জেতার অনন্য কীর্তি।

এনইউ