করিম বেনজেমা আর মোহামেদ সালাহ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুই ফাইনালিস্ট রিয়াল মাদ্রিদ এবং লিভারপুলের আক্রমণভাগের পুরোধা তারা দুজন। অবিশ্বাস্য মৌসুম কাটাচ্ছে তাদের দল, অতিমানবীয় সব পারফরম্যান্সে আলো ছড়াচ্ছেন এই দুই মহারথী। তাদের নৈপুণ্যে দল যেমন উপকৃত হয়েছে তেমনি নিজেরাও রেকর্ড আর পুরস্কারের বরপুত্র বনে গেছেন। দলীয় সাফল্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত অনেক পুরস্কারও ধরা দিচ্ছে তাদের কাছে। ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অরের দৌড়েও তারা এগিয়ে আছেন অন্য সবার চেয়ে। রোববার (২৯ মে) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হতে পারে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষাও। 

স্তাদ দি ফ্রান্সে ওই মহারণ শেষে যার হাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি শোভা পাবে, তার হাতেই ব্যালন ডি’অর ওঠার সম্ভাবনাও তরতর করে বেড়ে যাবে।

রদ্রিগো গোয়েজের কৃতিত্ব কেড়ে না নিয়েই বলা যায়, রিয়াল মাদ্রিদকে প্রায় ‘একাই’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন করিম বেনজেমা। পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে তার সেই হ্যাটট্রিক না হলে হয়ত সেখানেই সাঙ্গ হত রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিশন। কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির মাঠে গিয়ে ফের হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি, ফিরতি লেগে বার্নাবিউতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এক গোলে রিয়ালকে সেমিতে তোলার মূল কারিগরের ভূমিকায় যথারীতি তার নামটাই সর্বাগ্রে আসে।

ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সেমিফাইনালে প্রথম লেগে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার পানেনকা শটে পেনাল্টি নেওয়ার কথা ফুটবলপ্রেমীদের আজীবন মনে থাকবে। পেপ গার্দিওলার দলের বিপক্ষেই ফিরতি লেগে অতিরিক্ত সময়ে বাঁচা-মরার মুহূর্তে দলের জয়সূচক পেনাল্টি থেকে ফের বল জালে জড়িয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছেন।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফাইনালের আগ পর্যন্ত ১৫ গোল করেছেন বেনজেমা, করিয়েছেন ২টি। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করলেই এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সর্বোচ্চ গোলের (১৭) রেকর্ডও ধরা দেবে তার কাছে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই কীর্তি গড়েছিলেন রিয়ালের সাবেক পর্তুগিজ মহাতারকা। আর ফাইনালে অন্তত এক গোল করলেই এককভাবে রিয়াল মাদ্রিদ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন বেনজেমা। এখন ৩২৩ গোল নিয়ে সাবেক রিয়াল ফরোয়ার্ড রাউল গঞ্জালেজের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি।

একইভাবে রিয়ালের লা লিগা জয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্প্যানিশ লিগে সর্বোচ্চ ২৭ গোল করে জিতেছেন সম্মানজনক ‘পিচিচি ট্রফি’। লা লিগায় মৌসুম শেষে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় ১২ টি গোল বানিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি, তার চেয়ে একটি অ্যাসিস্ট বেশি সামনে ছিলেন শুধু বার্সেলোনার উসমান দেম্বেলে। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ গোল করার সঙ্গে ১৫টি গোল বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

এবারের ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে তাই সবার আগে তার নামটাই শোনা যাচ্ছে। রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলে হয়ত বিশ্ব ফুটবলের ওই সম্মানজনক পুরস্কার প্রথমবারের মতো জেতার শুধু আনুষ্ঠানিকতাটাই বাকি থাকবে। 

বেনজেমা রিয়ালকে লা লিগা জেতাতে পারলেও সালাহ দলকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এনে দিতে পারেননি। এক পয়েন্টের জন্য লিভারপুল মিস করেছে শিরোপা, তবে লিগ ও এফএ কাপ জিতে ঘরোয়া কাপ ডাবল ঠিকই পূর্ণ হয়েছে তাদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের শিরোপা জিতলে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম কোনো ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসবে তারা।

দলকে ট্রেবল জেতাতে পারলে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে জোরেশোরেই উচ্চারিত হবে অবিশ্বাস্য এক মৌসুম কাটানো সালাহর নাম। প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের শিরোপা মিস হয়েছে অল্পের জন্য, তবে সালাহ মিস করেননি কিছুই। ২৩ গোল করে টটেনহ্যামের হিউন-মিন সনের সঙ্গে যৌথভাবে জিতেছেন গোল্ডেন বুট, লিগ সর্বোচ্চ ১৪ অ্যাসিস্ট করে ‘প্লেমেকার অব দ্য সিজনে’র পুরস্কারটিও নিজের করে নিয়েছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডের ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলসংখ্যার দিক দিয়ে বেনজেমার চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছেন সালাহ, ১২ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত ৮ গোল করেছেন তিনি, তবে গোল বানিয়ে দেওয়ার দিক দিয়ে আবার দুজন সমানে সমান (২)। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৫০ ম্যাচ খেলে ৩১ গোল করেছেন সালাহ আর করিয়েছেন ১৬ গোল।

এইচএমএ/এটি